যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের মধ্যে স্বাক্ষরিত নতুন অভিবাসন চুক্তির আওতায় অবৈধভাবে ছোট নৌকায় দেশটিতে প্রবেশ করা প্রথম দলকে ফ্রান্সে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এই ফেরত পাঠানো কার্যক্রমকে প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সরকারের একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা অবৈধ প্রবেশ রোধে বাস্তবিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
গত সপ্তাহে দুটি চার্টার্ড ফ্লাইটের মাধ্যমে মোট ১৯ জন অভিবাসীকে যুক্তরাজ্য থেকে ফ্রান্সে পাঠানো হয়। এর আগে গত মাসে আরও ৭ জনকে একই প্রক্রিয়ায় ফেরত পাঠানো হয়েছিল। সর্বশেষ ফ্লাইটটি শুক্রবার সকালে ফ্রান্সে পৌঁছায় এবং পরে পূর্ব ইউরোপের দিকে যাত্রা অব্যাহত রাখে, যা সরকারের নিয়মিত প্রত্যাবাসন সূচির অংশ।
চুক্তির আওতায় যুক্তরাজ্য এখন ছোট নৌকায় প্রবেশকারীদের দ্রুত আটক ও ফেরত পাঠানোর ক্ষমতা পেয়েছে, ফলে তারা আর যুক্তরাজ্যের আশ্রয় ব্যবস্থায় আবেদন করতে পারবে না। হোম অফিসের মতে, এটি মানব পাচার রোধ এবং অবৈধ অভিবাসন নেটওয়ার্কগুলোকে ভেঙে দেওয়ার একটি কার্যকর ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করবে।
ফ্রান্সে ফেরত পাঠানোর পাশাপাশি উভয় দেশ একটি বৈধ ও সীমিত রুটও চালু করেছে, যার মাধ্যমে নির্ধারিত সংখ্যক যোগ্য অভিবাসী কঠোর নিরাপত্তা যাচাই শেষে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করতে পারবেন। এই রুটে এই সপ্তাহেই ৯ জন অভিবাসী যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করেছেন।
হোম সেক্রেটারি শাবানা মাহমুদ বলেন, “আমাদের অবশ্যই এই বিপজ্জনক নৌযাত্রাগুলো বন্ধ করতে হবে, যা মানুষের জীবন ঝুঁকিতে ফেলে এবং অপরাধী চক্রের পকেটে অর্থ ঢালে। আগের সরকারের রুয়ান্ডা স্কিমে কোটি কোটি পাউন্ড খরচ হলেও একজনকেও ফেরত পাঠানো যায়নি। অথচ আমরা মাত্র কয়েক সপ্তাহে ফ্রান্সের সঙ্গে ঐতিহাসিক চুক্তির মাধ্যমে ২৬ জনকে ফেরত পাঠাতে সক্ষম হয়েছি।”
তিনি আরও বলেন, “এখন থেকে বার্তাটা পরিষ্কার — যারা অবৈধভাবে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করবে, তারা আটক ও ফেরতের মুখোমুখি হবে। এই যাত্রা শুরু করার আগে সবাইকে দুইবার ভাবতে হবে।”
সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছর ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি মানব পাচার চক্রের বিরুদ্ধে ৩৫০টিরও বেশি অভিযান পরিচালনা করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৪০ শতাংশ বেশি। ইতিমধ্যে ৩৫,০০০-এরও বেশি অবৈধভাবে অবস্থানকারীকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে এবং আশ্রয়-সম্পর্কিত ফেরত পাঠানোর হার বেড়েছে ২৮ শতাংশ।
হোম অফিস জানায়, বর্তমানে তারা প্রতি প্রান্তিকে ৩১,০০০-এরও বেশি আশ্রয় আবেদন নিষ্পত্তি করছে, যা আগের সরকারের তুলনায় তিন গুণ বেশি। এর মাধ্যমে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ ও মানবিক দায়িত্ব একসঙ্গে পালনের চেষ্টা করা হচ্ছে।
যুক্তরাজ্য সরকার বলছে, এই সমন্বিত পদক্ষেপ — আইন প্রয়োগ, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং বৈধ রুট — “পরিবর্তনের পরিকল্পনা” (Plan for Change)-এর অংশ, যার লক্ষ্য সীমান্ত সুরক্ষা জোরদার করা, মানব পাচার বন্ধ করা এবং মানবিক দায়িত্ব পালনের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা।
সূত্রঃ ইউকে ডট গভ
এম.কে
১০ আগস্ট ২০২৫