চার বছরের বিশ্ববিদ্যালয় জীবন, একটি ডিগ্রি ও শিল্প-অভিজ্ঞতা—সবকিছুর পরও চাকরি পাওয়া যেন পাহাড় ডিঙানোর মতো কঠিন ছিল ক্যাটলিন মরগানের জন্য। ২৩ বছর বয়সী এই তরুণী ১৮ মাসে ৬৪৭টি চাকরির জন্য আবেদন করেছেন। অবশেষে, একটির সফলতা এসেছে। তিনি এখন লন্ডনে একটি প্রতিষ্ঠানে ট্রেইনি অ্যাকাউন্টেন্ট হিসেবে যোগ দিতে যাচ্ছেন।
ক্যাটলিনের গল্প এখন আর ব্যক্তিগত নয়। এটি একটি বড় প্রবণতার প্রতিফলন, যেখানে যুক্তরাজ্যের হাজারো স্নাতক উচ্চশিক্ষা শেষ করেও হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন। Institute of Student Employers–এর সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, ২০২৪ সালে প্রতি গ্র্যাজুয়েট পদের বিপরীতে গড়ে ১৪০টি আবেদন জমা পড়েছে, যা গত বছরের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেশি।
বিশেষ করে যুক্তরাজ্যে ফিন্যান্স খাতে প্রতিযোগিতা ছিল আরও তীব্র। ওই খাতে প্রতি পদের বিপরীতে গড়ে ১৮৮টি আবেদন জমা পড়ে। ক্যাটলিন এই খাতেই আবেদন করেছিলেন এবং তার আবেদন প্রক্রিয়ার রেকর্ড রাখা একটি স্প্রেডশিট শুরু হয়েছিল ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে।
প্রথম ১৫০টি আবেদনেই তিনি প্রত্যাখ্যাত হন কোনোরকম প্রতিক্রিয়া ছাড়া। আর ২৭১টি আবেদন থেকে কোনো জবাবই পাননি। এরপরও তিনি দমে যাননি। পরিবর্তন এনেছেন নিজের সিভিতে—এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে যেসব প্রতিষ্ঠান সিভি স্ক্রিন করে, তাদের জন্য উপযোগী করে সাজিয়েছেন। এর ফল মিলেছে; কিছু কিছু ক্ষেত্রে অ্যাসেসমেন্টে ডাক পেতে শুরু করেন।
৬৪৭টি আবেদনের মধ্যে ২২১টিতে তিনি অ্যাসেসমেন্ট পর্যায়ে পৌঁছেছেন এবং মাত্র ৫টি ক্ষেত্রে ফাইনাল ইন্টারভিউ পর্যন্ত যেতে পেরেছেন। এই দীর্ঘ যাত্রা শেষে মিলেছে কাঙ্ক্ষিত চাকরি।
ক্যাটলিন মনে করেন, তার মতো আরও অনেকেই একই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। প্রযুক্তিনির্ভর নিয়োগ প্রক্রিয়া, এআই-ভিত্তিক ফিল্টারিং এবং প্রতিক্রিয়ার অভাব নতুন স্নাতকদের হতাশ করে তুলছে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যদিও এখনো ডিগ্রির ইতিবাচক দিক তুলে ধরছে। Universities Wales জানিয়েছে, ডিগ্রি এখনো জীবনব্যাপী আয়, ক্যারিয়ার উন্নতি এবং ব্যক্তিগত বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে বর্তমান প্রতিযোগিতাপূর্ণ চাকরির বাজার স্নাতকদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই গ্রীষ্মে আরও হাজারো শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করে কর্মজীবনে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। তাদের অনেকের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। কেউ কেউ হয়তো নতুন কিছু চেষ্টা করবে, কেউ হয়তো সময় নিচ্ছে নিজেদের অবস্থান নির্ধারণে।
চাকরির বাজারে গ্র্যাজুয়েটদের জায়গা করে নেওয়ার লড়াইয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অভিজ্ঞতার ঘাটতি থাকলেও সঠিক মনোভাব ও মানসিকতাই হতে পারে সবচেয়ে বড় শক্তি।
Robert Half Recruitment–এর James Fortnam বলেন,
“সঠিকভাবে প্রস্তুতকৃত সিভি, চাকরির সঙ্গে মানানসই আবেদন এবং ইতিবাচক মনোভাব—এই তিনটি জিনিস চাকরির প্রথম ধাপে সহায়তা করতে পারে।”
সূত্রঃ বিবিসি
এম.কে
২৫ জুন ২০২৫