27 C
London
August 25, 2025
TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

ইংল্যান্ড-ওয়েলসে স্বল্পমেয়াদি কারাদণ্ড বাতিলের পথে লেবার সরকার

ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে সাজা ব্যবস্থায় তিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে লেবার সরকার। আসছে সেপ্টেম্বরে সংসদে নতুন আইন উপস্থাপন করা হবে, যেখানে ১২ মাসের কম মেয়াদের কারাদণ্ড প্রায় সম্পূর্ণ বাতিল করা হবে। একই সঙ্গে কমিউনিটি শাস্তিকে আরও কঠোর করার পাশাপাশি টেক্সাস-ধাঁচের বন্দিদের আগাম মুক্তির একটি নতুন প্রণোদনা ব্যবস্থা চালু করা হবে।

বিচার মন্ত্রী শাবানা মাহমুদ জানিয়েছেন, আগামী গ্রীষ্মে কারাগারে আবারও জায়গার সংকট দেখা দেওয়ার আগে দ্রুত এই পরিবর্তন কার্যকর করা জরুরি। সরকার বলছে, কেবল নতুন কারাগার বানিয়েই সংকট সমাধান করা যাবে না।

নতুন আইনে বন্দিদের জন্য “আর্নড প্রগ্রেশন মডেল” চালু করা হবে। এর আওতায় নির্দিষ্ট মেয়াদের সাজাপ্রাপ্তরা ভালো আচরণ বা শিক্ষাক্লাসে অংশগ্রহণের মাধ্যমে আগাম মুক্তি পেতে পারবে। সাজা এক-তৃতীয়াংশ থেকে অর্ধেক ভোগ করার পর মুক্তির সুযোগ থাকলেও সন্ত্রাসবাদ-সম্পর্কিত মামলার দোষী ও সবচেয়ে বিপজ্জনক অপরাধীরা এর বাইরে থাকবে।

সরকারের পরিকল্পনায় রয়েছে ব্যতিক্রম ছাড়া ১২ মাসের কম সাজা বাতিল করা। ন্যায়বিচার মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্যে দেখা যায়, ২০২৩ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বর মেয়াদে এক বছরের কম সাজাপ্রাপ্ত কয়েদিদের ৬২ শতাংশ মুক্তির পর আবারও অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। লেবার সরকারের মতে, স্বল্পমেয়াদি সাজা কার্যকর না হয়ে উল্টো অপরাধ বাড়ায়।

একই সঙ্গে কমিউনিটি শাস্তি আরও কঠোর করা হবে। আদালতকে জরিমানা, সম্পদ বাজেয়াপ্ত, ভ্রমণ ও গাড়ি চালনায় নিষেধাজ্ঞা এবং ফুটবল ম্যাচে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার মতো নতুন ক্ষমতা দেওয়া হবে। এছাড়া স্থানীয় কাউন্সিল অপরাধীদের দিয়ে বিনা পারিশ্রমিকের কাজ যেমন গর্ত ভরাট ও দেয়াল থেকে গ্রাফিতি অপসারণ করাতে পারবে।

সাসপেন্ডেড সাজার মেয়াদ দুই বছর থেকে বাড়িয়ে তিন বছর করা হবে। বিশেষত যেসব অপরাধী কম ঝুঁকিপূর্ণ কিন্তু বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন, যেমন গর্ভবতী নারী বা মাদকাসক্ত ব্যক্তি, তাদের জন্য এই ব্যবস্থা বেশি ব্যবহার করা হবে।

যৌন ও সহিংস অপরাধীদের জন্য “রেস্ট্রিকশন জোন” নির্ধারণ করা হবে, যাতে মুক্তির পর তাদের চলাফেরা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। প্রযুক্তি ও উন্নত ট্যাগিং সিস্টেমের মাধ্যমে এর নজরদারি হবে। পাশাপাশি, সরকার ঘোষণা করেছে বেশিরভাগ বিদেশি অপরাধীকে দণ্ড ঘোষণার পরপরই নির্বাসিত করা হবে, আগের মতো সাজা এক-তৃতীয়াংশ ভোগের পর নয়।

এছাড়া যৌন অপরাধীদের জন্য স্বেচ্ছায় রাসায়নিক নির্বীজন কর্মসূচি চালু থাকছে এবং ভবিষ্যতে এটিকে বাধ্যতামূলক করার বিষয়টিও বিবেচনায় রাখা হচ্ছে। বর্তমানে এ কর্মসূচি দুটি অঞ্চলে পরীক্ষামূলকভাবে চলছে।

সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, “আমরা যখন ক্ষমতায় আসি, তখন কারাগার ব্যবস্থা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ছিল। তাই আমরা ১৪ হাজার নতুন কারাগারের জায়গা তৈরি করছি, তবে কেবল নতুন কারাগার বানিয়েই সংকটের সমাধান সম্ভব নয়। এ কারণেই সাজা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনা হচ্ছে।”

ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে বর্তমানে পশ্চিম ইউরোপের মধ্যে মাথাপিছু সবচেয়ে বেশি বন্দি রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, দ্রুত সংস্কার না আনলে আগামী বসন্তেই আবারও কারাগারে জায়গার মারাত্মক সংকট তৈরি হতে পারে।

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে
২৫ আগস্ট ২০২৫

আরো পড়ুন

যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের কয়েকটি দেশে রোজার তারিখ ঘোষণা

নিউজ ডেস্ক

বিপর্যয়ের ঝুঁকিতে বৃটিশ অর্থনীতি

আফগানিস্তানে তালেবানদের কর্তৃক ব্রিটিশ দম্পতি গ্রেপ্তার ও নিখোঁজ