TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

‘ওয়ান ইন, ওয়ান আউট’ নীতিতে বিতর্কঃ অসুস্থ ও নির্যাতিতদেরও ফেরত পাঠাচ্ছে যুক্তরাজ্য

‘ওয়ান ইন, ওয়ান আউট’ চুক্তির আওতায় যুক্তরাজ্য থেকে ফ্রান্সে ফেরত পাঠানো প্রথম দলে আধুনিক দাসত্বের সম্ভাব্য শিকার, মানসিকভাবে ভেঙে পড়া ব্যক্তি এবং যাদের পরিবারের সদস্য যুক্তরাজ্যে আছেন—এমন আশ্রয়প্রার্থীরাও রয়েছেন বলে নতুন এক প্রতিবেদনে জানা গেছে।

মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যানস ফর রাইটস নেটওয়ার্ক (HFRN) জানিয়েছে, তারা অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে যুক্তরাজ্যে আসা এবং পরে ফ্রান্সে ফেরত পাঠানো কিছু আশ্রয়প্রার্থীর সাক্ষাৎকার নিয়েছে। এদের সবাইকে প্যারিসের রেললাইন সংলগ্ন একটি অস্থায়ী তাঁবু শিবিরে রাখা হয়েছিল।

সংস্থাটি তাদের গবেষণা প্রকাশ করেছে গার্ডিয়ানের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের পরপরই, যেখানে জানা যায়—এক ইরানি আশ্রয়প্রার্থীকে ফ্রান্সে পাঠানোর পর মাত্র ২৯ দিনের মধ্যে তিনি আবার যুক্তরাজ্যে ফিরে এসেছেন এবং বর্তমানে একটি ইমিগ্রেশন ডিটেনশন সেন্টারে আটক রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে মানবপাচারের শিকার হওয়ার দাবি তদন্তে পাঠানো হয়েছে।

মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, ফ্রান্সে ফেরত পাঠানো আরও অনেক আশ্রয়প্রার্থী সেখানকার খারাপ পরিস্থিতির কারণে পুনরায় যুক্তরাজ্যে ফিরে আসার ঝুঁকি নিচ্ছেন। তাদের মতে, ফ্রান্সে আশ্রয়প্রার্থীদের থাকার ও চিকিৎসার ব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক।

৬ আগস্ট কার্যকর হওয়া যুক্তরাজ্য-ফ্রান্সের “ওয়ান ইন, ওয়ান আউট” চুক্তি অনুযায়ী, ছোট নৌকায় ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে যুক্তরাজ্যে প্রবেশকারীদের দ্রুত ফ্রান্সে ফেরত পাঠানো হবে। বিনিময়ে যুক্তরাজ্য সমপরিমাণ শরণার্থীকে নিরাপদ ও বৈধ পথে গ্রহণ করবে।

HFRN জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ২৪ জন আশ্রয়প্রার্থীকে ফ্রান্সে ফেরত পাঠানো হয়েছে, এবং তাদের মধ্যে ১২ জনের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। তাদর মধ্যে অন্তত তিনজনের পরিবারের সদস্য যুক্তরাজ্যে রয়েছেন—দুজনের বোন ও একজনের খালা। একজন জানান, তিনি দীর্ঘ এক দশকেরও বেশি সময় পর তার বোনের সঙ্গে ডিটেনশন সেন্টারে দেখা করেছিলেন, কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই তাকে ফ্রান্সে পাঠানো হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চারজন ফেরত পাঠানো আশ্রয়প্রার্থী আধুনিক দাসত্বের শিকার—দুজন লিবিয়ায়, একজন ইথিওপিয়ায় এবং একজন ইয়েমেনে। তাদের মধ্যে একজন এক চোখে অন্ধ, দুজন মারাত্মক বিষণ্নতায় ভুগছেন এবং একজন আত্মহত্যার চিন্তায় আক্রান্ত।

HFRN জানিয়েছে, “এই মানুষগুলো গভীর মানসিক চাপ ও বিভ্রান্তির মধ্যে ছিলেন। অনেকে তাদের আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি, আবার কেউ কেউ জানতেন না তাদের পক্ষে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।” সংস্থাটি বলেছে, এদের মধ্যে অনেকেরই মামলার তথ্য এতটাই সংবেদনশীল যে তাদের ফেরত পাঠানো উচিত ছিল না।

প্রতিবেদনে আরও দাবি করা হয়েছে, হোম অফিস তাদের মধ্যে কয়েকজনের নির্যাতনের বর্ণনা বা দাসত্বের অভিযোগ যথাযথভাবে তদন্ত না করেই ফেরত পাঠিয়েছে।

হোম অফিসের তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহেই ৪২ জন আশ্রয়প্রার্থীকে ফ্রান্সে ফেরত পাঠানো হয়েছে, বিনিময়ে ২৩ জনকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছে। প্রথমে বাণিজ্যিক ফ্লাইটে পাঠানো হলেও এখন চার্টার্ড প্লেনে স্থানান্তর করা হচ্ছে। আরও অন্তত ১০ জনকে গত বুধবার ফ্রান্সে পাঠানো হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

গ্যাটউইক ডিটেনি ওয়েলফেয়ার গ্রুপ জানিয়েছে, “ফ্রান্সে পাঠানো অনেকেই জানেন না কীভাবে আশ্রয়ের আবেদন করতে হয় বা আইনগত সহায়তা পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে উদ্বেগ, বিভ্রান্তি এবং আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে।”

সংস্থাটি জানিয়েছে, ফ্রান্সে থাকা অনেকে চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না, পাচারকারীদের ভয়ে আতঙ্কে রয়েছেন এবং অনেকেই হতাশার কারণে আবারও প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে অবৈধ পথে যুক্তরাজ্যে ফেরার পরিকল্পনা করছেন।

একজন আশ্রয়প্রার্থী, যিনি সম্প্রতি প্যারিস থেকে মার্সেই-এ স্থানান্তরিত হয়েছেন, বলেন, “আমরা জানি না আমাদের সঙ্গে কী ঘটছে। আমাকে ফরাসি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করার তারিখ দেওয়া হয়েছে, কিন্তু কেউ বলেনি কেন।”

তিনি জানান, “আমাদের মধ্যে অনেককে সতর্ক করা হয়েছে, আগের ইউরোপীয় দেশে আঙুলের ছাপ থাকলে সেখানেও ফেরত পাঠানো হতে পারে। তাই কেউ কেউ আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে রাস্তায় ঘুমাচ্ছেন।”

হোম অফিসকে এই বিষয়ে মন্তব্যের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে, তবে তারা এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে

আরো পড়ুন

যুক্তরাজ্যে পার্কে ৮০ বছর বয়সী বৃদ্ধকে হত্যার দায়ে দুইজনকে দোষী সাব্যস্ত

প্যালেস্টাইন অ্যাকশনকে ‘সন্ত্রাসী’ ঘোষণার পথে যুক্তরাজ্য, নিন্দা ঝড় রাজনৈতিক মহলে

যুক্তরাজ্যের ইপিংয়ে অভিবাসী হোটেল ঘিরে তাণ্ডবঃ পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে উত্তাল রাত

নিউজ ডেস্ক