ব্রেক্সিট চুক্তি নিয়ে বিরোধ নিরসনে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ও ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন নতুন একটি চুক্তি করতে একমত হয়েছেন। দাবি করা হচ্ছে, ‘উইন্ডসর ফ্রেমওয়ার্ক’ নামের নতুন এ চুক্তি উত্তর আয়ারল্যান্ড প্রোটোকল কার্যকর করার ক্ষেত্রে বিদ্যমান বাঁধাগুলো দূর করবে ও ইইউয়ের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সম্পর্কে নতুন অধ্যায় শুরু করবে।
ব্রিটিশ গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, পশ্চিম লন্ডনের একটি হোটেলে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুরা ফন ডার লিনের সঙ্গে বৈঠক করেন সুনাক। বৈঠক শেষে উইন্ডসরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন সুনাক ও ফন ডার লিন।
সেসময় ঋষি সুনাক বলেন, আমি আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি, আমরা বড় ধরনের অগ্রগতি অর্জন করতে পেরেছি। উত্তর আয়ারল্যান্ডের বাণিজ্য নিয়ম সহজ করার বিষয়ে উভয় পক্ষ একমত হয়েছে। পাশাপাশি তারা কী নিয়ম অনুসরণ করবে, তা ঠিক করার পর্যাপ্ত ক্ষমতা প্রাদেশিক সরকারের হাতে দেওয়া হয়েছে। এটা আমাদের সম্পর্কের নতুন একটি অধ্যায়ের সূচনা।
আয়ারল্যান্ড আলাদা একটি রাষ্ট্র হলেও, উত্তর আয়ারল্যান্ড এখনো যুক্তরাজ্যের অংশ। আয়ারল্যান্ড ও উত্তর আয়ারল্যান্ডের মধ্যে নিবিড় বাণিজ্য সম্পর্ক রয়েছে। এমনকি দুই অঞ্চলের মধ্যে কোনো সীমান্তও নেই।
তবে আয়ারল্যান্ড ইইউর সদস্য হওয়ায় একক বাণিজ্য নীতি মেনে চলে। যুক্তরাজ্য ইইউর সদস্য থাকা অবস্থায় একক বাণিজ্য নীতিতে কোনো সমস্যা ছিল না। কিন্তু, ইইউ থেকে বের হয়ে যাওয়ায় অর্থাৎ ব্রেক্সিটের পর আয়ারল্যান্ড ও উত্তর আয়ারল্যান্ডের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক কী হবে তা নিয়ে সংশয় দেখা দেয়।
ব্রেক্সিটের ক্ষেত্রে যেসব বিষয় নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্ন ওঠে তার মধ্যে অন্যতম ছিল, উত্তর আয়ারল্যান্ডের জন্য বাণিজ্য নীতি কী হবে ও দুই আয়ারল্যান্ডের মধ্যে সীমান্ত নির্ধারিত হবে কি না। সীমান্ত নির্ধারিত হলে সেটা আবার ১৯৯৮ সালে হওয়া যে শান্তি চুক্তি উত্তর আয়ারল্যান্ডে দীর্ঘ তিন দশকের সাম্প্রদায়িক ও রাজনৈতিক সহিংসতার অবসান ঘটিয়েছিল সেটি ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল।
উত্তর আয়াল্যান্ড বিষয়ে ইইউর সঙ্গে নতুন চুক্তি করতে পারা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ঋষি সুনাকের বড় একটি অর্জন হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
এদিকে, ব্রিটিশ গণমাধ্যম বলছে, উত্তর আয়ারল্যান্ড বিষয়ে ইইউ’র সঙ্গে নতুন চুক্তি ঋষি সুনাকের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। কারণ, তার দল কনজারভেটিভ পার্টিই ব্রেক্সিটের পক্ষে বেশি প্রচার চালিয়েছে। তাই ইইউর সঙ্গে সমঝোতার এ সম্পর্ক কনজারভেটিভ পার্টির নেতাদের পছন্দ নাও হতে পারে।
নানা সংকটের কারণে যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা হয়ে রয়েছে কনজারভেটিভ পার্টি৷ জনমত জরিপে বিরোধী লেবার পার্টি অনেক এগিয়ে৷ ব্রেক্সিট চুক্তির সংশোধনকে সাফল্য হিসেবে তুলে ধরে জনপ্রিয়তার ব্যবধান কমাতে চান দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী৷
এম.কে
০১ মার্চ ২০২৩