মাতৃভাষা বাংলা নয়। তাঁর পরিবারের কেউ বাংলাদেশে এসেছেন বলেও শোনা যায়নি। ব্রিটেনে জন্ম, টেমসের পারে বেড়ে ওঠা খাঁটি ইংরেজ এক লন্ডনবাসী চিকিৎসকের গলায় বাংলার টান। ঝরঝরে বাংলা বলতে পারেন অ্যানা লিভিংস্টোন।
অ্যানা পূর্ব লন্ডনের লাইমহাউস ডিসট্রিক্টের বাসিন্দা। টেমসের উত্তর তীর লাগোয়া প্রাক্তন বন্দর এলাকা এই লাইমহাউস। সেখানকারই একটি হাসপাতালের অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসক অ্যানা। ১৯৭৫ সালে লন্ডন স্কুল অফ মেডিসিন থেকে পাশ করেছেন। সত্তরের দশকের শেষে এবং আশির দশকের শুরুতে তার চিকিৎসা জীবন শুরু হয় বাঙ্গালীদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে। সদ্য ডাক্তারি পাশ করা অ্যানাকে সেই সময় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল লাইমহাউসের হাসপাতালের রোগীদের দেখভালের।
বাংলা ভাষা শেখা হল কিভাবে জানাতে গিয়ে অ্যানা লিভিংস্টোন বলেন, “১৯৮০ সালে আমি জিপি ছিলাম লাইমহাউসের। আমার রোগীরা অধিকাংশই ছিলেন বাংলাদেশী। বাংলা ছাড়া কোনও ভাষাই জানতেন না। আর আমার মাতৃভাষা ইংরেজি। সেই সময় হাসপাতালে কোনও দোভাষী ছিলেন না। বাধ্য হয়েই চিকিৎসার প্রয়োজনে আমি ওই রোগীদের কাছ থেকেই বাংলা শিখতে শুরু করি।’’
অর্থাৎ, রোগীর সমস্যা বোঝার জন্যই তাদের ভাষা শেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন অ্যানা। অ্যানা বলেছেন, ‘‘আমরা পরস্পরকে পরস্পরের ভাষা শেখাতাম। আমি বাংলা শিখতাম। ওরাও আমার কাছে ইংরেজি শিখত। এ ভাবেই আমরা একে অপরের ভাষা বুঝতে শুরু করি।’’
টুইটারে অ্যানার একটি ভিডিয়ো পোস্ট করেছেন লন্ডনবাসী এক বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত সঙ্গীতশিল্পী হালিমা খান। হালিমা ওই ভিডিয়োর বিবরণ এবং আরও একটি টুইটে লিখেছেন, ‘‘এই মহিলা একজন সুপারহিরো। আমি চাই উনার নাম গোটা লন্ডন জানুক। এমন দয়ালু মানুষ সচরাচর খুঁজে পাওয়া যায় না। এই খারাপ খবর আর নেতিবাচক দুনিয়ায় এরা জীবনের জীবন্ত উদাহরণ। উনার বাংলা শেখার চেষ্টার জন্য সেই সময় অসংখ্য বাঙালি চিকিৎসা পেয়ে প্রাণে বেঁচেছিলেন। উনার কথা শুনে আমার চোখে পানি এসেছে।’’ এর পাশাপাশি লন্ডনের লাইমহাউসের এমপি আপসানা বেগমকে ট্যাগ করে হালিমার অনুরোধ, ‘‘দয়া করে উনাকে খুঁজে বের করে পুরস্কার দিন।’’
অ্যানার গল্প শুনে তাঁকে সম্মানিত করার দাবি জানিয়েছেন অনেক নেটাগরিকেরাও। অ্যানার একজন কলিগ হেলেন সালিসবারি বলেন, ‘‘১৯৮০ সালের লন্ডনে আমিও চিকিৎসক হিসাবে কাজ করেছি। সত্যি বলতে অ্যানাকে দেখে আমরা সিলেটি বাংলা শেখার ক্লাসে ভর্তিও হয়েছিলাম। কিন্তু পরে ওই এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যাই। অ্যানাকে আমার শ্রদ্ধাবনত ভালবাসা। সে ওখানে থেকে অসুস্থ এবং জখম রোগীদের সেবা করে গিয়েছে। ভিন্ন ভাষা সে এতো সুন্দর ভাবে বলতে পারে যা আমাকে ঈর্ষান্বিত করে।’’