অভিবাসীদের হোটেলে রাখার সিদ্ধান্ত থেকে অনেক দিন ধরেই সরে আসতে চাইছিল যুক্তরাজ্য সরকার৷ কারণ সরকারি হিসাবে দেখা গেছে, আশ্রয়প্রার্থীদের হোটেলে রাখতে গেলে দেশটির সরকারের প্রতিদিন প্রায় ৮০ লাখ পাউন্ড খরচ হয়৷
অভিবাসন পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য বরাদ্দ করা হোটেলের সংখ্যা কমিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাজ্য৷ এই সপ্তাহে ব্রিটেনের কনজারভেটিভ সরকার জানিয়েছে আগামী তিন মাসের মধ্যে অন্তত ৫০টি হোটেলের সংখ্যা কমিয়ে আনা হবে৷
অভিবাসনমন্ত্রী রবার্ট জেনরিক দেশটির পার্লামেন্টে বলেছেন, আগামী তিন মাসের মধ্যে প্রায় ৫০টি হোটেল অভিবাসীদের থাকার ব্যবস্থা বন্ধ করতে যাচ্ছে সরকার৷
জেনরিক বলেন, আশ্রয়প্রার্থীদের ভাগাভাগি করে রাখা এবং পরিত্যক্ত সামরিক ঘাঁটিগুলো ব্যবহারের চেষ্টাসহ সাম্প্রতিক পদক্ষেপের কারণে এই সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হয়েছে৷ অবশ্য সামরিক ঘাঁটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সরকারকে কিছু স্থানীয় বিরোধিতার মুখে পড়তে হয়েছে৷
আশ্রয়প্রার্থীদের আবাসন সুবিধা দিতে দক্ষিণ-পশ্চিম ইংলিশ উপকূলে নোঙ্গর করে রাখা বিতর্কিত ‘বিবি স্টকহোম’ ভাসমান বার্জটির কথাও উল্লেখ করেন মন্ত্রী৷
গত আগস্টে বার্জটিতে আশ্রয়প্রার্থীদের রাখা হয়৷ কিন্তু ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ দেখা দিলে অভিবাসীদের সেই বার্জ থেকে ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হয় যুক্তরাজ্য সরকার৷ তবে সংক্রমণ মুক্ত করার পর গত সপ্তাহ থেকে আবারও আশ্রয়প্রার্থীদের বার্জটিতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে৷ মোট পাঁচশ পুরুষ আশ্রয়প্রার্থীকে বার্জটিতে রাখার কথা ভাবছে যুক্তরাজ্য সরকার৷
যুক্তরাজ্যে রেকর্ডসংখ্যক অভিবাসী আসার পর অন্তত চারশটি হোটেলকে আশ্রয়প্রার্থীদের রাখার জন্য ব্যবহার করছে যুক্তরাজ্য৷ সরকারের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, হোটেলগুলোতে অন্তত ৪৭ হাজার ৫০০ মানুষকে রাখা হয়েছে৷
অভিবাসনমন্ত্রী জেনরিক আরো বলেন, ফ্রান্সের উপকূল থেকে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে আসা অনিয়মিত অভিবাসীর সংখ্যা গত বছরের তুলনায় অন্তত এক পঞ্চমাংশ কমেছে৷ চলতি বছর এখন পর্যন্ত ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে আসা অভিবাসীর সংখ্যা ২৬ হাজার ৫০১৷ গেল বছর রেকর্ডসংখ্যক ৪৫ হাজার আশ্রয়প্রার্থী বিপজ্জনক এই অভিবাসন রুট পেরিয়ে যুক্তরাজ্যে আসেন৷
এ বছরের শুরুতে, ইংলিশ চ্যানেল হয়ে আসা অনিয়মিত অভিবাসীদের ঠেকাতে ফ্রান্সের উপকূলে নজরদারি বাড়াতে প্যারিসের সঙ্গে একটি চুক্তি সই করেছে লন্ডন৷ সেই চুক্তির আওতায় ফ্রান্সকে অর্থ দেবে যুক্তরাজ্য৷
এদিকে, লন্ডনে আগামী বছর জাতীয় নির্বাচন৷ ভোটের আগে অভিবাসন ইস্যুটি রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়াচ্ছে৷ অনিয়মিত অভিবাসন ঠেকানোকে নির্বাচনের আগে নিজের পাঁচটি অগ্রাধিকারের একটি হিসেবে নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক৷
অনিয়মিত অভিবাসন ঠেকাতে এরইমধ্যে একটি আইন পাশ করেছে যুক্তরাজ্য৷ এমনকি, আশ্রয়প্রার্থীদের রুয়ান্ডা পাঠাতেও উদ্যোগ নিয়েছে সুনাক সরকার৷ তবে আদালতের নির্দেশে একজন আশ্রয়প্রার্থীকেও এখনও আফ্রিকার দেশটিতে পাঠাতে পারেনি যুক্তরাজ্য৷
এম.কে
০৪ নভেম্বর ২০২৩