15.1 C
London
April 30, 2024
TV3 BANGLA
Uncategorized

চায়না এক্সপ্রেস: শুরু হলো নতুন পথে চলা

“নি হাও”
“ভালো আছেন?”

ঢাকা থেকে মাত্র দুই ঘণ্টার ফ্লাইটে চীনে পৌঁছানো যায়। বলতে গেলে, বাংলাদেশের খুব নিকট প্রতিবেশী। কিন্তু চীন বা চায়না সম্পর্কে আমাদের অনেকের ধারণাই খুব স্পষ্ট নয়। চায়না কথাটি ভাবলেই মনে হয় ‘চ্যাং চুং’ শব্দে দুর্বোধ্য কিছু কথা আর ‘সাপ-ব্যাঙ’ খাবার। অবশ্য এ ধারণা থেকে আমরা ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসছি। এখন অনেকেই বাংলাদেশ থেকে চায়না যাচ্ছেন ব্যবসার কাজে, যাচ্ছেন উচ্চশিক্ষার জন্য। বিশ্বের অন্যতম সুপার পাওয়ার বা পরাশক্তি হিসেবে নতুন শতাব্দিতে আবির্ভূত হয়েছে চীন। বিশ্বের বৃহত্তম উৎপাদকও এই রাস্ট্র।

বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক নতুন নয়। চীনের সঙ্গে সুপ্রাচীনকাল থেকেই বঙ্গভূমির সম্পর্ক রয়েছে। এই সম্পর্ক যেমন সাংস্কৃতিক তেমনি অর্থনৈতিক। ফা হিয়েন,(ফা শিয়েন) হিউয়েন সাং(শুয়েন চাং), মা হুয়ানসহ আরও অনেক চীনা পর্যটক প্রাচীন বাংলায় এসেছিলেন। প্রাচীন বাংলার সামাজিক ইতিহাসের মুল্যবান দলিল আমরা তাদের কাছ থেকেই পেয়েছি। পক্ষান্তরে বাংলার চর্যাপদের কবি ও নাথপন্থার গুরু মৎসেন্দ্রনাথ  বা মীননাথ এবং তার শিষ্য নাথপন্থী বিখ্যাত গুরু গোরক্ষনাথ যখন তিব্বতে যান এবং সেখানেই অন্তিমকাল পর্যন্ত জীবন অতিবাহিত করেন তখন অনিবার্যভাবে তারা বাংলার সহজসাধন জ্ঞানকে এবং দোহা বা বুদ্ধিস্ট মিস্টিক সং ও বাংলার সংস্কৃতিকে সেখানে বয়ে নিয়ে যান।  বাংলার পণ্ডিত অতীশ দীপংকর যখন তিব্বতে যান তিনিও একইভাবে শুধু বৌদ্ধশাস্ত্রকেই নয় বাংলার সাহিত্য ও সংস্কৃতিকেও চীনে নিয়ে গিয়েছিলেন।

প্রাচীনকালে চীনের রেশম পথ ছিল বিশ্বের প্রধানতম বাণিজ্য পথ। চীনের শিয়ান শহর থেকে শুরু হয়ে এই পথ চীন সাম্রাজ্যের বিভিন্ন নগর ছুঁয়ে মধ্য এশিয়ার ভিতর দিয়ে চলে গিয়েছিল রোম মহানগরী পর্যন্ত। এই সিল্ক রুট বা রেশম পথের সঙ্গে জড়িয়ে আছে কাশগড়, সমরখন্দ, বুখারা, গুরগঞ্জসহ কত ইতিহাসখ্যাত শহরের নাম।

শেরশাহের আমলে যে গ্র্যান্ড ট্রাংক রোড নির্মিত হয় তা দিল্লি থেকে বাংলা পর্যন্ত পৌঁছায়। এই পথ দিল্লি থেকে রেশমপথের সঙ্গে যুক্ত ছিল। ফলে রেশমপথের মাধ্যমে চীনের সঙ্গে বাংলার যোগাযোগ স্থাপিত হয়। বাংলার মসলিন ও সুতিবস্ত্র যেমন চীন, আরব, মিশর, গ্রিস ও রোমে পৌছায় তেমনি চীনের রেশমও পৌছে যায় বাংলায়। বাংলার প্রাচীন রাজধানী সোনার গাঁও এর সঙ্গে চীনের কেন্দ্রভূমির মধ্যে বাণিজ্যিক লেনদেন তখন থেকেই প্রচলিত ছিল। বাংলার অভিজাত সমাজ যেমন রাজা, সুলতান, ভূস্বামীরা চীনের রেশম ব্যবহার করতেন। তেমনি বাংলার মসলিন এবং সুতিবস্ত্র চীনে জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।

সুপ্রাচীন সেই রেশমপথকে নতুনভাবে জাগিয়ে তুলতে চলতি শতাব্দিতে উদ্যোগী হয়েছে চীন। রেশমপথ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও একুশ শতকের রেশমপথ চীনের প্রস্তাবনা। ‘এক অঞ্চল এক পথ’ নামে রেশমপথ অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে মৈত্রী গড়তে চাইছে চীন। চীনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট এবং চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি সি চিন পিং এই ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড কর্মসূচিকে ব্যাপক গুরুত্ব দিচ্ছেন।

সংক্ষেপে বলা যায়, চীন এখন এক অঞ্চল এক পথ নামে প্রাচীন রেশম পথ অঞ্চলকে নতুনভাবে জাগাতে চাচ্ছে। এই অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়াতে চাচ্ছে। বাণিজ্যিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন ঘটাচ্ছে তারা। এর সুবিধাভোগী হবে এশিয়ার রেশমপথ অঞ্চলের দেশগুলো। বাংলাদেশও এই বলয়ের বাইরে নয়। শুধু মধ্য, পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধিই নয়, ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সঙ্গেও সহযোগিতা ও যোগাযোগ বাড়াতে চাচ্ছে চীন। এক অঞ্চল এক পথ থেকে বাংলাদেশও লাভবান হবে।

চীনে বাংলাদেশী পণ্য রপ্তানির নতুন সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। শুল্কমুক্ত রপ্তানির বিদ্যমান সুবিধা বর্তমানে ৯৭ শতাংশ। চীনা ব্যবসায়ীরা এরমধ্যেই বাংলাদেশে বিনিয়োগ করছেন। বিনিয়োগ আরও বাড়বে। চীনের কাছ থেকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা যেন বাংলাদেশ পেতে পারে সে জন্য চীনের সৃষ্ট সুযোগগুলোর সদ্ব্যবহার করতে হবে পুরোমাত্রায়। প্রচলিত পণ্যের বাইরেও বাংলার আরও অনেক রপ্তানি পণ্য রয়েছে, রয়েছে সুলভ শ্রমশক্তি। চীন এখন অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান দক্ষিণ এশিয়ায় স্থাপন করতে চলেছে।

শান্তা মারিয়া (বেইজিং)
চায়না মিডিয়া গ্রুপে প্রকাশিত


৩০ আগস্ট ২০২০
এনএইচটি

আরো পড়ুন

আমার মা’কে কিভাবে এদেশে আনতে পারি? Law with N Rahman

TV3 Bangla Training

‘অক্টোবরে দৈনিক কোভিড আক্রান্তের হার ৫০ হাজারে পৌঁছাবে’

অনলাইন ডেস্ক