যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচির সঙ্গে এক বৈঠকে বসার পরিকল্পনা করছেন। পাঁচদিন ধরে ইসরায়েলের চলমান বোমাবর্ষণের পর এটি একটি সম্ভাব্য কূটনৈতিক অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এই বৈঠকটি শুক্রবার জেনেভায় অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে, তবে এখনো তেহরানের চূড়ান্ত সম্মতি মেলেনি। সম্মতি মিললে এটি হবে ইসরায়েল কর্তৃক ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার পর প্রথম সরাসরি কূটনৈতিক বৈঠক।
এ সপ্তাহের শুরুতে আরাগচি এই তিন ইউরোপীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বললেও মার্কিন মধ্যপ্রাচ্য দূত স্টিভ উইটকফের সঙ্গে সাক্ষাৎ প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বলেছেন, ইসরায়েলের আক্রমণ যুক্তরাষ্ট্রের অনুমোদনে হয়েছে এবং এই পরিস্থিতিতে কোনো মার্কিন কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনার পরিবেশ নেই।
জেনেভা বৈঠকের আগে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে বৈঠক করবেন। আলোচনায় মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান পরিস্থিতি গুরুত্ব পাবে। বৈঠকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান কায়া কাল্লাসও অংশ নেবেন।
শুক্রবারের বৈঠকে মূল আলোচ্য বিষয় হবে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি হ্রাস কিংবা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা নিয়ে। এই আলোচনাগুলো যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সমন্বয়ে হবে।
বুধবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক বার্তায় আরাগচি বলেন, ইরান আত্মরক্ষার্থে কাজ করছে এবং কখনো পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের চেষ্টা করেনি। তিনি বলেন, “আমরা বরাবরের মতো কূটনীতি নিয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তবে ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনার প্রশ্নই আসে না।”
অন্যদিকে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একাধিক সামাজিক যোগাযোগ বার্তায় ইরানের ‘নির্বিশেষ আত্মসমর্পণ’ দাবি করে তেহরান খালি করার আহ্বান জানিয়ে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা আরও জটিল করে তুলেছেন।
ইউরোপীয় তিন দেশ — যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি — বরং শান্তিপূর্ণ কূটনীতির পক্ষে অবস্থান নিয়েছে এবং ইরানে বাইরের হস্তক্ষেপ বা শাসন পরিবর্তনের পক্ষ নেয়নি। তবে ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারকে আন্তর্জাতিক আইনের আলোকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
এই তিন দেশ ২০১৫ সালের ইরান পারমাণবিক চুক্তির স্বাক্ষরকারী, যেখানে ইরানকে স্বল্পমাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণের আওতায়। ট্রাম্প ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রকে এই চুক্তি থেকে প্রত্যাহার করে নেন এবং পরের বছর ইরান আংশিকভাবে চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ায়।
ইউরোপীয় কোনো দেশ এখন পর্যন্ত ওই চুক্তি থেকে নিজেদের প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়নি। তবে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের অভ্যন্তরীণ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সম্পূর্ণভাবে বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছে।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
১৯ জুন ২০২৫