TV3 BANGLA
বাংলাদেশ

গাছের পাতায় সোনার খনিঃ অস্ট্রেলিয়ান টি ট্রি চাষে রংপুরের তরুণের বছরে ৩০ লাখ আয়

রংপুরের পীরগাছার প্রত্যন্ত গ্রাম শ্রীকান্ত এখন আলোচনায়—এখানেই চাষ হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার দুর্লভ টি ট্রি গাছ, যার পাতায় লুকিয়ে আছে বিপুল সম্ভাবনা। এই গাছের পাতা থেকে উৎপাদিত তেলের প্রতি লিটার বিক্রি হচ্ছে ৫০ হাজার টাকায়, আর উৎপাদনের সময় পাওয়া হাইড্রোসল ওয়াটারের দাম লিটারপ্রতি অন্তত এক হাজার টাকা।

প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান আরিফ, রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার হরিশচর গ্রামের তরুণ। আগে তিনি তাইওয়ানের একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। চাকরির ফাঁকে বিদেশে টি ট্রি অয়েল উৎপাদনের সম্ভাবনা তাকে অনুপ্রাণিত করে। দেশে ফিরে এক একর জমি লিজ নিয়ে শুরু করেন এই চাষ। শুরুটা সহজ ছিল না—বীজ সংগ্রহ, চারা উৎপাদন ও প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ পেরিয়ে তিনি সফল হন ২০২০ সালে, আন্তর্জাতিক ই-কমার্সের মাধ্যমে অল্প কিছু বীজ এনে।

স্থানীয় কৃষি বিভাগ ও বাংলাদেশ কৃষি ইনস্টিটিউটের সহযোগিতায় তিনি পরীক্ষামূলক চাষ শুরু করেন। বীজ থেকে উৎপন্ন ৪০টি চারার যত্নে তিন বছরের ব্যবধানে তা ছড়িয়ে গেছে দুই হাজার গাছে। বর্তমানে তার এক একর প্রকল্পে স্থাপিত অত্যাধুনিক স্টিম ডিস্টিলেশন মেশিনে পাতা থেকে উৎপাদিত হয় তেল ও হাইড্রোসল ওয়াটার।

প্রতি ৫০ কেজি পাতা থেকে গড়ে দেড় লিটার তেল এবং ১৮-২০ লিটার হাইড্রোসল ওয়াটার পাওয়া যায়। তিন বছরে উৎপাদিত হয়েছে প্রায় ৫০ লিটার তেল ও ৫ হাজার লিটার হাইড্রোসল ওয়াটার।

চীনের ছোট মেশিন দেখে স্থানীয়ভাবে ৫০০ লিটার ধারণক্ষমতার ডিস্টিলেশন ইউনিট তৈরি করেন আরিফ। তার হাতে তৈরি এই যন্ত্রেই এখন প্রতিদিন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন শ্রমিকরা। শুরুতে ৮-১০ জন কর্মচারী থাকলেও এখন লোকবল বেড়েছে। এ বছর প্রায় ৩০ লাখ টাকা আয় হবে বলে আশা করছেন তিনি।

টি ট্রি অয়েল ও হাইড্রোসল ওয়াটার বিশ্বজুড়ে স্কিনকেয়ার, হেয়ারকেয়ার ও ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্যে ব্যবহৃত হয়। আরিফ জানান, তেলটি ব্রণ, ফাঙ্গাস, খুশকি ও চুল পড়া রোধে অত্যন্ত কার্যকর। বিদেশে এর চাহিদা বেশি হওয়ায় ইতোমধ্যে অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বিক্রি শুরু হয়েছে।

আসাদুজ্জামান আরিফ বলেন, “১৫ লাখ টাকা বিনিয়োগে শুরু করা প্রকল্প এখন রপ্তানিযোগ্য পণ্য উৎপাদন করছে। সরকার যদি রপ্তানি প্রক্রিয়া সহজ করে, তাহলে এখাতে বৈদেশিক মুদ্রা আয় ও গ্রামীণ কর্মসংস্থানে বড় ভূমিকা রাখা সম্ভব।”

পীরগাছা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জানান, “এই মাটিতে টি ট্রি চাষের অনুকূল পরিবেশ রয়েছে। আরিফের প্রকল্প কৃষি উদ্ভাবনের এক অনন্য উদাহরণ। অন্য উদ্যোক্তারা এগিয়ে এলে কৃষি বিভাগ তাদের সর্বাত্মক সহায়তা করবে।”

সূত্রঃ ঢাকা পোস্ট

এম.কে

আরো পড়ুন

টিউলিপের বিরুদ্ধে তদন্তে বাংলাদেশকে সহায়তা করছে ব্রিটেনের সংস্থাঃ দ্য টেলিগ্রাফ

চেয়ারম্যান-এমডিসহ বসুন্ধরা পরিবারের ৮ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

বিজয় দিবসে মোদির পোস্টে নেই বাংলাদেশের নাম