22 C
London
June 22, 2025
TV3 BANGLA
বাংলাদেশ

ভুয়া পরিচয়ে এক যুগ ধরে বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরিঃ ধরা পড়ল ভয়াবহ প্রতারণা

বাংলাদেশ ব্যাংকে এক যুগ ধরে ভুয়া পরিচয়ে চাকরি করার চাঞ্চল্যকর তথ্য উদঘাটিত হয়েছে। প্রকৃত নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তি না হয়েও, তার নাম ও পরিচয় ব্যবহার করে ১২ বছর ধরে চাকরি করে গেছেন এক প্রতারক। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর নিয়োগ বাতিলের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

ঘটনার শুরু ২০১৩ সালে। ওই বছর বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক পদে নিয়োগ পান মো. আব্দুল ওয়ারেছ আনসারী। একই সময় তিনি বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) প্রশাসন ক্যাডারেও চূড়ান্তভাবে মনোনীত হন এবং যোগ দেন প্রশাসন ক্যাডারে। বর্তমানে তিনি নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে কর্মরত।

তবে বাংলাদেশ ব্যাংকে তার অনুপস্থিতির সুযোগ কাজে লাগিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগে কর্মরত কর্মকর্তা মো. শাহজাহান মিঞা নিজের ভাগনেকে সেখানে নিয়োগ দেন। প্রতারণার অংশ হিসেবে ওই ভাগনের নাম রাখা হয় আব্দুল ওয়ারেছ আনসারী, এবং নিয়োগের ছবিও পরিবর্তন করা হয়। এমনকি জাতীয় পরিচয়পত্রে জাল ছবি সংযোজন করে আইডেন্টিটি তৈরি করা হয়।

ভুয়া পরিচয়ে ওই ব্যক্তি বাংলাদেশ ব্যাংকে ১২ বছর চাকরি করেন এবং এই সময়ে দুটি পদোন্নতি পেয়ে যুগ্ম পরিচালক পদে উন্নীত হন। তার কর্মকাণ্ড দীর্ঘদিন ধামাচাপা থাকলেও সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ তদন্তে বিষয়টি ধরা পড়ে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “ঘটনাটি নজরে আসার পরপরই তার নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আরও কেউ এমন অনিয়মে জড়িত রয়েছেন কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, নিয়োগের সময় নিয়োগপত্র, জাতীয় পরিচয়পত্র ও ছবি জালিয়াতির মাধ্যমে পরিবর্তন করা হয়। মামা-ভাগনের যোগসাজশে এ প্রতারণা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছিল। এ ঘটনায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মাধ্যমে তদন্ত ও দায়ীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানানো হয়েছে।

এ ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করে প্রকৃত আব্দুল ওয়ারেছ আনসারী বলেন, “২০১৩ সালে আমি প্রশাসন ক্যাডারে যোগ দিই। কিছুদিন আগে বন্ধুর মাধ্যমে জানতে পারি, আমার নাম ব্যবহার করে কেউ বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরি করছেন। বিষয়টি জানার পর খুবই হতবাক হই। এটা গুরুতর অপরাধ, আমি আশা করি যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

তিনি আরও বলেন, “সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন ‘আইবাস’ সিস্টেমের মাধ্যমে হয়, যেখানে জাতীয় পরিচয়পত্র লাগে। যদি বাংলাদেশ ব্যাংক সেই পদ্ধতি অনুসরণ করত, তাহলে হয়তো এটি আগেই ধরা পড়ত।”

ঘটনাটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে, এ ধরনের প্রতারণা ঘটতে পারার পেছনে রয়েছে দুর্বল ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া এবং মানবসম্পদ বিভাগের অভ্যন্তরীণ নজরদারির অভাব।

বিগত সরকার আমলে বাংলাদেশ ব্যাংকে নিয়োগ নিয়ে বিভিন্ন সময় বয়স পরিবর্তন, স্বজনপ্রীতি, এমনকি পরীক্ষার ফলাফল নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তবে সেসব অভিযোগের বেশিরভাগই ধামাচাপা পড়ে যায় অথবা তদন্তেই থেমে যায়।

একটি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ভুয়া পরিচয়ে এক যুগ ধরে চাকরি করার ঘটনা নিঃসন্দেহে গভীর নিরাপত্তাগত ও নৈতিক দুর্বলতার পরিচয় বহন করে। দ্রুত তদন্তের মাধ্যমে দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে ভবিষ্যতে এমন প্রতারণা আরও উৎসাহ পাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

সূত্রঃ বাংলাদেশ ব্যাংক, প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের বার্তা, প্রথম আলো।

এম.কে
২৯ মে ২০২৫

আরো পড়ুন

বিলাসবহুল ৮টি গাড়ি, পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জয়ের সম্পৃক্ততা পেয়েছে এফবিআই

আমার মায়ের মতো একই পরিণতির হুমকি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকেঃ সজীব ওয়াজেদ

ঈদের আগে ফের বাড়ল স্বর্ণের দাম, দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ