আন্তর্জাতিক ম্যাগাজিন ফরেন পলিসি এবং দ্য ডিপ্লোম্যাটে প্রকাশিত বিশ্লেষণ অনুসারে, ২০২৫ সালে পাকিস্তান বিশ্বমঞ্চে একটি গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হিসেবে পুনরায় আবির্ভূত হয়েছে। বিশেষ করে মে মাসে ভারতের সঙ্গে তীব্র সামরিক সংঘর্ষের পর। তবে এ সময়ে দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক চাপ অব্যাহত ছিল।
দ্য ডিপ্লোম্যাটের মতে, এই বছরের মে মাসে ভারতের সঙ্গে চারদিনের সংক্ষিপ্ত কিন্তু তীব্র সামরিক সংঘর্ষের পর এই মোড় আসে। এটি পাকিস্তানের বিমান শক্তির সক্ষমতা তুলে ধরে এবং আন্তর্জাতিকভাবে তাদের কৌশলগত বিশ্বাসযোগ্যতা পুনরুদ্ধারে সাহায্য করে।
বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ‘বিশ্বজুড়ে সামরিক বাহিনীর জন্য এটি প্রমাণ করে যে, পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী কেবল ভারতের সামরিক আধুনিকীকরণের সঙ্গে তাল মিলিয়েই এগিয়ে যায়নি, বরং কিছুটা হলেও অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও নয়াদিল্লির অগ্রগতির বিরুদ্ধে কার্যকরভাবে লড়াই করেছে।’
দ্য ডিপ্লোম্যাটের মতে, সংঘর্ষের পর ইসলামাবাদ ওয়াশিংটনের সঙ্গে সম্পর্কের একটি ‘লক্ষণীয় উষ্ণতা’ প্রত্যক্ষ করে- অন্যদিকে নয়াদিল্লির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক টানাপোড়েনের সম্মুখীন হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তান মধ্যপ্রাচ্যেও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা জোরদার করেছে, সৌদি আরবের সঙ্গে একটি পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাক্ষর করেছে।’
পাকিস্তানে মোতায়েন করা চীনা নির্মিত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যুদ্ধক্ষেত্রে একরকম ‘পরিক্ষিত বৈধতা’ পেয়েছে। এর ফলে চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরের (CPEC) দ্বিতীয় পর্যায়ের গতি আরও তরানিত্ব হয়েছে।
সেই সঙ্গে গাজার স্থিতিশীলতা নিয়ে আন্তর্জাতিক আলোচনায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে পাকিস্তানের কূটনৈতিক ভূমিকা আরও প্রসারিত হয়েছে। এই বিষ্যগুলো ২০২৬ সালের দিকে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিষয়ে ইসলামাবাদকে আরও প্রভাবশালী ভূমিকা পালনের জন্য শক্ত অবস্থান দিতে পারে।
দ্য ডিপ্লোম্যাটের মতে, পশ্চিম ফ্রন্টে, পাকিস্তান আফগানিস্তানের প্রতি আরও কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে। কারণ, ইসলামাবাদ তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) মোকাবেলায় অব্যাহত চাপ প্রয়োগ করেছে।
ফরেন পলিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আফগানিস্তানে মার্কিন বাহিনীর ওপর একটি বড় সন্ত্রাসী হামলার মূল পরিকল্পনাকারীকে গ্রেপ্তারে পাকিস্তানের ভূমিকা ইসলামাবাদকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ‘প্রাথমিক সদিচ্ছা অর্জনে’ সহায়তা করেছে।
ধারণা করা হয়, এই অভিযানে পেছনের ছিলেন মূলত পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির। এরপর থেকে হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সঙ্গে মুনিরের একাধিক সাক্ষাৎ হয়।
ওয়াশিংটনে নিযুক্ত পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত রিজওয়ান সাঈদ শেখ এই বছরের শুরুতে ফরেন পলিসিকে বলেছিলেন, ‘আমাদের সম্পর্ক আগের মতোই ভালো দেখাচ্ছে।’
ফরেন পলিসির মতে, ট্রাম্পের দৃষ্টিতে পাকিস্তানের উন্নতির অবস্থান আরও লক্ষণীয় হয়ে উঠেছে। কারণ পরিস্থিতি ভারতের সঙ্গে মার্কিন সম্পর্কের দৃশ্যমান অবনতির সঙ্গে মিলে যাচ্ছে।
ফরেন পলিসির মতে, মে মাসে দুই প্রতিবেশীর মধ্যে সংক্ষিপ্ত সশস্ত্র সংঘাতের পর পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতার জন্য ট্রাম্পকে কৃতিত্ব দিতে ভারত অস্বীকৃতি জানায়। পাশাপাশি ভারতের বাণিজ্য নীতি এবং রাশিয়ান তেল ক্রয়ের প্রতি ট্রাম্পের কথিত হতাশার কারণে নয়াদিল্লি বিশ্বের সর্বোচ্চ ট্রাম্প শুল্ক আরোপের শিকার হয়েছে।
তথ্যসূত্রঃ জিও টিভি \ দ্য ডিপ্লোম্যাট
এম.কে

