ব্রেক্সিটের পর ইউরোপিয়ানরা চলে যাওয়ায় এবং তাদের কর্মসংস্থানগুলো ব্রিটিশকর্মীদের দ্বারা প্রতিস্থাপন না হওয়ায় একা হয়ে পড়ছেন যুক্তরাজ্যে কাজ করতে আসা স্ট্রেবেরি চাষীরা। বুলগেরিয়া থেকে কাজ করতে আসা স্ট্রবেরি বাছাইকারী এলেনর পোপার জানালেন, তার ইউরোপিয়ান বন্ধুরা চলে যাওয়ায় বড়ই নিসঙ্গ হয়ে গেছেন তিনি। ফলে তার পক্ষে এই কাজ চালিয়ে যাওয়া দিনকে দিন কঠিন হয়ে উঠছে।
নরফোকের মেল্টন কনস্টেবলের ১৬ হেক্টর স্ট্রবেরি ফার্মের শ্যারিংটন সাইটের একটি ছয় বার্থের ক্যারাভানে থাকতেন এলেন পোপা। এখন সেখানে কেবল চারজন রয়েছেন, বাকি সবাই ইইউ দেশগুলোতে কাজ ফেলে চলে গেছে। পোপা বলেন, আমার বন্ধুরা তাদের স্পেন বা জার্মানির বাড়িতে চলে গেছে। তাদের অনেকেই এ বছর কাজে ফিরে আসেনি।
বুলগেরিয়ার থেকে আসা পোপা দুই বছর ধরে ফল বাছাইয়ের কাজ করেন। তিনি বলে, “এটা কঠিন কাজ। আমাদের সকালে তাড়াতাড়ি ফল তুলতে হয়। গ্রীষ্মের সময় সকাল ৬টায় উঠতে হয়, এখন আমরা সাড়ে সাতটায় উঠি। এছাড়া আমেদেরকে টানেলে কাজ করতে হয়। কখনো ঠাণ্ডা, আবার কখনো গরমে কাজ করি। এমনকি, ঝোড়ো হাওয়াতেও পড়তে হয়। কখনো কখনো কাজটি বিরক্তিকর মনে হতে পারে।”
স্ট্রবেরি বাছাই একটি দক্ষ কাজ। “কীভাবে ফল বাছাই করতে হয় তা শিখতে আমার এক মাস লেগেছিল,” বলেন পোপা।
শ্যারিংটনের বাগানে মাটিতে স্ট্রবেরি চাষ হয় এবং বাছাইকারীদের বিশেষ দক্ষতার কারণে ভাল মানের পণ্য উতপাদন হয়। অনেকে আবার টেবিলের টবে স্ট্রবেরি চাষ করে যেগুলো বাছাই করা সহজ, কম স্বাদযুক্ত। শ্যারিংটনে বাছাই করা প্রতিটি স্ট্রবেরি আবার সুপারভাইজার পরীক্ষা করেন এববগ কোয়ালিটি কন্ট্রোল নিশ্চিত করেন। এখনও স্ট্রবেরি বাছাইয়ের মেশিন উদ্ভাবন না হওয়ায় প্রতিটি স্ট্রবেরি হাতে বাছাই করতে হয়।
সাধারণত, দিনে আট ঘন্টা কাজ করতেন পোপা। কিন্তু এখন, বাগানে শ্রমিকের ঘাটতির কারণে, এটি প্রায়ই ১০ ঘণ্টার মতো কাজ করতে হয়।
অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি বলেন, কাজ শেষে আপনি ক্লান্ত বোধ করবেন। আপনার পিঠ ব্যথা হয়ে যাবে। বৃষ্টির সময় কাজ করা কঠিন, গরমের দিনেও অনেক কষ্টকর।
পোপার দুটি সন্তান, একটি ছেলে ও একটি মেয়ে। সন্তানদের খুব মিস করলেও তিনি এই কাজে থেকে গেছেন। কারণ এখানে বেতন ভালো। কিন্তু এই একাকিত্ব বিরক্তিকর লাগে তার কাছে। সন্ধ্যায় বাগানের কর্মীদের সঙ্গে তিনি ক্যারাভানে তাস খেলেন বা টিভি দেখেন। মাঝে মাঝে সৈকতে বেড়াতে যাওয়া হয়।
পোপার নিয়োগদাতা, ৬৪ বছর বয়সী সাইমন টার্নার মনে করেন ব্রেক্সিটের কারণেই এই ভয়ংকর পরিস্থিতির সৃষ্ট। তিনি গার্ডিয়ানকে বলেন, “ব্রেক্সিট আমাদের হত্যা করেছে। এটা আমাদের ধ্বংস করতে যাচ্ছে। আমার ব্যবসা কোভিড থেকে বেঁচে গেছে, কিন্তু আমি মনে করি না আমরা ব্রেক্সিট অতিক্রম করব।”
২২ নভেম্বর ২০২১
এনএইচ