13.7 C
London
June 6, 2025
TV3 BANGLA
বাংলাদেশ

বাংলাদেশে ধনীদের প্রকৃত তালিকা নেইঃ তথ্যের অভাব, গোপন সম্পদ, দুর্বল নজরদারি মূল কারণ

বাংলাদেশে ধনীদের প্রকৃত তালিকা তৈরি করা দীর্ঘদিন ধরে সম্ভব হয়নি। এর প্রধান কারণ হলো আয় ও সম্পদের স্বচ্ছ তথ্যপ্রবাহের অভাব। দেশের বড় ব্যবসায়ীরা সাধারণত তাদের প্রতিষ্ঠান শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত করেন না, ফলে লভ্যাংশ কিংবা ব্যক্তিগত আয়ের তথ্য জনসমক্ষে আসে না। এর ফলে সম্পদের পরিমাণ, বৃদ্ধির ধারা বা আয়করের পরিমাণ নির্ধারণ করাও দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে।

অনেক ধনী ব্যক্তি তাদের ব্যক্তিগত সম্পদ—যেমন বাড়ি, গাড়ি, জমি—নিজেদের নামে না রেখে কোম্পানির নামে রাখেন। এমনকি জীবনযাত্রার খরচ, যেমন পরিবারের যাতায়াত বা আবাসন ব্যয়, প্রতিষ্ঠান থেকেই বহন করা হয়। এতে করে ব্যক্তি করদাতার আয়কর বিবরণীতে সম্পদের প্রকৃত চিত্র প্রতিফলিত হয় না। কর ফাঁকি রোধে কার্যকর নজরদারি ব্যবস্থা না থাকায় এই প্রবণতা আরও বাড়ছে।

একইসঙ্গে দেখা যায়, দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ অনেকেই আত্মীয়স্বজন বা পরিবারের সদস্যদের নামে সম্পদে পরিণত করেন। তবে কর নথিতে এই সম্পদ ও আয়ের উৎস থাকে না। ফলে বিলাসবহুল জীবনযাপন সত্ত্বেও তারা কর বিবরণীতে ‘মধ্যবিত্ত’ হিসেবেই থেকে যান। এতে কর আদায়ের ভিত্তি সংকুচিত হয় এবং ধনী-গরিবের বৈষম্য বাড়ে।

জমি বা ফ্ল্যাট কেনাবেচার সময় বাজারমূল্যের চেয়ে অনেক কম মূল্য ঘোষণা করা হয়। মৌজা মূল্যে লেনদেনের কারণে প্রকৃত অর্থ লেনদেন কর নথিতে উঠে আসে না। এতে করে বিপুল পরিমাণ টাকা ‘কালোটাকা’ হিসেবে অর্থনীতিতে প্রবাহিত হয়, যার কোনো নিরীক্ষণ থাকে না। একই জমির দাম কর ফাইলে দশ লাখ টাকায় দেখানো হলেও, তার প্রকৃত বাজারমূল্য হতে পারে এক কোটি টাকা।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আয়কর বিভাগে জনবল ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতার অভাব রয়েছে। দেশে ১ কোটির বেশি টিআইএনধারী করদাতা থাকলেও, রিটার্ন জমা দেন মাত্র ৪০ লাখের মতো। এত বিশালসংখ্যক রিটার্ন বিশ্লেষণ করে কার কত সম্পদ রয়েছে বা কে কর ফাঁকি দিচ্ছেন—তা খুঁজে বের করাটা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে ধনীদের বড় অংশ রয়ে যাচ্ছেন রাষ্ট্রের নজরদারির বাইরে।

২০২১-২২ অর্থবছরের সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ৪ কোটি টাকার বেশি সম্পদধারী মাত্র ১৪ হাজার ৮৫৪ জন করদাতা সারচার্জ দিয়েছেন। অথচ বাস্তবে বিলাসবহুল জীবনযাপনকারী, দামি গাড়ি ব্যবহারকারী, উচ্চমূল্যের বাড়িতে বসবাসকারী ব্যক্তির সংখ্যা এর চেয়ে বহু গুণ বেশি। এ থেকেই স্পষ্ট যে, করব্যবস্থায় একটি ‘আপাত দারিদ্র্য’র মুখোশ পরে আছেন বহু ধনী ব্যক্তি।

উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও যদি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির বাধ্যবাধকতা, আয়-ব্যয়ের স্বচ্ছতা এবং সম্পদের বাস্তব মূল্যায়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেত, তাহলে প্রকৃত ধনীদের তালিকা প্রকাশ করা সম্ভব হতো বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞ অর্থনীতিবিদেরা। কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তি ও আইনি কাঠামোর দুর্বলতায় এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে এই কাজটি এখনও অধরাই থেকে গেছে। ফলে কর ব্যবস্থার ন্যায্যতা যেমন প্রশ্নবিদ্ধ, তেমনি জাতীয় অর্থনীতিতেও গড়ে উঠছে এক প্রকার অদৃশ্য ধনী শ্রেণি, যারা সব সুযোগ ভোগ করলেও রাষ্ট্রের কাছে দায়বদ্ধ নন।

এম.কে
০২ জুন ২০২৫

আরো পড়ুন

যুক্তরাজ্যে ২০৩০ সাল নাগাদ রফতানি ছাড়াবে ১১০০ কোটি ডলার

ফ্রান্সের মুসলিম নেতাদের ১৫ দিনের আলটিমেটাম

অনলাইন ডেস্ক

বাংলাদেশের জন্য ওয়ার্ক পারমিট ভিসা চালু নিয়ে এবার সুখবর দিল যে দেশ