দুই দফা সময় বাড়িয়েও বাংলাদেশের হজযাত্রী নিবন্ধনের কোটা পূরণ হয়নি। বৃহস্পতিবার ১৮ জানুয়ারি ৫৮ শতাংশ কোটা খালি রেখেই শেষ হয়েছে হজ নিবন্ধন।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিশ্বের অধিকাংশ দেশ তাদের হজযাত্রীর সংখ্যা জানিয়ে দিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ এখনো জানাতে পারেনি। হজযাত্রীর সংখ্যা চূড়ান্ত না হওয়ায় বাংলাদেশের নামে মিনায় তাঁবু বরাদ্দ হয়নি। সংখ্যা জানাতে আরো দেরি করলে মিনায় অনেক দূরে তাঁবু নিতে হবে, যা হজযাত্রীদের ভোগান্তির কারণ হবে। তাই নিবন্ধনের সময় আর বাড়ানো সম্ভব নয়। একই সাথে কোটার বড় অংশ খালি থাকায় পরবর্তী বছরগুলোতে কোটা পাওয়ার ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলেও জানিয়েছেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
গত বছরের মতো এবারও বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ করতে পারবেন। এরমধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১০ হাজার ১৯৮ ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এজেন্সির মাধ্যমে ১ লাখ ১৭ হাজার জন হজ পালন করতে পারবেন। চলতি বছর হজ পালনে সৌদি সরকারের সাথে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি হয় গত ৮ জানুয়ারি। গত বছরের ১৫ নভেম্বর থেকে হজযাত্রী নিবন্ধন শুরু হয়। প্রথমে নিবন্ধনের সময় ছিল ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত। পরে নিবন্ধনের সময় ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। হজযাত্রীদের সাড়া না পাওয়ায় সর্বশেষ নিবন্ধনের সময় বাড়িয়ে ১৮ জানুয়ারি করা হয়।
সর্বশেষ বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় হজ পোর্টালের তথ্য অনুযায়ী, মোট ৫৩ হাজার ১১৫ জন হজযাত্রী নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন। এরমধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৩ হাজার ৮০২ ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৪৯ হাজার ৩১৩ জন।
সেই অনুযায়ী কোটার ৪২ শতাংশ হজযাত্রী নিবন্ধন করেছেন। এখনো ৭৪ হাজার ৮৩ জন নিবন্ধন করেননি। অর্থাৎ কোটার ৫৮ শতাংশ খালি রয়েছে।
এ বিষয়ে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব বলেন, হজের নিবন্ধন আজই শেষ। সিদ্ধান্ত হয়েছে নিবন্ধনের সময় আর দেবো না। আমরা কোটা সারেন্ডার করবো।
তিনি বলেন, সৌদি আরবে আমরা ডিফল্টার। তারা সব দেশকে বলেছে, তোমরা হজযাত্রীর সংখ্যা জানাও। আমরা হজযাত্রীর সংখ্যা জানাতেই পারছি না। নিবন্ধনের সময় বাড়ালে আমি মিনায় আর জায়গাই পাবো না। পরে সবাই গালাগালি করবে, সরকার আমাদের দূরে রেখেছে, কষ্ট দিয়েছে।
‘ভারত, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া মিনায় জায়গা বুক করে ফেলেছে। আমরাই একমাত্র দেশ যারা এখনো হজযাত্রীদের সংখ্যা জানাতে পারিনি।’
ধর্ম সচিব বলেন, ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় দিয়েছি। আমরা আগামী সপ্তাহে সৌদি আরবকে হজযাত্রীর সংখ্যা জানিয়ে দেবো।
কোটার চেয়ে এত কম হজযাত্রী পাঠালে পরবর্তীসময়ে কোটা পেতে সমস্যা হবে কি না, জানতে চাইলে সচিব বলেন, আগামী বছর একটু প্রভাব পড়বে। আমরা তাদের সাথে আলোচনা করবো। সরকার তো টাকা দিয়ে হজযাত্রী পাঠাতে পারবে না। এটি ধর্মীয় বিষয়।
আমরা নভেম্বর থেকে নিবন্ধন শুরু করেছি। সময় দুবার বাড়িয়েছি। রেডিও, টেলিভিশন, পত্রিকায় আমরা নিবন্ধন করার জন্য বলেছি। আমরা হজের খরচও গত বছরের চেয়ে এবার কমিয়ে দিয়েছি’ বলেন হামিদ জমাদ্দার।
তিনি আরো বলেন, এবার হজের সহায়ক টিমও আমরা বাংলাদেশ থেকে পাঠাবো না। এদের দিয়ে আসলে হাজিদের সেবাও হয় না। মক্কা মদিনায় যে ছাত্ররা আছে তারা কিছু কাজ করবে।
এবার হজের খরচ কিছুটা কমলেও দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে সেটা হজে গমনেচ্ছুদের এখনো সাধ্যের বাইরে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এবার সরকারি ও বেসরকারিভাবে হজে যেতে সর্বনিম্ন খরচ কোরবানিসহ প্রায় ৬ লাখ টাকা। যদিও চলতি বছরের তুলনায় এটা অনেকটা কম।
সরকারিভাবে আগামী হজে যেতে সাধারণ প্যাকেজে ৫ লাখ ৭৮ হাজার ৮৪০ টাকা খরচ ধরা হয়েছে। বিশেষ হজ প্যাকেজের মধ্যমে হজ পালনে খরচ হবে ৯ লাখ ৩৬ হাজার ৩২০ টাকা। সাধারণ প্যাকেজে চলতি বছরের চেয়ে সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রায় প্রত্যেক হজযাত্রীর ৯২ হাজার ৪৫০ টাকা কম খরচ হবে।
অন্যদিকে বেসরকারিভাবে এজেন্সিগুলোর মাধ্যমে সাধারণ প্যাকেজে হজ পালনে সর্বনিম্ন খরচ হবে ৫ লাখ ৮৯ হাজার ৮০০ টাকা। বিশেষ প্যাকেজের মাধ্যমে হজ পালনে খরচ হবে ৬ লাখ ৯৯ হাজার ৩০০ টাকা। চলতি বছরের তুলনায় খরচ কমেছে ৮২ হাজার ৮১৮ টাকা। সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনার সব হজযাত্রীকে কোরবানির খরচ আলাদা করে নিতে হবে।
এম.কে
১৯ জানুয়ারি ২০২৪