18.2 C
London
May 9, 2025
TV3 BANGLA
আন্তর্জাতিকযুক্তরাজ্য (UK)

‘ট্রাম্প ও স্টারমার’ যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য বাণিজ্য চুক্তি নিশ্চিত করলেন

যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্র একটি “ঐতিহাসিক” বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছেছে, যার ফলে ডোনাল্ড ট্রাম্প আরোপিত কিছু শুল্ক—যেমন গাড়ি, অ্যালুমিনিয়াম ও স্টিলের উপর—কমানো হবে। প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার জানিয়েছেন, এই চুক্তির ফলে হাজার হাজার ব্রিটিশ নাগরিকের চাকুরি রক্ষা পাবে।

স্টারমার এটিকে “দারুণ, ঐতিহাসিক দিন” বলে অভিহিত করেছেন। ট্রাম্পের সর্বশেষ বৈশ্বিক শুল্ক ঘোষণার পর এটি হোয়াইট হাউজের প্রথম চুক্তি।

সলিহালে জাগুয়ার ল্যান্ড রোভার কারখানায় কর্মীদের উদ্দেশে বক্তব্যে স্টারমার বলেন, চুক্তির ফলে ঝুঁকিতে থাকা গাড়ি ও স্টিল শিল্পে বহু চাকুরি রক্ষা পেয়েছে।

টিইউসি-এর মহাসচিব পল নোয়াক বলেন, “এই চুক্তি আমাদের প্রান্তসীমা থেকে ফিরিয়ে এনেছে এবং অনেক শ্রমিক এর ফলে স্বস্তি পাবে।”

তবে সমালোচকরা বলছেন, এটি দুই দেশের মধ্যে বহাল থাকা অনেক উচ্চ শুল্ক সমস্যার সমাধান করেনি। আন্তর্জাতিক চেম্বার অফ কমার্সের সেক্রেটারি জেনারেল জন ডেন্টন বলেন, “বাস্তবতা হলো, যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত শুল্ক এখনো বছরের শুরু থেকে অনেক বেশি।” তিনি আরও বলেন, এই চুক্তিতে ফার্মাসিউটিক্যালসের মতো অনেক খাত স্পষ্টভাবে অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে।

যুক্তরাষ্ট্র ব্রিটিশ স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের উপর ২৫% শুল্ক হ্রাস করে শূন্যে নামিয়ে এনেছে। এটি ব্রিটিশ স্টিল শিল্পের জন্য জীবনরেখা হিসেবে দেখা হচ্ছে, যেটি ধ্বংসের মুখে ছিল এবং যুক্তরাষ্ট্র ব্রিটেনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি বাজার।

প্রায় ১ লাখ ব্রিটিশ গাড়ির উপর মার্কিন শুল্ক কমিয়ে ১০% করা হয়েছে, যা আগে ছিল ২৭.৫%। যুক্তরাষ্ট্র ব্রিটিশ গাড়ির প্রধান রপ্তানি বাজার, যার মূল্য গত বছর ৯ বিলিয়ন পাউন্ড ছাড়িয়েছে।

ওয়াশিংটন যুক্তরাজ্যের ফার্মাসিউটিক্যাল খাতকে “বিশেষ সুবিধা” দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। অপরদিকে, মার্কিন বিমান প্রস্তুতকারকরা যুক্তরাজ্যের উচ্চ মানের উপাদান ব্যবহারে অগ্রাধিকার পাবে। তবে অধিকাংশ পণ্যের উপর ১০% ভিত্তিমূল্য শুল্ক বহাল থাকবে।

ব্রিটিশ গরুর মাংস উৎপাদকদের যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশের অনুমতি পাওয়া নিয়েও স্বস্তি প্রকাশ করা হয়েছে। যেখানে তারা এখন অস্ট্রেলিয়াসহ কিছু দেশের সাথে একই কাতারে। অপরদিকে, মার্কিন কৃষকরা যুক্তরাজ্যের বাজারে নতুন প্রবেশাধিকার পাবে।

স্টারমার জানিয়েছেন, খাবারের মানের বিষয়ে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না—হরমোন-চিকিৎসাকৃত গরুর মাংস বা ক্লোরিনযুক্ত মুরগির মাংস আমদানি এখনো অবৈধ থাকবে।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বলেন, “অনেকেই আমাকে বলেছিলেন, চুক্তি না করে দূরে সরে যেতে। আমরা তা করিনি। আমরা কঠিন পরিশ্রম করেছি, আলোচনা চালিয়ে গিয়েছি। আমি খুব খুশি যে আজ এখানকার শ্রমিকদের এবং দেশের জনগণকে বলতে পারছি, এই চুক্তি কতটা গুরুত্বপূর্ণ।”

তবে তিনি যোগ করেন, “এটা কেবল চাকুরি রক্ষার সাফল্য, কাজ এখনও শেষ হয়নি।” প্রযুক্তি ও চলচ্চিত্র শিল্পে সহযোগিতা আরও বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাবেন বলে জানান তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রে যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূত পিটার ম্যান্ডেলসন বলেন, “প্রযুক্তিগত অংশীদারত্ব” নিয়ে আগামী মাসগুলোতে আলোচনা হবে। মার্কিন ভাইস-প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স এই আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন।

কনজারভেটিভ নেতা কেমি ব্যাডনক এই চুক্তিকে সমালোচনা করে বলেন, “লেবার যখন চুক্তি করে, তখন ব্রিটেন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমরা আমাদের শুল্ক কমিয়েছি—আমেরিকা তাদের তিনগুণ করেছে। স্টারমার এটিকে ঐতিহাসিক বলছেন, অথচ আমরা প্রতারিত হয়েছি!”

তবে লেবার সরকারের ছায়া বাণিজ্যমন্ত্রী অ্যান্ড্রু গ্রিফিথ বলেন, “শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্ত রপ্তানিকারক ব্যবসাগুলোর জন্য স্বাগত।”

তথ্যমতে জানা যায় চুক্তির চূড়ান্ত ধাপ ছিল বিশৃঙ্খল। বুধবার রাতে ট্রাম্প সম্মত হওয়ার ইঙ্গিত দেওয়ার পর যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তারা তড়িঘড়ি করে চুক্তি ঘোষণা করেন। শিল্পপতিদের চুক্তির ব্যাপারে জানানো হয় বৃহস্পতিবার ভোরে।

স্টারমার বলেন, “আমি মোটেও বাধ্য হয়ে চুক্তি করিনি।”

যুক্তরাজ্য সরকারের কর্মকর্তারা বলেছেন, এটি একটি প্রাথমিক ধাপ, দুই পক্ষ আলোচনা চালিয়ে যাবে। বাণিজ্যমন্ত্রী জনাথন রেনল্ডস বলেন, যুক্তরাজ্য ১০% ভিত্তি শুল্ক কমানোর চেষ্টা চালিয়ে যাবে। তবে এই চুক্তিতে ডিজিটাল পরিষেবা কর, অনলাইন নিরাপত্তা আইন বা এনএইচএস নিয়ে কোনো ছাড় দেওয়া হয়নি।

যুক্তরাজ্যই প্রথম দেশ, যেটি ট্রাম্পের বানিজ্য যুদ্ধ ঘোষণার পর এই ধরনের একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে। ট্র‍্যাম্পের বানিজ্য শুল্কহার ঘোষণার পর বিশ্ব শেয়ারবাজারে ধস নামে এবং পরবর্তীতে ট্রাম্প ৯০ দিনের বিরতি ঘোষণা করেন, যা জুলাই মাসে শেষ হবে।

যুক্তরাষ্ট্র অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে এই ধরনের চুক্তির জন্য চাপে আছে। অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করেছেন, ট্রাম্পের কৌশল মন্দার ঝুঁকি তৈরি করছে, তবুও হোয়াইট হাউজের দাবি, এটি বহু চুক্তির ভিত্তি তৈরি করবে।

যুক্তরাষ্ট্র এখন ভারত ও জাপানের মতো দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনায় আছে। মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট জানিয়েছেন, ১৭টি দেশের সাথে আলোচনা চলছে।

ওয়েস্টমিনস্টারে লিবারেল ডেমোক্র্যাটরা এই চুক্তি নিয়ে সংসদে ভোট চেয়েছে। তারা বলছে, সংসদ সদস্যদের অংশগ্রহণ ছাড়া চুক্তি করলে জনগণের প্রতি “সম্পূর্ণ অসম্মান” দেখানো হবে, বিশেষ করে খাদ্য নিরাপত্তার মতো বিষয় এখনো আলোচনাধীন রয়েছে।

মার্কিন কৃষিমন্ত্রী ব্রুক রলিন্স সাংবাদিকদের বলেন, তিনি চুক্তির আওতা বাড়িয়ে সব ধরনের মাংস অন্তর্ভুক্ত করতে চান এবং এজন্য আগামী সপ্তাহে তিনি যুক্তরাজ্য সফরে যাচ্ছেন।

ন্যাশনাল ফার্মার্স ইউনিয়নের সভাপতি টম ব্র্যাডশো মার্কিন বাজারে ব্রিটিশ গরুর মাংস রপ্তানির সুযোগকে স্বাগত জানালেও, আমদানি করা আমেরিকান গরুর নিম্নমান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে
০৯ মে ২০২৫

আরো পড়ুন

শহরের জমি ব্যবহারে ফল ও সবজি উৎপাদন ৪০ শতাংশ বাড়াতে পারবে ব্রিটেন

অনলাইন ডেস্ক

কনজারভেটিভ সরকারের বিতর্কিত রুয়ান্ডা নির্বাসন মামলায় পরাজয়

যুক্তরাজ্যে প্রপার্টি মার্কেটে ভারতীয়রা এগিয়ে