25.4 C
London
August 9, 2025
TV3 BANGLA
আন্তর্জাতিক

আদালতের নথিতে প্রকাশ পেল মোদি-মাস্কের বিরোধ

গত জানুয়ারিতে বিশ্বের শীর্ষ ধনকুবের ইলন মাস্কের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম এক্সে শেয়ার করা এক পুরোনো পোস্ট নিয়ে ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের সাতারা শহরে পুলিশ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। ২০২৩ সালে লেখা সেই ছোট্ট বার্তায় কয়েক শ ফলোয়ারের একটি অ্যাকাউন্ট ভারতের ক্ষমতাসীন দলের এক জ্যেষ্ঠ নেতাকে ‘অকেজো’ বলে উল্লেখ করেছিল।

এই পোস্টের সূত্র ধরে সাতারা পুলিশের কর্মকর্তা জিতেন্দ্র শাহানে এক্স কর্তৃপক্ষকে পাঠানো এক ‘গোপন’ নোটিশে লিখেছিলেন, ‘এই পোস্ট ও এর বিষয়বস্তু মারাত্মক সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে।’

পোস্টটি এখনো অনলাইনে আছে। তবে এই পোস্টকে কেন্দ্র করে এক্স ভারত সরকারের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছে। মার্চে দায়ের করা ওই মামলায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রশাসনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কঠোর দমন অভিযানকে চ্যালেঞ্জ করেছে এক্স।

২০২৩ সাল থেকে ভারত সরকার অনলাইনে কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা বাড়িয়েছে। এখন অনেক বেশি সরকারি কর্মকর্তা সরাসরি টেক কোম্পানিগুলোর কাছে পোস্ট মুছে ফেলার ‘নির্দেশ’ দিতে পারছেন। গত অক্টোবরে চালু হওয়া একটি সরকারি ওয়েবসাইটের মাধ্যমেও এসব নির্দেশ পাঠানো যাচ্ছে।

এক্স বলছে, ভারতের এই পদক্ষেপ বেআইনি ও সংবিধানবিরোধী। এতে অসংখ্য সরকারি সংস্থা ও হাজারো পুলিশকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, যাতে তারা সরকারি কর্মকর্তাদের সমালোচনামূলক পোস্টও দমন করতে পারে—যা স্বাধীন মতপ্রকাশের পরিপন্থী।

ভারত সরকার আদালতে বলেছে, এই উদ্যোগ অনলাইনে বেআইনি কনটেন্টের বিস্তার রোধ এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করে। তারা দাবি করেছে, মেটা ও গুগলসহ অনেক বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান সরকারের এই পদক্ষেপকে সমর্থন করছে। তবে মেটা ও গুগল এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

মাস্ক নিজেকে ‘পূর্ণ স্বাধীন মতপ্রকাশের সমর্থক’ বলে দাবি করলেও যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, অস্ট্রেলিয়া ও আরও কিছু দেশে কনটেন্ট অপসারণ নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাঁর বিরোধ হয়েছে। তবে ভারতের ক্ষেত্রে তিনি সরাসরি সরকারের কড়া সেন্সরশিপ নীতির ভিত্তিকেই আদালতে চ্যালেঞ্জ করেছেন। ভারত এক্সের অন্যতম বড় বাজার, আর মাস্ক বলেছিলেন, এই দেশটির উন্নয়নের সম্ভাবনা বিশ্বের যে কোনো বড় দেশের চেয়ে বেশি।

রয়টার্সের হাতে থাকা আড়াই হাজার পৃষ্ঠার আদালতের গোপন নথি ও ৭ পুলিশ কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার থেকে জানা গেছে, ভারত কীভাবে একটি গোপন সেন্সরশিপ ব্যবস্থার মাধ্যমে অনলাইন পোস্ট মুছে ফেলছে। এর মধ্যে শুধু ভুয়া তথ্য রোধ নয়, সংবাদ প্রতিবেদন, কার্টুন এবং রাজনৈতিক ব্যঙ্গচিত্রও রয়েছে।

এর আগে, কেবল ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ও তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় কনটেন্ট অপসারণের নির্দেশ দিতে পারত। কিন্তু ২০২৩ সালে মোদি সরকার সব কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সংস্থা এবং পুলিশকে যে কোনো বেআইনি তথ্য সরানোর ক্ষমতা দেয়।

২০২৪ সালের অক্টোবরে চালু হয় ‘সহযোগ’ নামের একটি ওয়েবসাইট, যার মাধ্যমে সহজেই টেক কোম্পানিগুলোকে নির্দেশ পাঠানো যায় পোস্ট মুছে ফেলার। এক্স এই প্ল্যাটফর্মে যোগ দেয়নি, বরং এটিকে ‘সেন্সরশিপ পোর্টাল’ আখ্যা দিয়ে মামলা করেছে।

আদালতের নথি বলছে, মার্চ ২০২৪ থেকে জুন ২০২৫ পর্যন্ত ভারতীয় সংস্থাগুলো এক্সকে প্রায় ১ হাজার ৪০০ পোস্ট বা অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলতে বলেছে। এর মধ্যে ৭০ শতাংশ নির্দেশ এসেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন সাইবার অপরাধ সমন্বয় কেন্দ্র থেকে।

সরকারের প্রতিবেদনে এক্সকে ‘বিদ্বেষ ও বিভাজন ছড়ানোর’ জন্য দায়ী করা হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে দেওয়া হয়েছে রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যঙ্গচিত্র, সমালোচনামূলক সংবাদ প্রতিবেদন ও ভুয়া তথ্য ছড়ানোর অভিযোগ।

কিছু ঘটনায় দেখা গেছে, ভারতের রেল মন্ত্রণালয় ভয়াবহ পদদলনের ঘটনার সংবাদ প্রতিবেদনও সরাতে বলেছে। আবার চেন্নাই পুলিশ প্রধানমন্ত্রী ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে ব্যঙ্গ করে তৈরি করা ‘লাল ডাইনোসর’ কার্টুন মুছে ফেলতে বলেছে, যেখানে ডাইনোসরটির নাম ছিল ‘মূল্যস্ফীতি।’

চেন্নাই পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেছেন, এক্স ‘ভারতের সাংস্কৃতিক সংবেদনশীলতা বোঝে না’। অন্য দেশে যা গ্রহণযোগ্য, ভারতে তা ‘নিষিদ্ধ’ হতে পারে।

সূত্রঃ রয়টার্স

এম.কে
০৯ আগস্ট ২০২৫

আরো পড়ুন

এবার ইসরায়েলকে নিষেধাজ্ঞার হুমকি মার্কিন প্রশাসনের

নিউজ ডেস্ক

সহিংস ইসরায়েলিদের উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা জারি

স্টারশিপ বিস্ফোরণে তুর্কস অ্যান্ড কাইকোস দ্বীপে কম্পনঃ তদন্তে নেমেছে মার্কিন প্রশাসন