TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

প্রাইম লন্ডনে সম্পত্তির দরপতন, সাশ্রয়ী এলাকায় উল্টো চিত্র

লন্ডনের আবাসন বাজারে স্পষ্ট বিভাজন দেখা যাচ্ছে, যেখানে রাজধানীর প্রায় অর্ধেক বরোতে বাড়ির দাম কমছে এবং সবচেয়ে ব্যয়বহুল এলাকাগুলোতেই পতনের মাত্রা বেশি। অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিকস (ONS)-এর তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের অক্টোবরে লন্ডনে গড় বাড়ির দাম দাঁড়িয়েছে £৫৪৭,০০০, যা আগের বছরের তুলনায় ২.৪ শতাংশ কম।

 

ONS-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, লন্ডনের ৩৩টি বরোর মধ্যে ১৮টিতেই বছরভিত্তিক হিসেবে সম্পত্তির দাম হ্রাস পেয়েছে। এর বিপরীতে যুক্তরাজ্যজুড়ে গড় বাড়ির দাম ১.৭ শতাংশ বেড়েছে, যা লন্ডনের বাজারকে জাতীয় প্রবণতা থেকে আলাদা করে তুলেছে।

রাজধানীর সবচেয়ে দামী বরোগুলোতেই পতন সবচেয়ে তীব্র। সিটি অব লন্ডনে বাড়ির দাম কমেছে ১৮ শতাংশ, কেনসিংটন অ্যান্ড চেলসিতে ১৬.৫ শতাংশ এবং সিটি অব ওয়েস্টমিনস্টারেও উল্লেখযোগ্য দরপতন হয়েছে। বিশেষ করে কেনসিংটন অ্যান্ড চেলসিতে গড় বাড়ির দাম নেমে এসেছে £১.১৯ মিলিয়নে, যা এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে সর্বনিম্ন এবং আগের সর্বোচ্চ £১.৬ মিলিয়ন থেকে অনেক কম।

অন্যদিকে, লন্ডনের তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী বরোগুলোতে চিত্র ভিন্ন। বার্কিং অ্যান্ড ড্যাগেনহ্যাম, ব্রমলি ও লুইশামের মতো এলাকায় বাড়ির দাম এখনও বাড়ছে। হ্যাভারিং বরোতে, যেখানে রমফোর্ড অবস্থিত, সেখানে দাম বেড়েছে ৫.৩ শতাংশ। এসব এলাকায় চলতি শরতে গড় বাড়ির দাম ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।

নাইট ফ্র্যাঙ্কের যুক্তরাজ্য আবাসিক গবেষণা বিভাগের প্রধান টম বিল ফিনান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, লন্ডনের বাজার এখন একটি “দুই-গতির” বাস্তবতায় চলছে। তার মতে, প্রাইম এলাকাগুলো বেশি করের চাপে রয়েছে, বিশেষ করে উচ্চমূল্যের সম্পত্তির ওপর স্ট্যাম্প ডিউটি বেশি হওয়ায়। পাশাপাশি এসব এলাকা রাজনৈতিক ঝুঁকির প্রতিও বেশি সংবেদনশীল।

শরৎকালীন বাজেটে চ্যান্সেলর র‍্যাচেল রিভস £২ মিলিয়নের বেশি মূল্যের বাড়ির ওপর ম্যানশন ট্যাক্স সারচার্জ ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে £২ মিলিয়নের বেশি মূল্যের সম্পত্তির জন্য নতুন ‘হাই-ভ্যালু কাউন্সিল ট্যাক্স সারচার্জ’ অনুমোদন দেওয়া হয়, যেখানে করের হার £২,৫০০ থেকে শুরু করে £৭,৫০০ পর্যন্ত হতে পারে। এই পদক্ষেপে ২০২৯–৩০ অর্থবছরে প্রায় £৪০০ মিলিয়ন রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রাইম লন্ডনের বাজারে চাপ নতুন নয়। ২০১০-এর দশকের মাঝামাঝি সময় থেকেই এসব এলাকায় মূল্যবৃদ্ধি থেমে যায়। অতিরিক্ত দাম, মর্টগেজ নীতিমালার পরিবর্তন এবং ব্যয় বৃদ্ধির ফলে বাজার ধীরে ধীরে স্থবির হয়ে পড়ে।

জুপলা’র নির্বাহী পরিচালক রিচার্ড ডোনেল বলেন, বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের পর লন্ডন বিনিয়োগকারীদের প্রধান আকর্ষণ ছিল। তবে ব্রেক্সিট গণভোটের পর থেকে লন্ডনের আবাসন বাজার কার্যত স্থবির হয়ে গেছে এবং বিশ্ব শহর হিসেবে লন্ডনের অবস্থানও কিছুটা দুর্বল হয়েছে।

রাইটমুভের গবেষণা অনুযায়ী, সামনে বছরগুলোতেও লন্ডনের বাড়ির দাম খুব বেশি বাড়ার সম্ভাবনা নেই। ২০২৬ সালে লন্ডনে গড় দাম বাড়তে পারে মাত্র এক শতাংশের একটু বেশি, যেখানে যুক্তরাজ্যের অন্যান্য অঞ্চলে গড় মূল্যবৃদ্ধি দুই থেকে তিন শতাংশ হতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

সূত্রঃ সিটি এ এম \ ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস

এম.কে

আরো পড়ুন

মেটপুলিশে বর্ণবাদ, বিবিসিতে প্রচারের পর বিরূপ পরিস্থিতি

যুক্তরাজ্যে এপিং ফরেস্টে অভিবাসী হোটেল বন্ধে হাইকোর্টের রায়

সেনাবাহিনীর কুচকাওয়াজে অংশ নিতে না পারায় ক্ষমা চাইলেন প্রিন্সেস অব ওয়েলস