লন্ডনের গণপরিবহনে এখন নতুন এক সংকট দেখা দিয়েছে—তেলাপোকার উপদ্রব। শহরের বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী বহু বাসে পোকামাকড়ের এই উপদ্রব দিন দিন বাড়ছে বলে অভিযোগ করেছেন বাসচালক ও পরিবহন কর্মীরা। যাত্রীদের অভিযোগও একই—অনেক বাসে এখন আসনে বসা বা হাতল ধরাই অস্বস্তিকর হয়ে উঠেছে।
চালক ও কর্মীরা জানিয়েছেন, বিশেষ করে রাতের বেলা ডিপোতে দাঁড়িয়ে থাকা বাসগুলিতে তেলাপোকার ঝাঁক দেখা যায়। অনেক সময় বাস চালুর আগেই চালকদের নিজেদের হাতে কীটনাশক স্প্রে করে বাস পরিষ্কার করতে হয়। একাধিক কর্মীর দাবি, রুটিন পরিষ্কার-পরিচর্যার অভাব ও অপ্রতুল স্বাস্থ্যবিধি রক্ষার কারণে এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
একজন চালক জানান, “রাতের শিফটে কাজ করা অনেক সময় দুঃস্বপ্নের মতো হয়ে দাঁড়ায়। বাসের সিটের নিচে, জানালার ফাঁকে, এমনকি ড্যাশবোর্ডের কাছেও তেলাপোকা দৌড়াতে দেখা যায়। যাত্রীদের সামনেই আমরা লজ্জায় পড়ি।” তিনি আরও বলেন, “এটা শুধু স্বাস্থ্যঝুঁকি নয়, লন্ডনের মতো একটি উন্নত শহরের জন্য এটা এক ধরনের লজ্জা।”
পরিবহন ইউনিয়নের এক মুখপাত্র জানান, চালকদের কাছ থেকে বহুদিন ধরে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে, কিন্তু এখনো কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। “এটা শুধু অস্বস্তিকর নয়, এটা জনস্বাস্থ্যের প্রশ্ন। তেলাপোকা ব্যাকটেরিয়া বহন করে, যা খাদ্যবাহিত নানা রোগের কারণ হতে পারে। লন্ডনের গণপরিবহনে এই অবস্থা অগ্রহণযোগ্য।”
লন্ডন ট্রান্সপোর্ট কর্তৃপক্ষ (TfL) এ বিষয়ে জানায়, তারা অভিযোগ পেয়েছে এবং দ্রুত প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কিছু পুরনো বাসে গভীর পরিষ্কার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এবং প্রতিটি ডিপোতে স্বাস্থ্য ও জীবাণুনাশক পরিদর্শন জোরদার করা হয়েছে। তবে অনেক চালক বলছেন, এটি সাময়িক সমাধান মাত্র—মূলত নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণই স্থায়ী সমাধান দিতে পারে।
যাত্রীরা বলছেন, কয়েকটি রুটে সকালে বাসে উঠলেই তেলাপোকা চোখে পড়ে। এক নারী যাত্রী বলেন, “আমরা টিকিটের দাম দিচ্ছি সেবা নেওয়ার জন্য, পোকামাকড়ের সঙ্গে ভ্রমণের জন্য নয়।” সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এই ইস্যুতে ক্ষোভ ছড়িয়েছে; অনেকেই বাসের ভেতরের ছবি ও ভিডিও পোস্ট করে TfL কর্তৃপক্ষের কঠোর সমালোচনা করছেন।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, তেলাপোকা শুধু ঘৃণাজনক নয়, এটি শহরের স্বাস্থ্যব্যবস্থার দুর্বলতার প্রতীক। যদি দ্রুত সমাধান না নেওয়া হয়, এটি বড় ধরনের স্যানিটেশন সমস্যায় রূপ নিতে পারে। তারা বলছেন, এই অবস্থা শুধু লন্ডনের সুনামকেই ক্ষতিগ্রস্ত করছে না, বরং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তাকেও ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে।
সূত্রঃ স্যোশাল মিডিয়া
এম.কে
১৫ অক্টোবর ২০২৫