ইসরায়েলে হামাসের আকস্মিক হামলা এবং এর প্রতিশোধ নিতে ইসরায়েলের পাল্টা হামলা নিয়ে সারা বিশ্বের নজর এখন মধ্যপ্রাচ্যের দিকে। এই পরিস্থিতিতে ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে পশ্চিমা বিশ্বের মনোযোগ সরে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর এরকমটা হলে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে রাশিয়া।
রকেট হামলার পাশাপাশি স্থল ও সমুদ্র পথে ইসরায়েলে ঢুকে হামলা চালিয়েছে হামাস যোদ্ধারা। যে ব্যাপক মাত্রায় এই হামলা হয়েছে তাতে বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, এর জন্য হামাসকে গোপনে মাসের পর মাস প্রস্তুতি নিতে হয়েছে। আকস্মিক এই হামলা চতুর্থ আরব ইসরায়েল যুদ্ধের স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছে। ১৯৭৩ সালে মিসর ও সিরিয়া আকস্মিকভাবে ইসরায়েলে হামলার মাধ্যমে ওই যুদ্ধ শুরু করেছিল। এর পর ইসরায়েলে এত ব্যাপক হামলা আর হয়নি।
এই পরিস্থিতিতে রাশিয়া যেভাবে লাভবান হতে পারে সে ব্যাপারে একটি বিশ্লেষণ হাজির করেছে ওয়াশিংটনভিত্তিক থিংকট্যাংক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার (আইএসডব্লিউ)। তারা বলেছে, রাশিয়া চাইবে ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বের নজর যেন মধ্যপ্রাচ্যের দিকে ঘুরে যায়। লক্ষ্য হাসিলে রাশিয়া ইতোমধ্যে তাদের প্রচার কৌশল ব্যবহার করতে শুরু করেছে।
আইএসডব্লিউ বলছে, ইসরায়েলে হামলার জন্য পশ্চিমাদের দোষারোপ করছে রাশিয়া। ক্রেমলিনের ভাষ্য হলো, পশ্চিমা বিশ্ব মধ্যপ্রাচ্যের সংকট অবহেলা করে ইউক্রেনকে সমর্থন দেওয়ার দিকেই বেশি ব্যস্ত ছিল।
রাশিয়ার পক্ষে জনমত তৈরিতে সক্রিয় রুশ সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার সার্গেই মারদান বলেছেন, ইসরায়েলে সংঘাত বাঁধায় লাভবান হবে রাশিয়া। তিনি তার টেলিগ্রাম চ্যানেলে লিখেছেন, বিশ্ববাসীর নজর কিছুদিনের জন্য ইউক্রেন থেকে ঘুরে গিয়ে আবার একবার মধ্যপ্রাচ্যের আগুন নেভাতে ব্যস্ত হয়ে পড়বে।
আইএসডব্লিউ বলেছে, পশ্চিমা বিশ্বকে লক্ষ্য করে এই বয়ান প্রচারের মাধ্যমে তিন দিক থেকে লাভবান হবে রাশিয়া। প্রথমত, ইউক্রেনে সামরিক সহায়তার দেওয়ার ব্যাপারে পাশ্চাত্যে যে জনমত রয়েছে তাতে ফাটল ধরতে পারে। দ্বিতীয়ত, ইউক্রেন আন্তর্জাতিক সমর্থন হারাবে বলে প্রচারের মাধ্যমে ইউক্রেনের ভেতরে হতাশা তৈরির চেষ্টা করা হবে। তৃতীয়ত, রাশিয়ার জনগণকে এই বলে আশ্বস্ত করা হবে যে আন্তর্জাতিক সমাজ ইউক্রেন যুদ্ধ উপেক্ষা করবে।
ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর ওয়াশিংটন ও এর মিত্ররা ইসরায়েলের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। কিন্তু ভ্লাদিমির পুতিন সেরকম কোনো নিঃশর্ত সমর্থন দিয়ে ইসরায়েলের পাশে থাকার কথা বলেননি।
অন্যদিকে, অবিলম্বে সংঘাত বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে ক্রেমলিন বলেছে, ‘আমরা ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলি পক্ষকে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন, সহিংসতা পরিহার, প্রয়োজনীয় সংযম প্রদর্শন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তায় মধ্যপ্রাচ্যে একটি বিস্তৃত, দীর্ঘস্থায়ী এবং দীর্ঘ প্রতীক্ষিত শান্তি প্রতিষ্ঠায় একটি সমঝোতা প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানাচ্ছি।’
এর মধ্যেই ইউক্রেন নিয়ে হুঁশিয়ার করেছেন পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেজ দুদা। তিনি বলেছেন, হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘাতে রাশিয়া লাভবান হচ্ছে। কারণ এটি ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন থেকে আন্তর্জাতিক মনোযোগ কেড়ে নেবে এবং এর ফলে ইউরোপে নতুন করে শরণার্থী আসা শুরু হতে পারে।
তিনি বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্য থেকে শরণার্থীদের আরেকটি ঢেউ আসতে পারে, যা ইউরোপে আঘাত হানবে।’
এম.কে
১০ অক্টোবর ২০২৩