20.1 C
London
May 8, 2024
TV3 BANGLA
বাংলাদেশ

মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে জীবন বদলাতে চায় সিলেটের তরুণরা

দালাল সালাম ও দালালপুত্র সাকিব

বিশেষ প্রতিনিধি: বিভিন্ন দেশে হাই স্কিল মাইগ্রেট হিসেবে না গিয়ে বরং দালালদের মাধ্যমে মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে প্রবাসে পাড়ি জমানোর প্রবণতা বেশি সিলেটের তরুণ সমাজের। এই প্রবণতার কারণে সিলেট অঞ্চলে বিদেশে পাড়ি জমানো তরুণদের মৃত্যুর খবরসহ আরও নানা হৃদয় বিদারক ঘটানোর খবর প্রতিনিয়ত দেখা যায় সংবাদমাধ্যমে।

এভাবে দালালদের মাধ্যমে বিদেশে যেতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন অনেক তরুণ। এরসঙ্গে রয়েছে আরেক আতঙ্ক, অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায়। বাংলাদেশের ইউরোপের বিভিন্ন দেশের দূতাবাস না থাকায় সেইসব দেশে যাওয়ার জন্য ভারত হতে ভিসার অ্যাপ্লিকেশন করতে হয়। প্রতারক চক্র এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে গড়ে তুলেছে এক নতুন অপরাধ দুনিয়া।

প্রবাসে যাবার ঝুঁকিপূর্ণ এইসব পন্থার ব্যাপারে স্থানীয় বিভিন্ন লোক তাদের মতামত জানান। মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর থানার উত্তরভাগ ইউনিয়নের  মো. খালিস মিয়া চৌধুরী(৪৯) টিভি থ্রি’র বিশেষ প্রতিনিধিকে বলেন, আমরা সাত ভাই এর মধ্যে দুই ভাই দেশে বাকি সবাই প্রবাসী। এদের মধ্যে ইউরোপে আছেন দুইজন। আমার ভাইয়েরা অনেক কষ্টে ইউরোপে গিয়ে পৌঁছেছে। দেশ থেকে সঠিক নিয়মে ইউরোপ যাওয়ার উপায় আমরা খুঁজে পাই না। তাই দালালদের মাধ্যমে মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে প্রবাসে পাড়ি জমানোর প্রবণতা বেশি সিলেটের তরুণ সমাজের।

মৌলভীবাজারের উত্তরভাগ ইউনিয়নের সুরিখালের আসুক বেগ(৪৩) বলেন,আমি নিজেও ইউরোপে যাবার চেষ্টা করেছি। কিন্তু কোনো সঠিক উপায় খুঁজে পাই নাই। নিজে বিভিন্ন ধরনের কোর্স করেছি,  তাও যেতে পারি নাই। সহজ উপায় না থাকার কারণে  তরুণ বা যুবকেরা বিভিন্ন ঝুঁকি নিয়ে থাকে। এই ঝুঁকি নেয়ার কারণে সিলেট অঞ্চলে বিদেশে পাড়ি জমানো তরুণদের মৃত্যুর খবরসহ আরো নানা হৃদয় বিদারক  খবর প্রতিনিয়ত আসছে।

গত ১৮ আগস্ট  সিলেটের বিশ্বনাথে আটক হয়েছে অপহরণকারী একটি চক্র।  ভারতে আটকে রেখে দেশে আত্মীয় স্বজনদের  থেকে মুক্তিপণ আদায় করতে গিয়ে গ্রেফতার হয়েছে এই পিতা-পুত্র। ভারতে আটকে রেখে বাংলাদেশে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায়ের মামলায় পিতা-পুত্রকে গ্রেফতার করেছে সিলেটের  বিশ্বনাথ থানা পুলিশ।

উপজেলার টেংরা গ্রামের মৃত আবদুল খালিকের ছেলে আবদুল হককে আয়ারল্যান্ডে পাঠানোর নামে তাকে ভারতে আটকে রেখে দেশে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে মানব পাচারকারী পিতা-পুত্রকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আসামিদের সিলেট আদলতে নেওয়া হলে আদালত তাদের জেল হাজতে প্রেরণ করেন।

গ্রেফতাররা হলেন, সিলেটের এয়ারপোর্ট থানাধীন আম্বরখানাস্থ ঐক্যতান পীর-মহল্লার মৃত রফিক উদ্দিনের ছেলে আবদুস সালাম (৪৮) ও তার ছেলে নাঈমুর রহমান সাকিব (২৫)। সোমবার বাংলাদেশ সময় অনুযায়ী রাত সাড়ে ১২ টার দিকে  বিশ্বনাথ থানার এসআই দেবাশীষ শর্ম্মার নেতৃত্বে একদল পুলিশ তাদের নিজ বাসা থেকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসেন।

এর আগে চলতি বছরের পহেলা এপ্রিল ভারতে আটকে রেখে দেশে মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে বিশ্বনাথ উপজেলার অলংকারী ইউনিয়নের টেংরা গ্রামের মৃত আবদুল খালিকের ছেলে আবদুল হক বাদী হয়ে ৪ জনের নাম উল্লেখ করে মানব পাচার প্রতিরোধ আইন ২০১৩ এর ৬(২)৭/৮ ধারায় থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ২ (০১.০৪.২০ইং)।

মামলার অভিযুক্তরা হলেন, সিলেটের এয়ারপোর্ট থানাধীন আম্বরখানাস্থ ঐক্যতান পীর-মহল্লার মৃত রফিক উদ্দিনের পুত্র আবদুস সালাম (৪৮), সালামের পুত্র নাঈমুর রহমান সাকিব (২৫) ও স্ত্রী আমিরুন বেগম (৪০) এবং দক্ষিণ সুরমা থানার মামরখপুর গ্রামের মৃত তেরা মিয়ার পুত্র সিরাজুল ইসলাম।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১ আগস্ট আবদুল হককে আয়ারল্যান্ড পাঠানোর জন্য ১২ লাখ টাকায় চুক্তি করেন আবদুস সালাম। চুক্তির পর ৬ আগস্ট ভিসা তোলার কথা বলে হককে ভারতে পাঠান দালাল সালাম। এর ৪/৫ দিন পর সালামের পুত্র সাকিব ভারতে গিয়ে আবদুল হককে ভিসা তুলার কথা বলে দিল্লিতে নিয়ে যান। সেখানে অ্যাম্বাসিতে না নিয়ে হককে একটি বাসায় তালাবদ্ধ করে রাখে সাকিব। বন্দি করার কারণ জানতে চাইলে দালাল পুত্র সাকিব তাকে বলেন, আরও ১০ লাখ টাকা না দিলে তাকে অ্যাম্বেসিতে তোলা যাবে না। এরপর আবদুল হক দেশে থাকা ভাই আবদুর রবকে দিয়ে দালাল সালামের নিকট ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দেন। মুক্তিপণ আদায়ের এক মাস ২০ দিন পর হককে নয়া-দিল্লির একটি নির্জন স্থানে ফেলে দেয় দালাল চক্র। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে দেশে ফিরে আসেন আবদুল হক। দেশে আসার ৬ মাস পর চলতি বছরের পহেলা এপ্রিল সিলেটের মানবপাচার প্রতিরোধ ট্রাইব্যুনালে আবদুল হক মামলা দায়ের করেন।

দালাল সালাম-সাকিবকে গ্রেফতারের সত্যতা স্বীকার করে মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা  বিশ্বনাথ  থানার এসআই দেবাশীষ শর্ম্মা বলেন, গ্রেপ্তারদের পেশাই হচ্ছে দালালি। তারা ইউরোপ পাঠানোর কথা বলে ভারতসহ বিভিন্ন দেশে তাদের দালাল চক্রের মাধ্যমে বৃহত্তর সিলেটের সহজ-সরল মানুষদের আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায় করে। গ্রেফতারকৃতদের মঙ্গলবার আদালতে প্রেরণ করা হলে আদালত তাদেরকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশন দেন। আর মামলার অন্যান্য অভিযুক্তদের গ্রেফতারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।


২২ আগস্ট ২০২০
এমকেসি/এনএইচটি

আরো পড়ুন

দীর্ঘায়ু লাভের ১৩টি বৈজ্ঞানিক উপায়!

অনলাইন ডেস্ক

কেন সিলেটকেই কেন্দ্র করে জঙ্গিদের এই অপতৎপরতা?

অনলাইন ডেস্ক

দক্ষ জনশক্তি নিতে আগ্রহ প্রকাশ মঙ্গোলিয়ার রাষ্ট্রদূতের