21.4 C
London
August 8, 2025
TV3 BANGLA
বাংলাদেশ

কলকাতায় গোপনে আওয়ামী লীগের ‘পার্টি অফিস’, শীর্ষ নেতৃত্বের কার্যক্রম ভারতে

কলকাতার লাগোয়া এক উপনগরীর একটি বাণিজ্যিক কমপ্লেক্সের অষ্টম তলায় গোপনে চালু হয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ‘পার্টি অফিস’। বাইরে কোনো সাইনবোর্ড বা রাজনৈতিক পরিচিতি নেই, এমনকি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বা শেখ হাসিনার ছবিও রাখা হয়নি সচেতনভাবে। অফিসের আকার ৫০০-৬০০ বর্গফুট, যেখানে একসঙ্গে ৩০-৩৫ জন গাদাগাদি করে বৈঠক করতে পারেন। বড় সভা হলে ভাড়া নেওয়া হয় রেস্তোরাঁ বা ব্যাংকোয়েট হল।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর ভারতে আশ্রিত আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতারা প্রথমে ব্যক্তিগত বাসায় বা অস্থায়ী ভাড়া ঘরে বৈঠক করতেন। পরে নির্দিষ্ট স্থায়ী জায়গার প্রয়োজন অনুভব করায় এই বাণিজ্যিক অফিস নেওয়া হয়। এখানকার চেয়ারে-টেবিলও আগের ভাড়াটিয়ার ফেলে যাওয়া আসবাব।

কলকাতা ও আশপাশের এলাকায় বর্তমানে আওয়ামী লীগের প্রায় ৮০ জন বর্তমান সাংসদ, ১০-১২ জন সাবেক সাংসদ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সভাপতি-সম্পাদক, মেয়রসহ শীর্ষ নেতৃত্বের প্রায় ২০০ জন বসবাস করছেন। কেউ সপরিবারে, কেউবা কয়েকজন মিলে ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকেন। এর বাইরে প্রাক্তন সরকারি কর্মকর্তা, পুলিশ ও সেনা কর্মকর্তারাও রয়েছেন। অনেক নেতা এখান থেকে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা বা অস্ট্রেলিয়ায় চলে গেছেন।

যদিও ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন দাবি করেছেন “ভারত থেকে দল চলছে” এই ধারণা পুরোপুরি সঠিক নয়, তবুও শেখ হাসিনা ও শীর্ষ নেতাদের বড় অংশ ভারতে থাকায় সেখান থেকেই রাজনৈতিক নির্দেশনা আসছে। ৩১ জুলাই দিল্লিতে শেখ হাসিনা কিছু শীর্ষ নেতার সঙ্গে বৈঠক করেন, যদিও বিস্তারিত প্রকাশ হয়নি। বাকি সময় ভার্চুয়াল মাধ্যম—হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রাম, লাইভ অনুষ্ঠান—দিয়েই সাংগঠনিক কার্যক্রম চলছে।

নেতারা জানিয়েছেন, অর্থের যোগান আসছে দেশ-বিদেশের শুভাকাঙ্ক্ষী, নেতা-কর্মী ও পরিবারের কাছ থেকে। অনেকে জীবনযাত্রায় বড় পরিবর্তন এনেছেন—ঢাকায় গাড়ি ছাড়া চলা যেত না, এখন বাস, ট্রেন, মেট্রো বা বাইকে চলাচল করছেন। কয়েকজন মিলে ট্যাক্সি ভাড়া ভাগাভাগি করাও সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

দলের মহাসচিব ওবায়দুল কাদের বলেন, “রাজনৈতিক লড়াইয়ের দিনক্ষণ ঠিক থাকে না, কিন্তু লড়াই ছাড়া উপায়ও নেই।” তিনি বর্তমান সরকারকে এক বছরের মধ্যে অর্থনীতি, বিচারব্যবস্থা ও প্রশাসনে ‘ব্যর্থ’ বলে অভিহিত করে দাবি করেন—মানুষ বলছে হাসিনার সময়েই ভালো ছিল।

শীর্ষ নেতৃত্বের ব্যাখ্যা, দেশে থাকলে হয়তো জেলে যাওয়া বা জীবননাশের আশঙ্কা থাকত, ফলে দল সংগঠিত করা সম্ভব হত না। তারা ১৯৭১ সালের প্রবাসী সরকারের উদাহরণ টেনে বলেন, বিদেশ থেকেই নেতৃত্ব দেওয়ার ঐতিহাসিক নজির আছে। তবে সামাজিক মাধ্যমে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—যখন মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা দেশে নির্যাতিত, তখন শীর্ষ নেতৃত্ব বিদেশে কেন?

সূত্রঃ বিবিসি

এম.কে
০৮ আগস্ট ২০২৫

আরো পড়ুন

দক্ষিণ এশিয়ার ডিজিটাল সুপারপাওয়ার হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ

দেশের সব উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকে অপসারণ

গুলশানে সমন্বয়ক পরিচয়ে চাঁদাবাজি, গ্রেপ্তার ৫