রাশিয়ার আগ্রাসনের পর যুক্তরাজ্যে পালিয়ে আসা বহু ইউক্রেনীয় নাগরিককে আশ্রয় দিতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে হোম অফিস। যুক্তি দেওয়া হচ্ছে, ইউক্রেনের কিছু অঞ্চল এখন ‘নিরাপদ’, ফলে তারা ফিরে যেতে পারেন।
আশ্রয়ের আবেদনকারীদের অনেকেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া শহর থেকে পালিয়ে এসেছেন, যেখানে তারা এখন আর কিছুই ফিরে পাবেন না। তারা যুক্তরাজ্যে থেকে স্থায়ী বসবাস, সন্তানদের শিক্ষার নিশ্চয়তা এবং মানসিক নিরাপত্তা চাচ্ছেন।
আইন সংস্থা স্টারলিং ল জানায়, প্রতি সপ্তাহেই তারা ইউক্রেনীয় নারী ও শিশুরা আশ্রয়ের আবেদন প্রত্যাখ্যাত হওয়ার ঘটনায় সহায়তার জন্য যোগাযোগ করছেন। আপিলের দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় এই মানুষগুলো অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
বর্তমান অস্থায়ী ভিসা স্কিমে ইউক্রেনীয়রা ১৮ মাস যুক্তরাজ্যে থাকার অনুমতি পেলেও, ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা তাদের মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করছে।
ইমিগ্রেশন আইনজীবী হালিনা সেমচাক বলেন, তার ক্লায়েন্টদের মধ্যে রয়েছেন নিকোপোল শহরের এক একক মা, এক দৃষ্টিহীন ব্যক্তি এবং যুক্তরাজ্যে জন্ম নেওয়া শিশুর পিতা-মাতা। সবারই আবেদন বাতিল করা হয়েছে এই যুক্তিতে যে তারা ইউক্রেনের ‘নিরাপদ’ অঞ্চলে চলে যেতে পারেন।
২০২৪ সালের জানুয়ারিতে হোম অফিস যে নতুন নির্দেশনা জারি করে, তাতে কিয়েভ ও পশ্চিম ইউক্রেনকে ‘সাধারণভাবে নিরাপদ’ বলা হয়। এরপর থেকেই আশ্রয়ের আবেদন বাতিলের হার বেড়েছে।
সেমচাক বলেন, “এই মূল্যায়ন বাস্তবতা উপেক্ষা করছে। ইউক্রেনে এখনো যুদ্ধ চলছে, বোমা হামলা, সেনায় যোগ দেওয়ার ঝুঁকি, পরিবার বিচ্ছিন্নতা ও মানসিক আঘাত—সবই বাস্তব হুমকি।”
তিনি আরও বলেন, এই সিদ্ধান্তগুলো ইউরোপীয় মানবাধিকার কনভেনশনের ৩ ও ৮ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক, যেগুলো জীবনের নিরাপত্তা ও সম্মানজনক জীবনযাপনের অধিকার রক্ষা করে।
ওডেসা শহর থেকে পালিয়ে আসা ওলেক্সান্ডার জ্ববিত্সকির আবেদনও বাতিল হয়েছে, যদিও তার শহরে রকেট হামলায় বহু মানুষ মারা গেছে এবং পরিকাঠামো প্রায় ধ্বংস। তিনি বলেন, “আমি অবাক হয়েছি। একজন বাবা হিসেবে আমি আমার সন্তানকে যুদ্ধের দেশে ফিরিয়ে নিতে পারি না।”
তার চার বছর বয়সী ছেলে এখন ইংরেজি ভাষায় বেশি স্বচ্ছন্দ এবং যুক্তরাজ্যের স্কুলে পড়ছে। তার স্ত্রী মানসিক চিকিৎসা নিচ্ছেন। পরিবারের প্রায় সবাই যুদ্ধে মারা গেছেন বা চিকিৎসার অভাবে প্রাণ হারিয়েছেন।
“ঘুমাতে পারি না। মনে হয় মাথার ভেতর বিস্ফোরণ চলছে,” বলেন তিনি। “আমার ছেলে ইতিমধ্যেই যুক্তরাজ্যের সমাজে মানসিকভাবে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। তাকে আবার বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলা এক ধরনের নিষ্ঠুরতা।”
Refugee Council-এর বিশ্লেষক কামা পেত্রুচেঙ্কো বলেন, হোম অফিসের বর্তমান নির্দেশনা যথেষ্ট নমনীয় নয় এবং তা অঞ্চলভিত্তিক নিরাপত্তা মূল্যায়নে সীমাবদ্ধ।
সরকারি তথ্য বলছে, ২০২৩ সাল থেকে মাত্র ৪৭ জন ইউক্রেনীয়কে শরণার্থীর মর্যাদা দেওয়া হয়েছে এবং ৭২৪ জনকে মানবিক সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে।
হোম অফিসের মুখপাত্র বলেন, “পুতিনের অবৈধ হামলার পর থেকে আমরা ৩ লক্ষাধিক ইউক্রেনীয়কে আশ্রয় দিয়েছি। কারও যদি গুরুতর ঝুঁকি থাকে, তাহলে তাকে ইউক্রেনে ফেরত পাঠানো হবে না।”
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
২৭ জুন ২০২৫