TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

মানবাধিকার ভঙ্গের অভিযোগে গাজার দুই পরিবারের মামলা যুক্তরাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে

যুক্তরাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে গাজায় আটকে থাকা পরিবারের দুই পিতা আইনি পদক্ষেপ নিয়েছেন। তারা দাবি করেছেন, সরকার কয়েক মাস আগে উদ্ধার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাস্তবায়নে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। আইন সংস্থা Leigh Day জানিয়েছে, এই দুই পরিবারসহ আরও কয়েকজন বিচ্ছিন্ন পরিবার সরকারের প্রতিশ্রুত সহায়তা না পাওয়ায় ন্যায়বিচারের আশায় আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন।

একজন ব্রিটিশ নাগরিক, যিনি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, জানান—“আমি চাইনি আদালতে যাওয়া হোক, কিন্তু কোনো উপায় ছিল না। আমি শুধু চাই আমার সন্তানদের সেই ভয়াবহ জীবন থেকে মুক্তি দেওয়া হোক।” তিনি ২০২৩ সালের যুদ্ধের আগে যুক্তরাজ্যে মানবিক সুরক্ষা পেয়েছিলেন। আগস্টে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাকে জানায়, পারিবারিক পুনর্মিলনের অনুমোদনের পর তার স্ত্রী-সন্তানদের দেশে আনা হবে। কিন্তু কয়েক মাস পার হলেও কিছুই ঘটেনি।

গাজা সিটির এই ৩৯ বছর বয়সী ব্যক্তি বলেন, “এটা যেন কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর আবার ফিরে যেতে বলা হচ্ছে।” তিনি জানান, ইসরায়েলের অব্যাহত হামলায় গাজায় এখনো যুদ্ধ পরিস্থিতি বিরাজ করছে, খাবার ও পানির সংকট ভয়াবহ, সাধারণ মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, চলমান সংঘাতে এখন পর্যন্ত মৃত্যু সংখ্যা ৬৭,০০০ ছাড়িয়েছে। জাতিসংঘ ইসরায়েলকে যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ ও গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে।

গত আগস্টে যুক্তরাজ্য সরকার ঘোষণা দিয়েছিল, গাজার অসুস্থ ও আহত শিশুদের উদ্ধার করবে। কিন্তু আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থা Médecins Sans Frontières বলেছে, সরকার অতি সীমিত পরিসরে সহায়তা দিচ্ছে। অক্টোবর মাসে যুক্তরাজ্য জানায়, তাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হওয়া প্যালেস্টাইনি শিক্ষার্থীরা প্রয়োজনে পরিবারকে সঙ্গে আনতে পারবে, তবে কেবল বিশেষ ক্ষেত্রে।

গাজায় থাকা ওই পিতা বলেন, “আমার সন্তানরাও ছাত্রছাত্রী। তাহলে কেন তাদের আনা হবে না?” তার পরিবার পুনর্মিলনের অনুমোদন পেয়েছে, কিন্তু বায়োমেট্রিক পরীক্ষার জন্য গাজা থেকে বাইরে যাওয়ার অনুমতি পাচ্ছে না। গাজায় কোনো ভিসা আবেদন কেন্দ্র না থাকায়, যুক্তরাজ্য সরকার জর্ডান হয়ে সীমান্ত পারাপারের নিশ্চয়তাও দেয়নি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, চলমান আইনি প্রক্রিয়া চলায় তারা এ বিষয়ে মন্তব্য করবে না। এদিকে, মানবাধিকার সংস্থা ও সংসদ সদস্যরা যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চল থেকে পরিবারের পুনর্মিলনের জন্য একটি বিশেষ স্কিম চালুর দাবি জানিয়ে আসছেন, ইউক্রেন যুদ্ধের পর যেমন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল।

গাজা সিটিতে ওই ব্যক্তির স্ত্রী, তিন সন্তান ও দত্তক নেওয়া ভাতিজা এখন আল-জাওয়িদা শিবিরের একটি তাঁবুতে বাস করছে। তার স্ত্রীকে এক ঘণ্টা হেঁটে যোগাযোগ করতে হয়। তিনি জানান, সন্তানদের ইসরায়েলি সেনারা ত্রাণ নিতে গেলে গুলি চালিয়েছে, আবার স্থানীয় গ্যাংরা তাদের কাছ থেকে খাবার ছিনিয়ে নিচ্ছে।

Leigh Day-এর আইনজীবী সারাহ ক্রো বলেন, “সরকার দুই মাস আগে উদ্ধার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, কিন্তু এখন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। একই পরিস্থিতিতে অন্য গোষ্ঠীকে উদ্ধার করা হলেও আমাদের ক্লায়েন্টদের প্রতি এই বৈষম্য শুধু অন্যায্য নয়, বেআইনিও।”

আরেকজন পিতা, যিনি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, তার ছয় সন্তানের সঙ্গে পুনর্মিলনের জন্য আলাদা আইনি পদক্ষেপ নিয়েছেন। তিনি জানান, তার পরিবার গাজায় তাঁবুতে দিন কাটাচ্ছে, কারণ তাদের বাড়ি ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংস হয়েছে। পরিবারটি এখন সম্পূর্ণভাবে দাতব্য সংস্থার খাদ্যসাহায্যের উপর নির্ভরশীল।

তিনি বলেন, “আমার সন্তানদের মে মাসেই যুক্তরাজ্যে আসার কথা ছিল। এখন পাঁচ-ছয় মাস পেরিয়ে গেছে।” এই পিতা ২০১৮ সালে হামাসের হাতে আটক ও নির্যাতনের পর গাজা থেকে পালিয়ে যুক্তরাজ্যে আসেন। বর্তমানে তিনি মানসিকভাবে বিধ্বস্ত, প্রায়ই কান্না ও চিৎকারে ভেঙে পড়েন।

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে

আরো পড়ুন

এ বছর চ্যানেল পাড়ি দিয়ে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করেছেন ২৫ হাজার শরণার্থী

অনলাইন ডেস্ক

আফগান আশ্রয় প্রকল্প ফাঁসঃ দাঙ্গার আশঙ্কায় ব্রিটিশ সরকার

ইউক্রেন সফরে বরিস জনসন

অনলাইন ডেস্ক