TV3 BANGLA
ফিচার

এলো এআই স্টেথোস্কোপঃ ১৫ সেকেন্ডে হৃদরোগ শনাক্তে নতুন দিগন্ত

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) সংযোজিত নতুন প্রজন্মের স্টেথোস্কোপ হৃদরোগ শনাক্তে বিপ্লব ঘটাতে যাচ্ছে। মাত্র ১৫ সেকেন্ডে এটি হার্ট ফেইলিওর, হার্টের ভালভের রোগ ও অস্বাভাবিক হৃৎস্পন্দন নির্ণয় করতে সক্ষম। ১৮১৬ সালে প্রচলিত স্টেথোস্কোপ আবিষ্কারের পর ২০০ বছরের বেশি সময় ধরে চিকিৎসকদের প্রধান হাতিয়ার ছিল এই যন্ত্র। এবার গবেষকেরা তার আধুনিক রূপ উপহার দিলেন।

লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজ এবং ইম্পেরিয়াল কলেজ হেলথকেয়ার এনএইচএস ট্রাস্টের গবেষকেরা এই উন্নত স্টেথোস্কোপ তৈরি করেছেন। যন্ত্রটি মানুষের কানে শোনা যায় না এমন সূক্ষ্ম হৃৎস্পন্দন ও রক্তপ্রবাহের পরিবর্তন বিশ্লেষণ করতে পারে। একই সঙ্গে এটি দ্রুত ইসিজি সম্পন্ন করে। আকারে একটি তাসের সমান এই যন্ত্র রোগীর বুকে রেখে বৈদ্যুতিক সংকেত ও রক্তপ্রবাহের শব্দ রেকর্ড করে।

রেকর্ড করা তথ্য সরাসরি ক্লাউডে পাঠানো হয়, যেখানে এআই অ্যালগরিদম বিশ্লেষণ চালায়। এর ফলে এমন সূক্ষ্ম অসংগতি শনাক্ত করা সম্ভব হয়, যা মানবচোখ বা প্রচলিত স্টেথোস্কোপে ধরা সম্ভব নয়। পরীক্ষার মাত্র ১৫ সেকেন্ডের মধ্যেই ফলাফল চিকিৎসকের স্মার্টফোনে চলে আসে। এতে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব হয়।

এই নতুন প্রযুক্তি উপস্থাপন করা হয়েছে স্পেনের মাদ্রিদে অনুষ্ঠিত ইউরোপিয়ান সোসাইটি অব কার্ডিওলজির বার্ষিক কংগ্রেসে। গবেষকেরা জানিয়েছেন, দ্রুত রোগ শনাক্তের মাধ্যমে জরুরি ওষুধ প্রয়োগে চিকিৎসকেরা আরও কার্যকর ভূমিকা নিতে পারবেন।

যুক্তরাজ্যের ২০০টি জেনারেল হাসপাতালের সার্জারিতে প্রায় ১২ হাজার রোগীর ওপর এই যন্ত্রের পরীক্ষা চালানো হয়েছে। দেখা গেছে, এআই স্টেথোস্কোপে হার্ট ফেইলিওর শনাক্ত হওয়ার সম্ভাবনা দ্বিগুণ, অ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশন শনাক্ত হওয়ার সম্ভাবনা তিনগুণ এবং হার্ট ভালভের রোগ শনাক্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় দ্বিগুণ বেশি।

ইম্পেরিয়াল কলেজের ন্যাশনাল হার্ট অ্যান্ড লাং ইনস্টিটিউটের ড. প্যাট্রিক ব্যাশটিগার বলেন, “স্টেথোস্কোপের নকশা ২০০ বছর ধরে অপরিবর্তিত ছিল। কিন্তু এখন তা বদলে গেছে। মাত্র ১৫ সেকেন্ডের একটি পরীক্ষার পর এআই দ্রুত ফলাফল দিতে পারে।”

তবে গবেষকেরা সতর্ক করে বলেছেন, যন্ত্রটির কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ভুল রোগ নির্ণয়ের ঝুঁকি এড়িয়ে চলতে এটি শুধুমাত্র হৃদরোগের লক্ষণ আছে—এমন সন্দেহভাজন রোগীর ক্ষেত্রে ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সুস্থ মানুষের রুটিন চেকআপের জন্য এটি নয়।

ড. মিহির কেলশিকর বলেন, “হার্ট ফেইলিওরে আক্রান্ত অনেক রোগী তখনই শনাক্ত হন, যখন তারা গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে আসেন। এই যন্ত্র সেই পরিস্থিতি বদলে দিতে পারে। সাধারণ চিকিৎসকেরাও সহজে ও দ্রুত রোগ শনাক্ত করতে পারবেন।”

নতুন এআই স্টেথোস্কোপ কেবল রোগী বাঁচাতেই নয়, চিকিৎসা খরচ কমাতেও সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে একে ভবিষ্যতের একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

সূত্রঃ ইকো হেলথ

এম.কে
০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আরো পড়ুন

এ কেমন দেশ, যেখানে ডিভোর্স নিলেই ৬ মাসের জেল!

বিলাসী ক্রুজে বিশ্বভ্রমণ

নিউজ ডেস্ক

হাঁসের মাংস থেকে দূরে থাকবেন যারা