সিলেট শহরের চৌহাট্টা পয়েন্টে পাওয়া গিয়েছিল মোটরসাইকেল, তাতে রাখা ছিল টাইলস কাটার মেশিন। সেই দিন হতে সিলেট শহরে উৎকণ্ঠার শুরু। পরে ঘটনা জানা যায়, একজন পুলিশ সার্জেন্টের মোটরসাইকেলে কেউ একটি ব্যাগের ভেতর করে মেশিনটি রেখেছিল।
ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই গত মঙ্গলবার (১১ আগস্ট) সিলেটের মিরাবাজার, টুকের বাজার, দক্ষিণ সুরমার বিভিন্ন স্থান হতে গ্রেফতার করা হয় ৫ জঙ্গি। জানা যায়, তারা সিলেট বিভাগের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে তাদের পরিচয় বলা হয়- শেখ সুলতান মোহাম্মদ নাইমুজ্জামান (২৬), সানাউল ইসলাম সাদি (২৮), রুবেল আহমেদ (২৮), আব্দুর রহিম জুয়েল (৩০) ও সায়েম মির্জা (২৪)। এসময় তাদের হেফাজত থেকে বোমা তৈরির সরঞ্জাম, ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
বুধবার (১২ আগস্ট) বেলা ১২ টায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসি) মো. মনিরুল ইসলাম বিপিএম (বার), পিপিএম (বার)।
ব্রিফিংয়ে সিটিটিসির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, গ্রেফতাররা নব্য জেএমবির সামরিক শাখার সদস্য। তারা কথিত আইএস এর দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ঈদুল আযহার পূর্বে দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলার পরিকল্পনা নিয়েছিল। এর অংশ হিসেবে তারা ২৪ জুলাই ঢাকা পল্টনে পুলিশ চেকপোস্টের পাশে, ৩১ জুলাই নওগাঁ জেলার সাপাহার এলাকায় হিন্দু ধর্মালম্বিদের মন্দিরে বোমা হামলা করে। একইসঙ্গে ২৯ জুলাই হযরত শাহজালাল (রহঃ) মাজার শরীফে আরেকটি হামলার পরিকল্পনা নিয়েছিল। এর মধ্যে তারা পল্টন ও সাপাহারে বোমা বিস্ফোরণ ঘটাতে সক্ষম হয়। কিন্তু সিলেটে পুলিশের কড়া নজরদারির কারণে ব্যর্থ হয়।
মো. মনিরুল ইসলাম আরও জানান, জঙ্গিরা যে তথ্য দিয়েছে তা থেকে জানা যায়, নব্য জেএমবির শুরা সদস্যরা শেখ সুলতান মোহাম্মদ নাইমুজ্জামানের নেতৃত্বে তারা সিলেটের শাপলাবাগের একটি বাসায় কম্পিউটার প্রশিক্ষণের আড়ালে সামরিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলো। আটকদের মধ্যে শেখ সুলতান মোহাম্মদ নাইমুজ্জামান কফি শপে (বারিস্তা) কপি মেকার হিসেবে কাজ করে, ২০১৯ সালে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্র বিজ্ঞানে অনার্স সম্পন্ন করে। সে ছাত্রজীবনে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সক্রিয় সদস্য ছিলো। সে সামরিক শাখার প্রধান প্রশিক্ষক এবং সামরিক প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে সিলেটের শাপলাবাগের বাসাটি ভাড়া নেয়।
এছাড়া সানাউল ইসলাম শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিসংখ্যান বিভাগের ছাত্র। রুবেল আহমেদ ২০১৬ সালে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ব্লু বার্ড সিলেট শাখা থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দেয়। সে সিলেটে টুকেরবাজারে সার, বীজ ও কিটনাশকের ব্যবসা করে। আব্দুর রহিম জুয়েল রেন্ট এ কারের ড্রাইভার হিসেবে কাজ করত। তার গাড়ি ব্যবহার করে সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা করেছিলো তারা। সায়েম মির্জা সিলেটের মদন মোহন কলেজের অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্র।
সিলেট থেকে এর আগেও অনেকবার জঙ্গি অভিযান চালানো হয়েছে এবং জঙ্গি গোষ্ঠীর বেশ কয়েকজন শীর্ষ সদস্যকে আটক করা হয়, তাই এবারের এই ধারাবাহিক জঙ্গি গ্রাফতার হওয়ার ঘটনা স্থানীয় জনসাধারণকে শঙ্কিত করে তুলেছে। তাদের ভাষ্যমতে, সিলেটকে কেন্দ্র করে জঙ্গিদের এই অপতৎপরতা খুবই সন্দেহজনক। তারা নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার জন্য সিলেটকেই কেন বারবার কেন্দ্র হিসেবে বেছে নিচ্ছেন প্রশ্ন অনেকের।
বিমল দাস নামের একজন স্থানীয় বাসিন্দা টিভিথ্রিকে জানান, ঘটনার পিছনে কী আছে তা ভগবানই জানেন!
সব মিলিয়ে অপারেশন এলিগ্যান্ট বাইটের পরিসমাপ্তি টানা হলেও সূর্য দীঘল বাড়ি’র পরে শাহ ভিলা সিলেটবাসীকে চিন্তিত করেছে।বিএনপি শাসনামলে সিলেটের শাপলাবাগ হতে বাংলা ভাইকেও গ্রেফতার করা হয়েছিল।
১৩ আগস্ট ২০২০
বিশেষ প্রতিনিধি (টিভিথ্রি বাংলা)
এমকেসি/এনএইচটি