8.1 C
London
November 18, 2024
TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)শীর্ষ খবর

আশ্রয়প্রার্থী স্থানান্তর গতিশীল করতে রুয়ান্ডায় বৃটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

আশ্রয়প্রার্থীদের যুক্তরাজ্যে না রেখে রুয়ান্ডায় পাঠানোর প্রক্রিয়াকে বেগবান করতে মধ্য আফ্রিকার দেশটিতে সফর করেছেন ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্র্যাভারম্যান। রুয়ান্ডার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে এ বিষয়ক আরো কিছু সমঝোতা স্মারকেও সই করেছে লন্ডন ও কিগালি।
দুই দিনের সফরে গত শুক্রবার রুয়ান্ডা পৌঁছান ব্রিটিশ মন্ত্রী। বিশ্ব সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে, আশ্রয়প্রার্থীদের যুক্তরাজ্যে না রেখে রুয়ান্ডায় পাঠানোর এই পরিকল্পনাকে ব্রিটিশ সরকারের ‘সহানুভূতি’ বলে উল্লেখ করেছেন সুয়েলা।
সফরকালে আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য নির্মাণাধীন আবাসন প্রকল্পগুলো ঘুরে দেখেছেন ব্র্যাভারম্যান। কাজের অগ্রগতি নিয়ে বেশ সন্তুষ্ট ছিলেন তিনি। কাজ অনেকটা শেষের পথে বলেও জানান ব্রিটিশমন্ত্রী। এসময় তাকে বেশ উৎফুল্ল ও হাসিখুশি দেখা যাচ্ছিল।
তিনি বলেন, “এই বাড়িগুলো সত্যিই সুন্দর, মানের দিক থেকেও খুব ভালো। আমি স্বাগত জানাই এবং বলতে চাই ইন্টেরিয়র ডিজাইনও আমার খুব পছন্দ হয়েছে।”
গ্রীষ্ম শুরুর আগেই আশ্রয়প্রার্থীদের রুয়ান্ডায় স্থানান্তরে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করতে চান ব্রিটিশমন্ত্রী। রুয়ান্ডা সফরে এ কথাও জানিয়েছেন তিনি। দেশটির রাজধানী কিগালিতে অবস্থানকালে রুয়ান্ডার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেও আলোচনা করেন ব্রিটিশ মন্ত্রী। দুই দেশের মধ্যে সম্পাদিত অভিবাসন চুক্তিকে আরো শক্তিশালী করতে কয়েকটি সমঝোতা স্মারকেও নতুন করে সই করেছেন তারা।
শনিবার তার টুইটার ফিডে দেখা গেছে, সফরকালে সুয়েলা ব্র্যাভারম্যান রুয়ান্ডার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে একটি ব্রিফিংয়ে অংশ নিয়েছেন, এবং দেখা করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট পল কাগামের সঙ্গে।
সফরকালে কেপলার অ্যাকাডেমি নামে একটি কলেজও পরিদর্শন করেন ব্র্যাভারম্যান। জানিয়েছেন, সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মোট শিক্ষার্থীর ২৫ শতাংশ শরণার্থী। এরপর একটি ক্রিকেট স্টেডিয়ামেও যান ব্রিটিশ মন্ত্রী। সেখানে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা শরণার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। কীভাবে তারা রুয়ান্ডাকে আপন করে নিয়েছেন, সে কথাও শুনতে চান মন্ত্রী।
ব্র্যাভারম্যান প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, আশ্রয়প্রার্থীদের যারা রুয়ান্ডায় পুনর্বাসিত হবে, তাদের “সুরক্ষিত রাখার পাশাপাশি নতুন জীবন গড়তে সহযোগিতা দেয়া হবে।”
রুয়ান্ডাকে “বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির একটি” এবং “বিশ্বের নিরাপদ দেশগুলোর একটি” হিসেবেও অভিহিত করেছেন যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
ব্রিটিশ মন্ত্রী এমন কথা বললেও সমালোচকেরা বলছেন, রুয়ান্ডায় মানবাধিকার পরিস্থিতি খুবই নাজুক অবস্থায় রয়েছে। দেশটিতে সরকারের বিরুদ্ধে ভিন্নমত সহ্য করা হয় না। কখনও কখনও কারাদণ্ড কিংবা আরও খারাপ পরিণতিও সইতে হয় নাগরিকদের। এমনকি সমকামিতাকেও মেনে নেওয়া হয় না রুয়ান্ডায়।
আফ্রিকা ইস্যুতে ‘ডোন্ট ডিস্টার্ব: দ্য স্টোরি অফ আ পলিটিক্যাল মার্ডার অ্যান্ড অ্যান আফ্রিকান রেজিম গন ব্যাড’ নামের একটি বই লিখেছেন ব্রিটিশ সাংবাদিক মাইকেলা রং। দেশটির গণমাধ্যমকে তিনি বলেছেন, “রুয়ান্ডা এবং তার প্রতিবেশী গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গো সর্বাত্মক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে।”
তিনি আরো বলেন, “ভয়ঙ্কর গেরিলা বাহিনী এম২৩ মূলত রুয়ান্ডার প্রক্সি। অন্তত ৬০ থেকে ৮০ হাজার কঙ্গোলিকে নিজেদের গ্রাম ছাড়া করেছে এই বাহিনী। কিন্তু ব্র্যাভারম্যান আনন্দের সঙ্গে সেই আফ্রিকান নেতাকে বৈধতা দিচ্ছেন। অথচ রুয়ান্ডায় অস্থিতিশীলতার জন্য ওই ব্যক্তিটি দায়ী বলে স্বীকৃত।”
এই ব্রিটিশ সাংবাদিক বলেন, “রুয়ান্ডার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার বিষয়ে ব্রিটেনের আলোচনা করা উচিত। অথচ সেটা না করে সেখানে অভিবাসীদের পাঠানোর পরিকল্পনা করছে ব্রিটিশ সরকার।”
যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর রুয়ান্ডা সফরে ডানপন্থি সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধি ছাড়া অন্য কাউকে নেয়া হয়নি বলেও জানিয়েছে বৃটিশ সংবাদমাধ্যম। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, রুয়ান্ডায় পত্রিকার সাংবাদিকদের নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এই ঘটনা সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় বিধিনিষেধ উল্লেখ করে উদ্বেগ জানিয়েছেন সাংবাদিকেরা।
ব্র্যাভারম্যানের এই সফরের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছেন হাজারো মানুষ। লন্ডনের পিকাডিলি সার্কাসের এই বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে “বর্ণবাদকে না” এবং “শরণার্থীদের স্বাগত” জানানো হয়। অনেকে রুয়ান্ডা নীতির সুনির্দিষ্ট সমালোচনা করেছেন। “নিরাপদ যাত্রা, রুয়ান্ডা ফ্লাইট নয়”, “জোর করে ফেরত পাঠানো বন্ধ করুন” এবং “আশ্রয় চাওয়া অপরাধ নয়” বলে সরকারকে পিছু হটার দাবি জানিয়েছেন বিক্ষুব্ধ মানুষেরা।
ব্র্যাভারম্যানের সফরে ক্ষুব্ধ হয়েছেন বিরোধী রাজনীতিকেরাও। লেবার পার্টির ছায়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইভেট কুপার প্রশ্ন ছুঁড়ে বলেন, “ব্রিটিশ নাগরিকেরা সুয়েলা ব্র্যাভারম্যানকে তার নিজের নীতি প্রচারে রুয়ান্ডা ভ্রমণের অর্থ দেয় নাই।”
বৃটিশ সংবাদমাধ্যমকে কুপার বলেন, “সুয়েলা ব্র্যাভারম্যান এখনও পর্যন্ত নিশ্চিত হতে পারেননি যে রুয়ান্ডা বাস্তবে কত লোক গ্রহণ করবে কিংবা ব্রিটিশ করদাতাদের কত অর্থ ব্যয় হবে।”
লিবারেল ডেমোক্র্যাট নেতা এড ডেভি রুয়ান্ডা সফরকে একটি “ব্যয়বহুল বিভ্রান্তি” বলে অভিহিত করেছেন। এমনকি সরকারের এই পরিকল্পনাটিকে “অনৈতিক এবং অকার্যকর” বলতেও ছাড়েননি তিনি। রুয়ান্ডাকে কনজারভেটিভ পার্টির “সর্বশেষ ভ্যানিটি ব্যাগ” বলেও অভিহিত করেন এই রাজনীতিক।
একইসঙ্গে এড ডেভি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তার দল “শরণার্থী বিরোধী আইনের বিরোধিতা করবে।”
অন্যদিকে, ব্র্যাভারম্যান বলেছেন, গ্রাউন্ড ব্রেকিং পার্টনারশিপকে এগিয়ে নিতে রুয়ান্ডা এবং যুক্তরাজ্য সম্পূর্ণ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তার দাবি “অনিয়মিত ও গণ অভিবাসনপ্রত্যাশীদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এটি একটি নতুন বিশ্ব মডেল” হয়ে উঠবে।

আরো পড়ুন

“সমালোচনা ও মানহানিকর” কনটেন্ট সরানোর অনুরোধ বাড়িয়েছে বাংলাদেশ সরকার

অনলাইন ডেস্ক

বায়োমেট্রিক রেসিডেন্স পারমিট প্রতিস্থাপন হতে যাচ্ছে বড় বিপদের নাম

নিউজ ডেস্ক

বাংলাদেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কমেছে