TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

ব্রিটিশ এশীয় পরিবারকে আহ্বানঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের নায়ক পূর্বপুরুষদের গল্প লিখে রাখুন

যুক্তরাজ্যে বসবাসরত ব্রিটিশ এশীয় পরিবারগুলোকে আহ্বান জানানো হয়েছে যেন তারা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটেনের হয়ে লড়া তাদের আত্মীয়দের গল্প, ছবি ও স্মৃতি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ করেন। এই উদ্যোগের লক্ষ্য—দীর্ঘদিন ধরে ইতিহাসের প্রান্তে থাকা দক্ষিণ এশীয় সেনাদের অবদানকে জাতির স্মৃতিতে স্থায়ীভাবে স্থান দেওয়া।

রয়্যাল ব্রিটিশ লিজিয়নের সহযোগিতায় পরিচালিত “মাই ফ্যামিলি লেগেসি” প্রকল্পটি ইতিমধ্যে একটি অনলাইন আর্কাইভ তৈরির কাজ শুরু করেছে। এতে যুক্ত করা হচ্ছে ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, নেপাল ও শ্রীলঙ্কা থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেওয়া সৈন্যদের গল্প, যারা মিলে গড়ে তুলেছিলেন ইতিহাসের সবচেয়ে বড় স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী—সংখ্যায় ২৫ লাখেরও বেশি।

ব্রিটিশ থিংকট্যাংক ব্রিটিশ ফিউচার ও সংবাদপত্র ইস্টার্ন আই-এর যৌথ এই প্রকল্পটি এশীয় পরিবারগুলোকে আহ্বান জানিয়েছে—তারা যেন তাদের পূর্বপুরুষদের নাম, ছবি বা স্মৃতিচারণ শেয়ার করেন। কারণ সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, যুক্তরাজ্যের অর্ধেক নাগরিকই জানেন না যে ভারতীয় সেনারা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটেনের হয়ে লড়েছিলেন। এমনকি ব্রিটিশ এশীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যেও মাত্র ৬০ শতাংশ মানুষ এ তথ্য সম্পর্কে সচেতন।

ব্রিটিশ সংসদের প্রতিরক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান তন্মনজিত সিং ধেসি এমপি সম্প্রতি লন্ডনে আয়োজিত এক স্মারক অনুষ্ঠানে দুই প্রয়াত ভেটেরান—হাবিলদার মেজর রাজিন্দর সিং ধাত্ত এমবিই এবং সার্জেন্ট মুহাম্মদ হোসেন—এর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। ধাত্ত ছিলেন কোহিমা যুদ্ধে জাপানি বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী সৈন্যদের একজন, আর হোসেন মাত্র ১৬ বছর বয়সে বাড়ি থেকে পালিয়ে যোগ দেন ও ইতালির মন্টে ক্যাসিনো যুদ্ধে অংশ নেন। তাঁদের কীর্তি ইতিমধ্যে “মাই ফ্যামিলি লেগেসি”র অনলাইন প্ল্যাটফর্মে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

ধেসি বলেন, কৃষ্ণাঙ্গ ও এশীয় কমনওয়েলথ সদস্যদের আত্মত্যাগ ও অবদান যেন ইতিহাস থেকে “মুছে না যায় বা উপেক্ষিত না থাকে”, সে দায়িত্ব আমাদের সবার। তিনি এটিকে তাঁর ব্যক্তিগত নৈতিক দায়িত্ব হিসেবেও দেখেন, কারণ তাঁর নিজের পূর্বপুরুষও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটেনের হয়ে লড়েছিলেন।

সার্জেন্ট হোসেনের নাতি ইজাজ হোসেন বলেন, “আমাদের ‘শ্রেষ্ঠ প্রজন্মের’ গল্প সংরক্ষণ করা অপরিহার্য। কারণ এই যৌথ ইতিহাস প্রমাণ করে—ভিন্ন পটভূমি থেকেও মানুষ এক উদ্দেশ্যে একত্র হলে, ঐক্যের শক্তিতেই যেকোনো চ্যালেঞ্জ জয় করা সম্ভব।”

মেজর সিং ধাত্তের নাতনি অমৃত কৌর ধাত্ত বলেন, “কমনওয়েলথ ও সংখ্যালঘু সৈন্যদের অবদান ইতিহাসের মূলধারায় খুব কমই আলোচিত হয়। এখনই সময় সেই অবহেলিত অধ্যায়গুলো তুলে ধরার, নইলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে পারবে না।”

ব্রিটিশ ফিউচারের পরিচালক সুন্দর কাটওয়ালা বলেন, “এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য মানুষকে উৎসাহিত করা—তারা যেন সাহস, অবদান ও আত্মত্যাগের পারিবারিক গল্পগুলো নথিভুক্ত করেন এবং শেয়ার করেন। কারণ স্মরণের ঐতিহ্য আজও আধুনিক, বহুধর্মী ব্রিটেনকে এক সূত্রে বাঁধতে পারে।”

রয়্যাল ব্রিটিশ লিজিয়নের পরিচালক গেইল ওয়াল্টার্স বলেন, “আমরা চাই, আরও বেশি পরিবার স্মরণ দিবসের মতো অনুষ্ঠানে নিজেদের অন্তর্ভুক্ত মনে করুক। দক্ষিণ এশীয় সেনাদের পরিবারের সহযোগিতায় ইতিহাসের পূর্ণাঙ্গ চিত্র তুলে ধরা সম্ভব হবে—যেখানে তাদের অবদান জাতির গল্পের অবিচ্ছেদ্য অংশ।”

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে

আরো পড়ুন

যুক্তরাজ্যে চাইল্ড কেয়ার ঘাটতি, ১ হাজার পাউন্ড প্রণোদনা ঘোষণা

ব্রিটেনের ইতিহাসে প্রথম মুসলিম নারী বিচারমন্ত্রী শাবানা মাহমুদ

যুক্তরাজ্যে প্রথম অবৈধ ওজন কমানোর ওষুধ কারখানা ধ্বংস, উদ্ধার লক্ষাধিক ইনজেকশন পেন