TV3 BANGLA
বাংলাদেশ

কোটা আন্দোলন রুপ নিয়েছে অধিকার আদায়ের আন্দোলনে, কি ঘটতে চলেছে বাংলাদেশে?

বাংলাদেশে নৈরাজ্য অবস্থা বিরাজ করছে গত কয়েক সপ্তাহ হতে। শেখ হাসিনা শাসন ব্যবস্থায় এইরকম অরাজকতা আগে কখনও সৃষ্টি হয় নাই। তবে সেনাবাহিনী জানিয়েছে তারা আমজনতা ও ছাত্রদের পাশে দাঁড়াবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার বাংলাদেশকে নৈরাজ্যের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছেন বলে ভারতের একটি সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা যায়। প্রতিবেদনে জানা যায়, আমজনতাকে সাথে নিয়ে বিক্ষোভকারীরা দেশের বিভিন্ন জেলা জুড়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অফিসে আগুন ধরিয়ে দেয়। প্রতিরক্ষা বাহিনী নামে পরিচিত সেনাবাহিনী সহিংস বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না। সেনাবাহিনী বলেছে যে তারা জনগণের পাশে দাঁড়াবে।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সরকার রবিবার সন্ধ্যা ৭ টায় অনির্দিষ্ট দেশব্যাপী কারফিউ ঘোষণা করেছে। রবিবার অরাজকতায় প্রায় একশ জনের বেশি সাধারণ জনগণ,পুলিশ ও ছাত্র মারা গিয়েছে।

রবিবার নতুন সহিংসতায় নিহত হয়েছেন শতাধিক ও বাংলাদেশে নৈরাজ্য নেমে এসেছে। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায় শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতা ছাড়ার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছে।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন যদি এখন প্রধানমন্ত্রী হাসিনা অপ্রতিরোধ্য সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের দাবি শুনে পদত্যাগ না করেন তাহলে দেশের পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকেই যাবে। ক্রান্তিকালীন সময়ে সামরিক বাহিনীকেই দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ভুমিকা রাখতে হবে এবং সাময়িক সময়ের জন্য তারা সরকার পরিচালনার সিদ্ধান্তে আসতে হতে পারে।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং এই দলের নেতারা সহিংস বিক্ষোভের মুখোমুখি হচ্ছেন। সাধারণ ছাত্ররা ১৯ জুলাই কোটার বিরোধী আন্দোলন শুরু করেছিল। যা ধীরে ধীরে আমজনতার আন্দোলনে রুপ নেয়।

বর্তমানে সরকার ইন্টারনেটের আংশিক শাটডাউন করে রেখেছে এবং জ্যামিং সৃষ্টি করে ব্যবহারে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। যা আমজনতাকে আরো বেশি ক্ষিপ্ত করে তুলেছে বলে জানা যায়।

প্রতিবাদকারী শিক্ষার্থীরা, “পদত্যাগ, পদত্যাগ, স্লোগানে মুখরিত করে রেখেছেন প্রতিবাদী র‍্যালি।

বাংলাদেশি মোবাইল ফোন অপারেটরদের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন তারা দেশে ৪ জি পরিষেবা বন্ধ করার নির্দেশনা পেয়েছেন সরকার কর্তৃক।

একটি সূত্র ইন্ডিয়া টুডেকে জানিয়েছে, “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে আগুন দিয়েছে দুষ্কৃতকারীরা। যদিও ঘটনাস্থল হতে সামান্য দূরে ছিল পুলিশ বাহিনী তবুও তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছায়নি। অনেকে সরকার দলীয় কর্মীদের দ্বারা আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে সন্দেহ করছেন। ”

তিনি আরও যোগ করেন, “বেশিরভাগ জেলার আওয়ামী লীগ অফিসগুলিতে আগুন লাগানো হয়েছে। এক এমপির বাসভবনকে এক হাজারের বেশি স্থানীয় জনতা মিলিতভাবে আক্রমণ করে। দীর্ঘদিনের মানুষের ক্ষোভ প্রশমিত করা কঠিন বলে এইসব আক্রমণ দমন করা অসম্ভব হয়ে উঠে পুলিশ বাহিনীর জন্য।”

এর আগে নিজেদের একটি বৈঠকের পর বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিবৃতি দিয়ে জানায় তারা বিক্ষোভকারীদের সমর্থনে জনগণের পাশে দাঁড়াবে। সেনাবাহিনীর চিফ ওয়েকার-উজ-জামান অফিসারদের বলেছিলেন “বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জনগণের আস্থার প্রতীক” এবং “এটি সর্বদা জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং জনগণ ও রাষ্ট্রের জন্য তারা কাজ চালিয়ে যাবে”।

খবরে আরো জানা যায়, প্রাক্তন অনেক সামরিক কর্মকর্তা ছাত্র আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন এবং প্রাক্তন সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভুঁইয়া তার ফেসবুক প্রোফাইলের ছবিটি এর সমর্থনে লাল রংয়ে রাঙ্গিয়ে দিয়েছেন।

ডালাস বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন বাংলাদেশি আমেরিকান রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং অনুষদ সদস্য শফকাত রাব্বি বলেন, ” শেখ হাসিনা ইয়াহিয়া খানের মতো একই ভুল করে যাচ্ছেন। ছাত্রজনতার উপর গুলি চালিয়ে ইয়াহিয়া টিকতে পারে নাই শেখ হাসিনা একই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি করছেন।”

রাব্বি বলেছেন, ” ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে প্রায় এক মাস ধরে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ধাওয়া পালটা ধাওয়া করতে করতে পুলিশ ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। দেশে এমন অঞ্চল রয়েছে যেখানে পুলিশের পদক্ষেপ উল্লেখযোগ্যভাবে শান্ত হয়ে গিয়েছে।”

তিনি আরও যোগ করেন, “পুলিশ বাহিনীতে যোগদানকারী বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কিছু সদস্য আগ্রাসী পুলিশিং চালিয়ে যাচ্ছে। অবধারিতভাবে মাথায় ও বুকে গুলি করে দিচ্ছে সেইসব সাবেক ছাত্রলীগের সদস্যরা। ছাত্রলীগ হতে পুলিশে যোগ দেওয়া সদস্যরাই প্রায় ৪০ জন ছাত্রকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি চালিয়েছে এর প্রমাণও হাতে এসেছে।”

তিনি আরো বলেন, প্রতিবাদের জন্য প্রায় ১০ লাখেরও বেশি মানুষ বাংলাদেশের রাস্তায় নেমেছে।

রবিবার রাস্তার লড়াইয়ের সময় কমপক্ষে পাঁচটি পোশাক, টেক্সটাইল এবং প্লাস্টিকের কারখানাগুলিতে আগুন লাগানো হয়েছে। এই সকল আগুন কারা লাগাচ্ছে তা নিয়েও যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে৷

ঢাকাভিত্তিক আমাদের নিজস্ব সূত্রগুলি ভবিষ্যদ্বাণী করেছে হাসিনা সরকারকে যেতে হবে এবং একটি সামরিক সরকার সাময়িক সময়ের জন্য তার জায়গা নিবে। শেখ হাসিনা বাংলাদেশে থাকতে পারবে কিনা তা নির্ভর করছে কীভাবে এই ক্ষমতার রূপান্তর ঘটছে তার উপর।

রবিবার শেখ হাসিনা বলেছেন, ” যারা বিক্ষোভকারীদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারা শিক্ষার্থী নন, সন্ত্রাসী।”

উল্লেখ্য যে, শেখ হাসিনা ২০০৯ সাল থেকে ক্ষমতায় রয়েছেন এবং প্রধান বিরোধী দল – বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) – দ্বারা বয়কট করা সাম্প্রতিক নির্বাচনের ন্যায্যতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।

সামরিক বাহিনী ইতিমধ্যে তাদের মেশিনগান নিয়ে পুরো বাংলাদেশ জুড়ে অবস্থান করলেও তারা আমজনতার উপর আক্রমণ বা গুলি চালাবে না বলেই ধরে নেয়া যায়।

ঢাকাভিত্তিক সূত্র আরো জানিয়েছে বাংলাদেশের জনগণের ভারতের উপর তিক্ততা রয়েছে কারণ এটি হাসিনা সরকারকে সমর্থন করতে দেখা গিয়েছে বারবার। যদিও ভারত সরকার মনে করে তাদের সম্পর্ক দেশের মানুষের সাথে নির্দিষ্ট সরকারের সাথে নয়।

উল্লেখ্য যে, জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা সরকারী চাকুরির জন্য কোটা ব্যবস্থা বিলোপের দাবিতে প্রতিবাদ করে আসছে। সেই দাবি এখন সরকার পতনের দিকে মোড় নিয়েছে বলে ধরে নেয়া যায়। সামনের কিছুদিনের ভিতরেই আন্দোলন ও দাবি আদায় কোন দিকে যাবে তা পরিষ্কার হয়ে যাবে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।

সূত্রঃ ইন্ডিয়া টুডে

এম.কে
০৫ আগস্ট ২০২৪

আরো পড়ুন

আগের খতিব ফিরে আসায় বায়তুল মোকাররমে সংঘর্ষ

বাংলাদেশের প্রেমে মজেছেন সন্তানদের খোঁজে আসা মার্কিন নাগরিক

মানুষ গুম হতো শেখ হাসিনার পরিকল্পনায়

নিউজ ডেস্ক