বার্মিংহামের হামজা উদ্দিন একজন বক্সার। তার বাবা-মা দু’জনই বাংলাদেশি। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই বক্সার এরইমধ্যে গ্রেট ব্রিটেনের জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপে চারবার শিরোপা জিতেছেন। সেরা হয়েছেন ৫১ কেজি ওজন শ্রেণির ওপেন ক্যাটাগরিতে। প্রতিভাবান এই বক্সারকে গ্রেট বৃটেনের হয়ে অলিম্পিকে খেলানোর স্বপ্ন দেখছেন তার বাবা সিরাজ উদ্দিন।
মাত্র তিন বছর বয়সে (১৯৭৫ সালে) বাবার হাত ধরে সিলেটের বিশ্বনাথ থেকে বিলেতে পাড়ি জমান সিরাজ উদ্দিন। বার্মিংহামে ওয়েলসে মাত্র ২০ বছর বয়সে অ্যামেচার বক্সিংয়ে জড়ান তিনি। যদিও তার বক্সিং ক্যারিয়ার খুব একটা বড় হয়নি। পিঠের চোটে খেলা ছেড়ে বক্সার তৈরিতে মন দেন তিনি। ধীরে ধীরে বার্মিংহামের ওয়ালসলে গড়ে তোলেন বক্সিং পাঠের পাঠশালা। সেখান থেকে বড় ছেলে হামজা চৌধুরী গ্রেট বৃটেনের জুনিয়র ক্যাটাগরিতে চারবার চ্যাম্পিয়ন করেছেন। হামজা একবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন ওপেন ক্যাটাগরিতে। তাইতো মাত্র ১৯ বছর বয়সী এই বক্সারকে নিয়ে বড় স্বপ্ন দেখছেন।
ছেলেকে নিয়ে নিজের স্বপ্নের কথা জানিয়ে সিরাজ উদ্দিন বলেন, এরিমধ্যে হামজা টপ লেভেলে নিজেকে প্রমাণ করেছে। গ্রেট বৃটেনের হয়ে খেলতে দুটি ধাপ অতিক্রম করেছে সে। আর একটি ধাপ পেরুতে পারলে ও গ্রেট বৃটেনের হয়ে অলিম্পিক গেমস, ইউরোপিয়ান গেমস, কমনওয়েলথ গেমসে খেলার যোগ্যতা অর্জন করবে।’
হামজা বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করলে পদক আসতে পারে সাউথ এশিয়ান গেমসে। তবে এখনই বাংলাদেশকে নিয়ে ভাবছেন না ১৯ বছর বয়সী এই বক্সার। তার প্রথম লক্ষ্য ইংল্যান্ডের প্রতিনিধিত্ব করা জানিয়ে বলেন, আমি ইংল্যান্ডের হয়ে ওয়ার্ল্ড সার্কিটে বক্সিং করতে চাই। সে লক্ষ্যেই প্রতিনিয়িত নিজেকে তৈরি করছি। তবে সেটা যদি কোনো কারণে সম্ভব না হয় তবে অবশ্যই আমি বাংলাদেশের হয়ে খেলবো’।
তবে ছেলে যাই ভাবুক না কেন এরিমধ্যে লাল সবুজের পতাকায় হয়ে ছেলেকে খেলানোর আশায় সিরাজ উদ্দিন যোগাযোগ করেছেন বাংলাদেশে। যদিও আদনান হোসেন ও আসাদুজ্জামান নামে দুই কোচ তাকে হতাশ হয়েছেন জানিয়ে বলেন, আমি বাংলাদেশের হয়ে খেলানোর জন্য সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে রাখতে ওনাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। কিন্তু তারা সেভাবে সাড়া দেননি।’ প্রথম প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হলেও হামজার বাবা মোটেও দমে যাননি।
বার্মিংহাম কমনওয়েলথ গেমস কাভার করতে আসা বাংলাদেশি সাংবাদিকদের সন্ধান পেয়ে যোগাযোগ করেছেন তাদের সঙ্গে। তার বাসায় আলাপ কালে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আমি ছেলেকে বাংলাদেশের হয়ে খেলানোর জন্য তৈরি রাখতে চাই। যদি এখানে কোনো কিছু না হয় সঙ্গে সঙ্গে যেন বাংলাদেশের হয়ে খেলাতে পারি। সে লক্ষ্যে হামজার বাংলাদেশি পাসপোর্ট তৈরি করে রাখার কথাও বলেন।’ ছেলেকে একজন পরিপূর্ণ বক্সার হিসেবে গড়ে তুলতে বক্সিং ধ্যানজ্ঞান সিরাজ উদ্দিনের। বক্সিং জিমে অন্যদের সময় দেয়ার পাশাপাশি ঘরের রিংয়ে ছেলেদের সঙ্গে প্রতিদিন কাটাচ্ছেন সাত আট ঘণ্টা।
হামজার বক্সার হয়ে গড়ে ওঠার গল্প শুনিয়ে তিনি বলেন, ওর জন্ম ২০০৩ সালে। হামজা সাত বছর বয়সে প্রথম জিমে গিয়ে বক্সিং শুরু করে। শুরুতে আমার আপত্তি থাকলেও ওর ন্যাচারাল অ্যাবেলিটি দেখে আমি মুন্ধ হই। সবাই বলতে শুরু করে বাপেরটা পেয়েছে। হাজমার বক্সিংয়ের প্রতি প্রবল আগ্রহ দেখেই বাধ্য হয়েই ওকে আমি বক্সিং শেখাই। ১০ বছর বয়সে হামজা প্রথম ফাইটে অংশ নেয়। এখন পর্যন্ত ৪০টি ফাইট করেছে হামজা। এরমধ্যে একটি মাত্র ফাইটে হেরেছে। আমি ওর মধ্যে বিপুল সম্ভাবনা দেখে ঘরের মধ্যে কমপক্ষে ৫০ হাজার পাউন্ড খরচ করে রিং তৈরি করেছি। যেখানে জিম থেকে এসে সাত ঘণ্টা ওকে নিয়ে অনুশীলন করি।
৬ জুলাই ২০২২
এনএইচ