ইতালি আগামী তিন বছরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের দেশগুলো থেকে অন্তত পাঁচ লাখ নতুন কর্মী নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশটির মন্ত্রিসভার এক ঘোষণায় বলা হয়েছে, ২০২৬ থেকে ২০২৮ সাল পর্যন্ত এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন হবে।
২০২৫ সালের মধ্যে এক লাখ ৬৪ হাজার ৮৫০ জন কর্মী নিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ইতালি। ২০২৮ সালের মধ্যে মোট সংখ্যা হবে ৪ লাখ ৯৭ হাজার ৫৫০ জন।
এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পাশাপাশি অনিয়মিত অভিবাসন নিয়েও কঠোর অবস্থানে রয়েছে ইতালির ডানপন্থি সরকার। সরকারের পক্ষ থেকে সমুদ্রপথে আগত অভিবাসীদের ঠেকাতে এনজিওদের কার্যক্রম সীমিত করার উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।
সরকারের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ব্যবসার চাহিদা ও ওয়ার্ক পারমিটের প্রকৃত আবেদন পর্যালোচনা করেই এই নিয়োগ কোটা নির্ধারণ করা হয়েছে। মূল লক্ষ্য হলো শ্রমবাজারে ঘাটতি পূরণ এবং জনসংখ্যা সংকট মোকাবিলা করা।
ইতালির জনসংখ্যা দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। ২০২৪ সালে জন্মের চেয়ে মৃত্যু হয়েছে দুই লাখ ৮১ হাজার বেশি, আর মোট জনসংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে পাঁচ কোটি ৮০ লাখে।
কৃষি খাতের সংগঠন কোল্ডিরেত্তি সরকারের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে। তাদের মতে, এটি কৃষিখাতে শ্রমিক সংকট দূর করতে সহায়ক হবে।
ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাত্তেও পিয়ান্তেদোসি বলেছেন, অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে নিয়মিত অভিবাসনের সুযোগ দেওয়ায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ‘রিও কন্তি পাবব্লিসি’র মতে, জনসংখ্যা স্থিতিশীল রাখতে ইতালিকে ২০৫০ সালের মধ্যে অন্তত এক কোটি অভিবাসী নিতে হবে।
এই নিয়োগ পরিকল্পনার আলোকে বাংলাদেশিদের জন্য সুযোগ তৈরি হতে পারে। কারণ ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ও ইতালির মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারকে (এমওইউ) সই হয়েছে।
গত মে মাসে ঢাকায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পিয়ান্তেদোসি এবং প্রবাসী কল্যাণ উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের উপস্থিতিতে এই চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এতে নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসনের সুযোগ প্রসারে দুই দেশ একমত হয়।
চুক্তির আওতায় বাংলাদেশের কর্মীদের ভাষা ও প্রশিক্ষণের বিষয়েও পরিকল্পনা রয়েছে। জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করে বছরে একবার করে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আগামী আগস্টে ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির ঢাকা সফরকে কেন্দ্র করে এই অভিবাসন পরিকল্পনা আরও এগিয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পিয়ান্তেদোসি বলেছেন, ইতালিতে বাংলাদেশিদের বড় একটি পরিশ্রমী কমিউনিটি রয়েছে এবং ইতালির সমাজে তারা ইতিবাচক অবদান রাখছেন।
তিনি অনিয়মিত পথে ইতালিতে যাওয়ার প্রবণতা বন্ধে সতর্ক করে বলেন, সরকার চায় বাংলাদেশিরা নিরাপদ ও বৈধ পথে দেশটিতে যাক।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে, অনিয়মিত অভিবাসন ও মানবপাচার ঠেকাতে ইতালির সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করতে আগ্রহী বাংলাদেশ।
সূত্রঃ ইনফোমাইগ্রেন্টস
এম.কে
০২ জুলাই ২০২৫