TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

অস্থায়ী মর্যাদায় ফিরছে ব্রিটেনঃ আশ্রয়প্রার্থীদের নীতিতে বড় পরিবর্তন

যুক্তরাজ্যে আশ্রয়প্রার্থীদের স্থায়ী সুরক্ষা দেওয়ার প্রথা শেষ হতে চলেছে। আগামী সোমবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শবানা মাহমুদ এক বড় নীতিগত পরিবর্তন ঘোষণা করবেন বলে জানা গেছে। তার পরিকল্পনা অনুযায়ী, এখন থেকে আশ্রয় পাওয়া ব্যক্তিরা দেশে কেবল অস্থায়ীভাবে থাকতে পারবেন এবং পরিস্থিতি ‘নিরাপদ’ মনে হলেই তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে।

বর্তমানে যুক্তরাজ্যে শরণার্থী মর্যাদা পাঁচ বছরের জন্য দেওয়া হয়, যার পর স্থায়ীভাবে বসবাস ও নাগরিকত্বের পথে অগ্রসর হওয়ার সুযোগ থাকে। নতুন নীতি সেই পথ পুরোপুরি বন্ধ করবে। সরকারি সূত্র বলছে, সব সফল আশ্রয়প্রার্থীর জন্য অস্থায়ী স্ট্যাটাস চালুর সিদ্ধান্ত হবে “গুরুত্বপূর্ণ নীতি পরিবর্তন”, যার লক্ষ্য অবৈধ ছোট নৌকা আগমন কমানো এবং আশ্রয় দাবির সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করা।

এই নীতি সরাসরি অনুপ্রাণিত ডেনমার্ক থেকে—যেখানে সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট সরকারের নেতৃত্বে ইউরোপের সবচেয়ে কঠোর অভিবাসন ব্যবস্থা চালু হয়েছে। সেখানে শরণার্থীদের সাধারণত দুই বছরের অস্থায়ী বসবাসের অনুমতি দেওয়া হয় এবং মেয়াদ শেষে পুনরায় আবেদন করতে হয়। এমনকি একাধিক মেয়াদ বাড়ানোর সুযোগ থাকলেও নাগরিক হওয়ার পথ দীর্ঘ ও জটিল হয়ে উঠেছে। যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও মনে করেন, এই কঠোরতা ডেনমার্কে ডানপন্থী রাজনীতির উত্থান ঠেকিয়ে জনসমর্থন ধরে রাখতে সহায়তা করেছে।

সম্প্রতি মাহমুদ হোম অফিসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের ডেনমার্কে পাঠিয়েছেন সেখানকার অভিজ্ঞতা যাচাই করতে। শুধু অস্থায়ী মর্যাদা নয়, “ফ্যামিলি রিইউনিয়ন”–এ কঠোর বিধিনিষেধও ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের নজর কেড়েছে। ডেনমার্কে সফল আশ্রয় দাবির সংখ্যা এখন ৪০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। মাহমুদের মতে, যুক্তরাজ্যের “উদার” নীতি বরং আরও মানুষকে বিপজ্জনক পথে ব্রিটেনে আসতে উৎসাহিত করছে।

তবে এই পদ্ধতি নিয়ে লেবার পার্টির ভেতরেই বিরোধিতা বাড়ছে। লেবার এমপি ক্লাইভ লুইস বলেছেন, ডেনমার্কের মডেল “উগ্র ডানপন্থীদের কথাবার্তার প্রতিধ্বনি”। এমপি নাদিয়া হুইটম মন্তব্য করেছেন, এই পথে হাঁটা হবে “নৈতিক, রাজনৈতিক ও নির্বাচনীভাবে অচল রাস্তা”। তবুও সোমবার সংসদে বক্তব্যে মাহমুদ দলীয় সহকর্মীদের উদ্দেশে সতর্কবার্তা দেবেন—“এটা পছন্দ না হলে, এর পর যা আসবে তা আরও কঠিন হতে পারে।”

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মনে করেন, ডেনমার্ক দেখিয়ে দিয়েছে যে কঠোর আশ্রয়নীতি ইউরোপিয়ান কনভেনশন অন হিউম্যান রাইটস (ECHR)–এর ভেতর থেকেও বাস্তবায়ন করা যায়। তবে তিনি এবং তার ডেনিশ সমকক্ষ উভয়েই মনে করেন ‘অ্যাকটিভিস্ট বিচারকরা’ পরিবারের জীবনের অধিকারকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দিলে বহিষ্কার প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়—এ বিষয়েও সোমবার তিনি অবস্থান জানাবেন।

রিফর্ম ইউকে দাবি করছে, কেবল অস্থায়ী মর্যাদা নয়—ছোট নৌকায় আসা সবাইকে আটক ও বহিষ্কারই হবে সমস্যার সমাধান। কনজারভেটিভ পার্টি বলছে, লেবারের বাতিল করা রুয়ান্ডা স্কিম ফিরিয়ে আনাই ছোট নৌকা ঠেকানোর একমাত্র উপায়।

মাহমুদ স্বীকার করছেন, যুক্তরাজ্যের সীমান্ত “নিয়ন্ত্রণের বাইরে”। তবে তার বিশ্বাস, ডেনমার্ক-অনুপ্রাণিত নতুন নীতি যদি বাস্তবে আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা কমাতে সক্ষম হয়, তাহলে লেবার কেবল অভিবাসন নয়, আরও নানা ইস্যুতেই জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার করতে পারবে।

সূত্রঃ বিবিসি

এম.কে

আরো পড়ুন

টিকটকারকে সাজা দিয়ে বিচারক বললেন, আপনার ভিডিওগুলো মজার নয়

লন্ডনে সশস্ত্র বাহিনী দিবস পালিত

অনলাইন ডেস্ক

হজ নিয়ে প্রতারণার আশঙ্কায় শতাধিক ব্রিটিশ মুসলিম!

অনলাইন ডেস্ক