3.5 C
London
April 8, 2025
TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

মাত্র £৫ মূল্যের রক্ত পরীক্ষাই হাজারের বেশি হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারেঃ গবেষণা

যুক্তরাজ্যে একটি সাধারণ ও কম খরচের রক্ত পরীক্ষা— হৃদরোগ ও স্ট্রোক প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে।

ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশন (BHF)-এর অর্থায়নে পরিচালিত এবং Journal of the American College of Cardiology-তে প্রকাশিত এই গবেষণায় বলা হয়েছে, রোগীদের রক্তে ট্রোপোনিন নামক প্রোটিনের মাত্রা যাচাই করলে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেক বেশি নিখুঁতভাবে নির্ণয় করা সম্ভব।

ট্রোপোনিন হৃদপেশীর কোষে থাকা একটি প্রোটিন, যা হৃদপিণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হলে রক্তে নির্গত হয়। বর্তমানে ট্রোপোনিন পরীক্ষা সাধারণত হার্ট অ্যাটাক হওয়ার পর তা শনাক্ত করতে ব্যবহৃত হয়।

তবে গবেষণায় বলা হচ্ছে, এই সাশ্রয়ী পরীক্ষা দিয়ে “নীরব” বা অদৃশ্য হৃদপিণ্ডের ক্ষতি শনাক্ত করা সম্ভব, যা ভবিষ্যতে হৃদরোগ বা স্ট্রোকের সম্ভাবনা নির্ণয়ে সহায়তা করতে পারে।

এই পরীক্ষা সহজেই জিপি ক্লিনিকে সাধারণ কোলেস্টেরল পরীক্ষার সাথে করানো সম্ভব। চিকিৎসকেরা সময়মতো প্রতিরোধমূলক চিকিৎসা — যেমন স্ট্যাটিন ওষুধ — দিতে পারেন, যা হৃদরোগ ও স্ট্রোক প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে পারে।

গবেষণার প্রধান লেখক, অধ্যাপক অনুপ শাহ বলেন, “ট্রোপোনিন এমনকি স্বাভাবিক মাত্রার মধ্যেই থাকলেও তা নীরব হৃদপেশী ক্ষতির শক্তিশালী নির্দেশক। এটি আমাদের পূর্বাভাসে আরও এক স্তরের নির্ভুলতা যোগ করে। আমরা যত বেশি সম্ভব উচ্চ ঝুঁকির মানুষ চিহ্নিত করতে চাই, যাতে কেউ প্রতিরোধমূলক চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত না হয়।”

গবেষণায় দেখা যায়, যাদের রক্তে ট্রোপোনিনের মাত্রা বেশি, তারা পরবর্তী ১০ বছরে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকিতে বেশি রয়েছেন। যাদের ঝুঁকি মধ্যম পর্যায়ে ধরা পড়ে, তাদের মধ্যে প্রতি ৫০০ জনে একজনের হৃদরোগ বা স্ট্রোক এই পরীক্ষা দিয়ে প্রতিরোধ করা সম্ভব।

গবেষকেরা ইউরোপ ও আমেরিকার ৬২,০০০ জনের স্বাস্থ্য তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন। ট্রোপোনিন ছাড়াও বয়স, রক্তচাপ, ডায়াবেটিসের ইতিহাস, ধূমপানের অবস্থা ও কোলেস্টেরলের মতো প্রচলিত ঝুঁকি উপাদান বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী দশ বছরে তারা হৃদরোগ বা স্ট্রোক করেছেন কিনা তা ট্র্যাক করা হয়।

বর্তমানে ঝুঁকি নির্ণয়ের প্রচলিত অ্যালগরিদম মূলত কোলেস্টেরলের উপর ভিত্তি করে কাজ করে। কিন্তু গবেষণায় দেখা যায়, ট্রোপোনিন ফলাফলের মাধ্যমে এই পূর্বাভাস ৪ গুণ পর্যন্ত বেশি নির্ভুল হয়।

বিশেষ করে যেসব রোগী “মধ্যম ঝুঁকির” অন্তর্ভুক্ত, ট্রোপোনিন পরীক্ষার মাধ্যমে তাদের মধ্যে অনেককে উচ্চ ঝুঁকির তালিকায় স্থানান্তর করা সম্ভব হয়েছে। এই শ্রেণির মানুষ চিকিৎসকদের জন্য জটিলতা তৈরি করে, কারণ তারা উচ্চ ঝুঁকিতে না থাকলেও, তাদের ঝুঁকি যথেষ্ট স্পষ্ট নয় প্রতিরোধমূলক চিকিৎসার সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য।

গবেষণায় দেখা গেছে, ট্রোপোনিন পরীক্ষার মাধ্যমে মধ্যম ঝুঁকির ৮% মানুষকে উচ্চ ঝুঁকিতে শ্রেণিকরণ করা গিয়েছে। তাদেরকে স্ট্যাটিন জাতীয় ওষুধ দিলে ভবিষ্যতের অনেক হৃদরোগ বা স্ট্রোক প্রতিরোধ করা সম্ভব।

BHF-এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা অধ্যাপক ব্রায়ান উইলিয়ামস বলেন, “ঝুঁকি নির্ধারণে আধুনিক অ্যালগরিদম ডাক্তারদের অনেক সাহায্য করছে। কিন্তু যুক্তরাজ্যে প্রতিবছর প্রায় ১ লাখ মানুষ হার্ট অ্যাটাক নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন, যা বলছে এখনও অনেক উন্নতির জায়গা রয়েছে। এই নতুন তথ্য আমাদের আরও বেশি মানুষকে চিহ্নিত করতে সহায়তা করবে, যারা উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছেন, এবং তাদের ঝুঁকি কমাতে চিকিৎসা ও পরামর্শ দেওয়া সম্ভব হবে।”

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে
০৮ এপ্রিল ২০২৫

আরো পড়ুন

বেতন বিরোধে লন্ডনে ৪৮ ঘণ্টার বাস ধর্মঘট

যুক্তরাজ্যের রাজার সঙ্গে বিবাদ চান না মেগান মর্কেল

নিউজ ডেস্ক

ইউকে সরকার আশ্রয়প্রার্থী হোটেল হামলার ‘সহযোগী’