যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসকরা শূকরের কিডনির জিনগত পরিবর্তন করে তা মানুষের শরীরে সফলভাবে প্রতিস্থাপন করেছেন।
গত শনিবার ৬২ বছর বয়সী এক রোগীর দেহে চার ঘণ্টা ধরে এই কিডনি লাগানো হয়। ওই ব্যক্তির কিডনির অসুখ একেবারে শেষ পর্যায়ে ছিল। ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হসপিটালের পক্ষ থেকে এই তথ্য জানানো হয়।
হাসপাতালের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, শূকরের কিডনি মানুষের দেহে স্থাপন করার আগে তার জিনগত পরিবর্তন করা হয়েছিল। শূকরের ক্ষতিকর জিন সরিয়ে দেয়া হয়েছিল এবং মানুষের জিন যোগ করা হয়েছিল।
হাসপাতালের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রিচার্ড স্লেম্যানের দেহে শূকরের কিডনি বসানো হয়েছে। আর দিন কয়েকের মধ্যেই তাকে ছেড়ে দেয়া হবে। হাসপাতালের দাবি, এটা একটা নতুন দিগন্ত খুলে দিলো। অর্গান ট্রান্সপ্লানটেশন বা অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে। একটি প্রাণির অঙ্গ অন্য প্রজাতির প্রাণির দেহে প্রতিস্থাপনের নাম হলো জিনোট্রান্সপ্লানটেশন।
স্লেম্যান জানিয়েছেন, তিনি জেনেশুনেই এই শূকরের কিডনি তার দেহে স্থাপনের অনুমতি দিয়েছিলেন। কারণ, এর ফলে তার বাঁচার সুযোগ বেড়ে গেল, আর হাজার হাজার মানুষ, যাদের অঙ্গ প্রতিস্থাপন জরুরি, তারাও এর ফলে উপকৃত হবেন।
গোটা বিশ্বজুড়ে প্রতিস্থাপনের জন্য অঙ্গ প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম পাওয়া যায়। বোস্টনের এই হাসপাতালের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, তাদের হাসপাতালে এক হাজার চারশো জন রোগী কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য অপেক্ষা করছেন।
এই সাফল্য লাখ লাখ রোগীকে আশার আলো দেখাতে পারে। অপারেশন টিমের সদস্য চিকিৎসক তাতসুয়ো কাওয়াই বলেছেন, ”আমাদের আশা এই সফল অপারেশন বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষকে আশাবাদী করবে।”
হাসপাতালের তরফ থেকে বলা হয়েছে, যে শূকরের দেহ থেকে কিডনি নেয়া হয়েছে, তাকে আলাদা করে বড় করা হয়েছিল, যাতে তাদের মধ্যে কোনো ধরনের ইনফেকশন না লাগে। এই শূকরের কিডনির সাইজ মানুষের কিডনির মতেই ছিল।
এর আগে কিছু রোগী যাদের ব্রেন ডেড হয়ে গেছে, শরীরে শূকরের কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল। কিন্তু কোনো জীবিত রোগীর শরীরে সফলভাবে শূকরের কিডনি এই প্রথমবার সাফল্যের সঙ্গে প্রতিস্থাপন করা হলো। এর আগে দুই জন রোগীর দেহে জিনগত পরিবর্তনের পর শূকরের হার্ট প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল, কিন্তু তারা দুই মাসের বেশি বাঁচেনি।
জাতিসংঘের অর্গান শেয়ারিং নেটওয়ার্কের বক্তব্য, যুক্তরাষ্ট্রে এক লাখ মানুষ অঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য অপেক্ষা করছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাহিদা হলো কিডনি প্রতিস্থাপনের। প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য অপেক্ষা করেন।
সূত্রঃ ডয়চে ভেলে
এম.কে
২২ মার্চ ২০২৪