যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারকে একটি ঐতিহাসিক চিঠি দিয়েছেন ৮০০-র বেশি শীর্ষস্থানীয় আইনজীবী, বিচারক ও একাডেমিক। চিঠিতে তারা স্পষ্ট করে বলেছেন, আন্তর্জাতিক আইনি বাধ্যবাধকতা পূরণে যুক্তরাজ্যের উচিত ইসরায়েল সরকার ও এর মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং জাতিসংঘ থেকে দেশটির সদস্যপদ স্থগিতের বিষয়টি বিবেচনা করা।
চিঠিতে সাবেক সুপ্রিম কোর্ট বিচারপতি লর্ড সাম্পশন, লর্ড উইলসন, আপিল বিভাগের বিচারপতি এবং ৭০ জনের বেশি কিংস কাউন্সিল (KC) সহ বরেণ্যরা অভিযোগ করেন, ফিলিস্তিনে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে এবং তা গণহত্যার পর্যায়ে পৌঁছাতে চলেছে।
ইসরায়েলি অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোত্রিচের ‘গাজা নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার’ মন্তব্য তুলে ধরে চিঠিতে বলা হয়েছে, এটি সরাসরি গণহত্যার ইঙ্গিত বহন করে। আইনজীবীদের মতে, যুক্তরাজ্যসহ প্রতিটি রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো গণহত্যা প্রতিরোধ ও শাস্তি নিশ্চিত করা।
পররাষ্ট্রসচিব ডেভিড ল্যামির ইসরায়েলের সঙ্গে নতুন ট্রেড চুক্তি স্থগিতের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানানো হলেও, চিঠিতে এটিকে অপর্যাপ্ত বলা হয়েছে। তারা দ্রুত আরও কার্যকর পদক্ষেপ দাবি করেছেন—বাণিজ্যিক সম্পর্ক পর্যালোচনা, ২০৩০ রোডম্যাপ স্থগিত এবং সামরিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ।
চিঠিতে ইসরায়েলকে জাতিসংঘের সাহায্য সংস্থা UNRWA নিষিদ্ধ করার ঘটনাকে ‘জাতিসংঘ ব্যবস্থার ওপর হামলা’ হিসেবে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, এটি গোটা বিশ্বব্যবস্থাকেই চ্যালেঞ্জ করছে। তাই জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হিসেবে যুক্তরাজ্যের উচিত সদস্যপদ স্থগিত করার প্রক্রিয়া শুরু করা।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ৭ অক্টোবর ২০২৩ থেকে ইসরায়েলি হামলায় ৫৩,০০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে রয়েছে বহু শিশু ও নারী। খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা সীমিত হওয়ায় মানবিক বিপর্যয় আরও গভীরতর হচ্ছে।
জার্মানির চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ মার্জ পর্যন্ত এই বর্বরতাকে “অযৌক্তিক” বলে অভিহিত করেছেন।
আইসিসি নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। চিঠিতে যুক্তরাজ্যকে অনুরোধ করা হয়েছে তা বাস্তবায়নে প্রস্তুতি নিতে।
সাবেক বিচারপতি স্যার অ্যালান মোসেস বলেন, “শুধু মুখে আইনের শাসনের কথা বললেই হবে না, তা প্রমাণ করতে নিতে হবে বাস্তব পদক্ষেপে।”
চিঠিটি এমন এক সময় এসেছে, যখন প্রধানমন্ত্রী স্টারমার ও তার দল আন্তর্জাতিক আইন মানা নিয়ে জনমতের চাপের মুখে পড়েছেন। এখন দেখার বিষয়, যুক্তরাজ্য আদৌ আইনের শাসনের পক্ষে দাঁড়ায় কিনা।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
২৭ মে ২০২৫