স্বপ্নের দেশ আমেরিকায় এমবিএ করার পরিকল্পনা নিয়েছেন আশিস চৌহান। আগামী বছর সেদেশের কোনো একটি ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হতে চান তিনি। এটি যেন তার মাথায় গেঁথে নিয়েছেন তিনি। আর্থিক ব্যবস্থাপনা খাতে পড়ালেখা শেষ করে সেখানেই কাজ করে নিজের ভবিষ্যৎ গড়তে চান ২৯ বছর বয়সি এই ব্যক্তি। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প যেন তার সেই স্বপ্নকে ভেস্তে দেওয়ার জন্য সব বন্দোবস্তই করেছেন। আর এর কারণ দীর্ঘদিন ধরে ভিসানীতিকে ঘিরে ট্রাম্পের সমর্থকদের মধ্যে বিরাজমান উত্তেজনা।
এইচ-ওয়ানবি ভিসা কর্মসূচির আওতায় দক্ষ বিদেশি কর্মীদের আমেরিকায় কাজ করার সুযোগ দেয় দেশটির সরকার। এই কর্মসূচি একদিকে যেমন নিজ দেশের কর্মীদের বাদ দিয়ে বিদেশি কর্মী নিয়োগের জন্য সমালোচিত, অন্যদিকে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিভাবানদের আকৃষ্ট করার জন্য প্রশংসিতও।
কারণ আমেরিকার প্রযুক্তি খাতে মূলত বিদেশি কর্মীদের ব্যাপকহারে নিয়োগ দেওয়া হয়। ডোনাল্ড ট্রাম্প একসময় এইচ-ওয়ানবি ভিসা কর্মসূচির সমালোচনা করলেও ক্ষমতা গ্রহণের আগেই এই ভিসা কর্মসূচিকে সমর্থন দিয়ে তা আবারও চালু করেছেন।
এর পেছনের কারণটি অবশ্যই ধনকুবের বন্ধুর মন রক্ষা করা। কারণ টেরসা প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্ক এই ভিসা চালুর একনিষ্ঠ সমর্থক। তার মতে, প্রতিভাবান ইঞ্জিনিয়ারদের খুঁজে আনতে হলে এইচ-ওয়ানবি ভিসা তার একমাত্র চাবিকাঠি। তার চাপেই মূলত এই ভিসা কর্মসূচি আবারও চালু করতে একমত হয়েছেন ট্রাম্প।
এখন পর্যন্ত যারা এইচ-ওয়ানবি ভিসা পেয়েছেন, তাদের ৭২ শতাংশই ভারতীয় নাগরিক। এ তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে চীন, তাদের অনুপাত ১২ শতাংশ। ২০২৩ সালে এই ভিসায় আসা বেশিরভাগ কর্মীই ছিলেন বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিতে দক্ষ। তাদের মধ্যে ৬৫ শতাংশ কম্পিউটার-সম্পর্কিত চাকরিতে ছিলেন, যাদের বার্ষিক গড় বেতন এক লাখ ১৮ হাজার ডলার।
দেশের জনমত জরিপ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিউ রিসার্চের একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২৩ সালে অভিবাসন এক দশমিক ৬ মিলিয়ন বেড়েছে, যা ২০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। অভিবাসীরা এখন জনসংখ্যার ১৪ শতাংশেরও বেশি। আর এ সংখ্যা ১৯১০ সালের পর থেকে সর্বোচ্চ। এদিকে আমেরিকায় অভিবাসনের দিক থেকে মেক্সিকোর পর ভারতের অবস্থান। অনেক আমেরিকান আশঙ্কা করছেন, অভিবাসনের এই ঊর্ধ্বগতি সেদেশের চাকরির বাজারকে তাদের জন্য সংকুচিত করবে।
আন্তর্জাতিক শিক্ষাগত বিনিময় সম্পর্কে ‘ওপেন ডোরস’-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ সালে আমেরিকায় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের শীর্ষস্থানীয় উৎসস্থল হিসেবে চীনকেও ছাপিয়ে গিয়েছে ভারত। তাদের সংখ্যা তিন লাখ ৩১ হাজার ৬০২। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই ঋণের ওপর নির্ভর করে দেশটিতে পড়তে এসেছে এবং যেকোনোভাবে ভিসা আটকে গেলে তাদের পরিবার বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে।
এদিকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে এইচ-ওয়ানবি ভিসা কর্মসূচিকে সীমাবদ্ধ করার প্রচেষ্টা শীর্ষে পৌঁছেছিল। দ্বিতীয় মেয়াদে এসেও তিনি একই পথে হাঁটবেন কি না, তা এখনো সুস্পষ্ট নয়। ফলে ভিসানীতি নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে ভারতীয়দের মধ্যে। কারণ নতুন প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মধ্যে সবাই যে এ বিষয়ে একমত, তেমনটা নয়। এইচ-ওয়ানবি ভিসাসহ অভিবাসন নীতি নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে। কারণ এই ভিসার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো উল্লেখযোগ্যভাবে উচ্চ বেতনের কর্মসংস্থান এবং একই সঙ্গে দেশটিতে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ।
আর এসব কারণেই এই ভিসা কর্মসূচিকে ত্রুটিপূর্ণ মনে করছেন অনেক আমেরিকান। এ প্রসঙ্গে মূলত ভারতীয় আইটি সংস্থার দ্বারা এর অপব্যবহার ও জালিয়াতির কথা উল্লেখ করেন তারা। এইচ-ওয়ানবি ভিসার শীর্ষ প্রাপক এই সংস্থাগুলোই।
এম.কে
২৬ জানুয়ারি ২০২৫