15.1 C
London
June 3, 2025
TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

বিতর্কিত প্রতিষ্ঠান পেল ব্রিটিশ নাগরিকত্ব পরীক্ষার দায়িত্ব

ব্রিটিশ নাগরিকত্ব পরীক্ষার দায়িত্ব পেল এমন একটি সংস্থা, যার মালিক প্রতিষ্ঠান এক সময় যুক্তরাজ্যে ইংরেজি ভাষা পরীক্ষা বা ল্যাঙ্গুয়েজ টেস্টের ক্ষেত্রে ভয়াবহ জালিয়াতি কেলেঙ্কারির কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। নতুন করে দায়িত্বপ্রাপ্ত এই সংস্থার নাম PSI সার্ভিসেস, যা যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পরীক্ষা ও মূল্যায়ন সংস্থা এডুকেশনাল টেস্টিং সার্ভিসেস (ETS)-এর অধীনে পরিচালিত হচ্ছে।

গত মাসে হোম অফিস PSI-কে তিন বছরের জন্য ১৯.৮ মিলিয়ন পাউন্ডের চুক্তি প্রদান করেছে। চুক্তির আওতায় সংস্থাটি যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্ব পরীক্ষার মূল অংশ লাইফ ইন দ্য ইউকে টেস্ট ডিজাইন ও বাস্তবায়ন করবে।

এই পরীক্ষা ব্রিটিশ নাগরিকত্ব পেতে ইচ্ছুক প্রার্থীদের জন্য বাধ্যতামূলক, যেখানে প্রার্থীদের ব্রিটিশ ইতিহাস, সংস্কৃতি, আইন ও মূল্যবোধ সম্পর্কে জ্ঞান যাচাই করা হয়।

ETS ২০১১-২০১৫ সালের মধ্যে অভিবাসনের জন্য ইংরেজি ভাষা পরীক্ষার দায়িত্বে ছিল। কিন্তু ২০১৪ সালে বিবিসির গোপন অনুসন্ধানে প্রকাশ পায় যে, প্রক্সি পরীক্ষার্থী এবং দুর্নীতিপূর্ণ তত্ত্বাবধায়করা পরীক্ষাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে। ETS নিজস্ব মূল্যায়নে জানায়, ৫৮ শতাংশ পরীক্ষার্থী জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছিল, যা পরে ৩৬,০০০ ভিসা বাতিল এবং ২,৫০০ জনকে যুক্তরাজ্য থেকে বিতাড়নের মতো চরম সিদ্ধান্তে রূপ নেয়।

লেবার এমপি স্টিফেন টিমস তখন বলেছিলেন, ETS তথ্যের উপর ভিত্তি করে যুক্তরাজ্য সরকার অসংখ্য মানুষকে হয়রানি করেছে।

এই ঘটনার পর হোম অফিস ETS-এর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করলেও, ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ETS PSI সার্ভিসেস অধিগ্রহণ করে আবার যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্ব পরীক্ষার সেক্টরে ফিরে আসে।

ETS-এর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে PSI একটি স্বতন্ত্র সত্তা হিসেবে কাজ করছে এবং এই চুক্তির কার্যকারিতা পরিচালনায় ETS কোনো হস্তক্ষেপ করছে না।

সম্প্রতি নাগরিকত্ব পরীক্ষা জালিয়াতির একাধিক ঘটনায় আবারো পরীক্ষা ব্যবস্থার নিরাপত্তা প্রশ্নের মুখে পড়েছে।

২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে কেন্টের এক নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়, যিনি ছদ্মবেশ ও উইগ ব্যবহার করে অন্তত ১২ জনের পক্ষে পরীক্ষা দেন। কয়েক মাস আগেই এনফিল্ডের এক ৬১ বছর বয়সী নারী আদালতে স্বীকার করেন যে তিনি ১৩ জনের জন্য লাইফ ইন দ্য ইউকে টেস্টে প্রতারণা করেন।

হোম অফিসের লন্ডন বিভাগের তদন্ত প্রধান ক্রিস ফস্টার বলেন,“এই ধরনের প্রতারণা শুধু আইন লঙ্ঘন নয়, বরং যুক্তরাজ্যের নিরাপত্তা ও অভিবাসন ব্যবস্থার প্রতি চরম অবজ্ঞার প্রতিফলন।”

এই চুক্তির পাশাপাশি আরেকটি সংস্থা, Reed in Partnership, একই সময়কালে নাগরিকত্ব পরীক্ষা উন্নয়ন ও বাস্তবায়নের জন্য হোম অফিস থেকে অনুমোদন পেয়েছে। দুই সংস্থা কীভাবে দায়িত্ব ভাগাভাগি করবে, সে বিষয়ে হোম অফিস কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

ETS-এর বিতর্কিত অতীত, PSI-এর বর্তমান ভূমিকা এবং একাধিক প্রতারণার ঘটনায় লাইফ ইন দ্য ইউকে টেস্টের বিশ্বাসযোগ্যতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যারা এই পরীক্ষা সত্যিকারভাবে দিচ্ছেন তাদের প্রতি এই পরিস্থিতি বৈষম্য ও অবিচারের ঝুঁকি সৃষ্টি করছে।

ব্রিটিশ নাগরিকত্ব পরীক্ষার ন্যায্যতা, স্বচ্ছতা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিস্তৃত তদন্ত এবং স্বাধীন তদারকি এখন সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে।

সূত্রঃ দ্য টেলিগ্রাফ / বিবিসি

এম.কে
৩১ মে ২০২৫

আরো পড়ুন

যুক্তরাজ্যে কেয়ার ওয়ার্কার ভিসার গোলকধাঁধা ফেঁসে গিয়েছেন প্রবাসী কর্মীরা

যুক্তরাজ্যের দিকে ধেয়ে আসছে ধুলিঝড়

যুক্তরাজ্য কারাগার হতে পালিয়েছে ভয়ঙ্কর এক অপরাধী