ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে কিছু খাতে সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্রিটেন। সোমবারের (১৯ মে) সমঝোতার নেপথ্যে ছিল ইউরোপের নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি ব্রিটেনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। এজন্য ইইউর সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহায়তা বৃদ্ধি এবং বাণিজ্য ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ শিথিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে লন্ডন। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
তবে ইইউর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতাকে প্রভাবশালী ব্রিটিশ রাজনীতিবিদ নাইজেল ফারাজসহ অনেকেই ভালোভাবে নেননি। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সিদ্ধান্তকে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখছেন তারা। তবে স্টারমার মনে করেন, ব্রিটিশ পর্যটকরা যখন ইউরোপে সহজতর প্রবেশাধিকার পাবেন এবং ব্রিটেনের বাণিজ্যের পথ আরও সুগম হবে, বিশ্বাসঘাতকতার তথাকথিত এসব অভিযোগ তখন হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে।
তবে ইইউর সঙ্গে ব্রিটেনের মাছ ধরার অধিকারসহ একাধিক সংবেদনশীল বিষয় উত্থাপিত হয়েছে এই চুক্তিতে, যা নিয়ে আরও আলোচনার প্রয়োজন হতে পারে এবং সেগুলো স্টারমারের জন্য রাজনৈতিক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেখানো পথ ধরেই ইইউর সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে ব্রিটেন। ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করেছেন। ফলে, বৈশ্বিক শক্তিগুলো তথাকথিত শত্রু-মিত্র সম্পর্কে বাইরে এসে বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা নিয়ে নতুনভাবে সবকিছু বিবেচনা করতে শুরু করেছে। এরই ফলশ্রুতিতে ফরাসি নেতা ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এবং অন্যান্য ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে উদ্যোগী হয়েছেন স্টারমার।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, শ্লথগতিতে চলা অর্থনীতিকে চাঙা করতে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্প্রতি কিছু চুক্তি করেছে যুক্তরাজ্য। তবে তাদের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার ইইউর সঙ্গে বাণিজ্যিক বাধা কমাতে পারলে সেটা ব্রিটিশ অর্থনীতিকে বেশি প্রভাবিত করবে। অবশ্য, ইইউর একক বাজার বা তাদের কাস্টমস ইউনিয়নে যোগদানে ব্রিটেনের আপত্তির কারণে সুযোগ-সুবিধার পরিসর সীমিত হয়ে পড়বে।
২০১৬ সালে ঐতিহাসিক এক গণভোটের মধ্য দিয়ে ইইউ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয় ব্রিটেন। অভিবাসন, সংস্কৃতি, বাণিজ্য, সার্বভৌমত্ব থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় সব ক্ষেত্রে স্পষ্ট বিভাজন ফুটে ওঠে ওই গণভোটের মাধ্যমে।
সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, ব্রেক্সিটের (ইইউর সঙ্গে ব্রিটেনের সম্পর্ক ছেদ) সিদ্ধান্ত নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ ব্রিটিশ নাগরিক এখন আফসোস করছেন। তবে ইইউতে যোগদানের বিষয়ে তারা খুব একটা উৎসাহ দেখাননি।
যুক্তরাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায়, ইইউর একক বাজারের সঙ্গে একীভূত হওয়ার পরিবর্তে বাণিজ্যিক কিছু খাতে সমঝোতার দিকে মনোযোগ দিয়েছেন স্টারমার।
সূত্রঃ রয়টার্স
এম.কে
২০ মে ২০২৫