ইংলিশ চ্যানেল পেরিয়ে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের যুক্তরাজ্যে প্রবেশের ঢল নেমেছে। ব্রিটিশ সরকার বহু চেষ্টা করেও এই প্রবেশ ঠেকাতে পারছে না। একের পর এক কঠোর অভিবাসন নীতি আনছেন সেদেশের নেতারা। এই কঠোর হতে থাকা নীতির মাঝে চরম প্রতিকূল পরিবেশে অনিশ্চিত দিন কাটাচ্ছেন এই অভিবাসনপ্রত্যাশীরা।
ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ গত বছর থেকেই অভিবাসন বিষয়ে তাদের অবস্থান আরো কড়া করেছে। তবুও অন্তত দশ হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী এই পথে এসে পৌঁছেছেন। ক্যালে বন্দরে সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় অর্থায়ন করছে যুক্তরাজ্য। সামাজিক মাধ্যমে অবৈধ অভিবাসন বিরোধী প্রচারণাও চালিয়েছে হোম অফিস।
এই পরিস্থিতিকে আরো জটিল করছে বেশ কিছু অভিবাসনবিরোধী সংবাদমাধ্যম, যেখানে ফলাও করে ছাপা হচ্ছে আগত অভিবাসনপ্রত্যাশীদের কোয়ারান্টাইন থেকে পালানোর খবর। মেইল অনলাইন সংবাদমাধ্যম অজ্ঞাতনামা সূত্রের বরাত দিয়ে জানায় যে ’যুক্তরাজ্য মন্ত্রীরা জরুরিভিত্তিতে বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে এইসব পালিয়ে যাওয়া অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ওপর নজর রাখা নিয়ে আলোচনা করেছেন।’
কিন্তু আইটিভির মতো কিছু সংবাদমাধ্যম এটাও বলছে যে বিলাসিতা নয়, বরং কষ্টেই দিন কাটছে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের। অনেক সময় খাবারের জন্য নিকটস্থ লঙ্গরখানায় দেখা যাচ্ছে এই অভিবাসনপ্রত্যাশীদের।
মেইল অনলাইনের পরিবেশিত তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে যুক্তরাজ্যের হোম অফিসকে যোগাযোগ করে ইনফো মাইগ্রেন্টস। হোম অফিসের তরফে কোনো স্পষ্টীকরণ পাওয়া যায়নি যে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মধ্যে কেউ কেউ পলাতক কি না, বা আদৌ বিলাসবহুল জীবনযাপনের বিষয়টি সত্য কি না। তবে তারা জানায় যে, ”একটি নির্দিষ্ট দল বর্তমানে পলাতক অভিবাসনপ্রত্যাশীদের খুঁজে বার করে হোম অফিসের কাছে আনার চেষ্টা করছে”।
তারা এটা জানায় যে পর্যাপ্ত থাকার জায়গার অভাবে হোটেলসহ বিভিন্ন স্থানে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের থাকতে দিতে বাধ্য হচ্ছে তারা।
ইংলিশ চ্যানেলের ওপারে
ইনফো মাইগ্রেন্টসের সঙ্গে কথা হয় মোহামেদের। এক মাস ধরে ফ্রান্সের ক্যালে বন্দরে অপেক্ষায় থাকা ১৮ বছর বয়সী এই সুদানের নাগরিকের স্বপ্ন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন পড়ার। যে হাজার হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশীর কথা সংবাদমাধ্যম ও বিভিন্ন এনজিও বলে, মোহামেদ তাদেরই একজন। অন্যদের মতো সেও রাত কাটায় অস্থায়ী শিবিরে, স্বপ্ন দেখে ইংলিশ চ্যানেল পেরিয়ে যুক্তরাজ্যে প্রবেশের।
মোহামেদ বলে, ”আরো বেশি করে চেষ্টা করে যেতে হবে। একদিন সৌভাগ্য আসবে সেই আশায় চেষ্টা করে যাই।”
কিন্তু মোহামেদের সাফল্যের পথে অনেক বাধা। প্রতি সন্ধ্যায় কোনো একটা লরিতে ওঠার চেষ্টা করে সে।
” কিন্তু কর্তৃপক্ষ কখনো আমাদের দিকে কুকুর লেলিয়ে দেয়। তারা আমাদের কামড়ায়। কখনো আমাদের দিকে পানি স্প্রে করে, কখনো কাঁদুনে গ্যাস ছোঁড়ে, কখনো বোমার মতো কিছু আমাদের দিকে ছুঁড়ে দেয়”, জানায় মোহামেদ।
সুদান ছাড়ার পর লিবিয়া হয়ে ইতালি পৌঁছে আল্পস পর্বতমালা পেরিয়ে ফ্রান্সে এসে পৌঁছেছে মোহামেদ।
১২ আগস্ট ২০২১
এনএইচ