ভিজিট ভিসায় কানাডায় এসে সম্প্রতি হাজারো ভিজিটর রাতে বাসে ঘুমাচ্ছেন। তারা তাদের ফেলে আসা দেশে বিভিন্ন সমস্যার কথা জানিয়ে কানাডা সরকারের কাছে আশ্রয়ের দাবি জানিয়েছেন। আশ্রয়ের জন্য বিপুলসংখ্যক আবেদনকারীকে নিয়ে বিপাকে পড়েছে কানাডার প্রাদেশিক ও সিটি গভর্নমেন্ট। অনেকেরই কোনো থাকার জায়গা না থাকায় সরকারি সেন্টারগুলোয় রাতে ঘুমানোর জন্য যাচ্ছেন। কিন্তু সেগুলো ধারণক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। বিশেষ করে মন্ট্রিয়ল ও টরন্টো শহরে এই সংখ্যা অনেক বেশি। সে ক্ষেত্রে অনেককে বাসে বসে ঘুমাতে হচ্ছে।
টরন্টোর সরকারি শেল্টার সেন্টারগুলো ধারণক্ষমতার বাইরে চলে যাওয়ায় তাদের জায়গা দিতে না পেরে সিটি গভর্নমেন্ট রাতে ট্রানজিট বাসের ব্যবস্থা করেছে অন্য জায়গায় আবেদনকারীদের নেওয়ার জন্য। সেই বাসগুলিতেই রাত্রী যাপন করছেন আশ্রয়প্রার্থীরা। ভোরে আবেদনকারীদের বাস থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। উল্লেখ্য যে, বাসগুলোতে কোনো টয়লেটের ব্যবস্থা নেই।
অন্যদিকে কানাডার ছয়টি প্রদেশে গত সপ্তাহ পর্যন্ত ৭ হাজার ৩০০ আশ্রয় দাবিকারী ৪ হাজার হোটেল রুমে ছিলেন। এত বিপুলসংখ্যক আশ্রয়প্রার্থীর জন্য হোটেলের ভাড়া গুনতে হচ্ছে প্রাদেশিক ও সিটি গভর্নমেন্টকে। এ কারণে অভিবাসন মন্ত্রী মার্ক মিলার গত বুধবার এ সমস্যার সাময়িক সমাধানের জন্য ৩৬২ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দের ঘোষণা দিয়েছেন। এ অর্থের মধ্যে কুইবেক প্রদেশকে দেওয়া হবে ১০০ মিলিয়ন। বাকি ডলার অন্য প্রদেশকে আশ্রয়প্রার্থীদের আনুপাতিক হারে ভাগ করে দেওয়া হবে। অন্যদিকে মন্ত্রী মার্ক মিলার ঘোষণা দেন ভবিষ্যতে এত বিপুলসংখ্যক ভিজিটর যেন কানাডায় আসতে না পারেন, সে বিষয়ে তারা পদক্ষেপ নেবেন।
সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে হাজারো মানুষ ভিজিট ভিসার সহজনীতির কারণে কানাডায় এসে বিপাকে পড়ছেন। কানাডার ভিসা যেহেতু ডকুমেন্ট বেজড, অর্থাৎ কোনো ইন্টারভিউ হয় না, সে কারণে অনেকে বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে ভুয়া ডকুমেন্ট বানিয়ে কানাডায় আসছেন। এজেন্সিগুলো আসার আগে তাদের এভাবে বোঝাচ্ছে, কানাডায় এসে তারা একটি চাকুরি বা খুব সহজে আশ্রয়ের আবেদনের দাবি করে কানাডায় থেকে যেতে পারবেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, যারা আসছেন তারা না বুঝে আসার কারণে কানাডায় কোনো চাকুরি পাচ্ছেন না।
কানাডায় বিদেশিদের চাকরি দেওয়া হয় তখনই, যখন কানাডার ভেতর থেকে কোনো লোক পাওয়া যায় না। যারা আসছেন, তারা সেই ধরনের যোগ্যতা দেখাতে পারছেন না। অন্যদিকে যারা ভিজিট ভিসায় এসেছেন, তারা ভালো চাকুরি, ব্যাংকে অনেক টাকা এবং তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা অনেক ভালো—এ ডকুমেন্ট বানিয়ে কানাডার ভিসা নিয়েছেন। কিন্তু যখন তারা অ্যাসাইলাম ক্লেম করছেন, তখন অন্য ধরনের ডকুমেন্ট বানাতে হচ্ছে। আর এ কাজ যেসব এজেন্সি কানাডায় বসে করছে, তারা ৮ থেকে ১০ হাজার ডলার দাবি করছে। অন্যদিকে অ্যাসাইলাম ক্লেম করলেই যে কানাডায় কেউ স্থায়ীভাবে থেকে যেতে পারবেন, তার কোনোই নিশ্চয়তা নেই। কানাডার জীবনযাত্রার ব্যয় বেশি হওয়ার কারণে এখন অনেকেই মানবেতর জীবন যাপন করছেন। যারা ভিজিট ভিসায় এসে কানাডায় থেকে যাওয়ার চিন্তা করছেন, তাদের সবকিছু বুঝেশুনে কারও প্ররোচনায় না পরে সিদ্ধান্ত গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট মহল।
এম.কে
০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪