ভারতের বিজেপি সরকারের নিয়ন্ত্রিত একটি ছোট রাজ্যের আইনপ্রণেতারা বুধবারে ব্যক্তিগত আইনকে একত্রিত করে একটি ল্যান্ডমার্ক আইনের অনুমোদন দিয়েছে। যা নিয়ে ইতোমধ্যে বিতর্ক শুরু হয়েছে। বহু সংখ্যালঘু মুসলিম এই আইনের বিরোধিতা করেছেন বলে সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা যায়।
ইলেকশনের ঠিক মাসখানেক আগে উত্তরাখণ্ডের হিমালয় রাজ্য কর্তৃক অনুমোদিত এই আইন নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে বলে জানান রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।
বর্তমানে ভারতের হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু গোষ্ঠী তাদের নিজস্ব ব্যক্তিগত আইন বা রীতিনীতি, বিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ এবং উত্তরাধিকারের জন্য একটি নিয়ম নিজেদের মধ্যে মেনে চলে।
ভারতে প্রায় ২০০ মিলিয়ন মুসলিম সম্প্রদায়ের বসবাস। শক্তিশালী মুসলিম সংখ্যালঘু নেতাদের বিরোধিতা সত্ত্বেও বিজেপি-শাসিত দল মুসলিমদের বহুবিবাহ সহ অন্যান্য মুসলিম অনুশীলন নিষিদ্ধ করার পরিকল্পনা করেছে।
উত্তরাখণ্ডের হিমালয় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধমি বলেন,” ইউনিফর্ম সিভিল কোডটি কোনও বৈষম্য ছাড়াই প্রত্যেককে সাম্যের অধিকার দিবে। আমাদের অবশ্যই এটিকে পরিষ্কারভাবে আইন হিসাবে প্রণয়ন করে ইতিহাস তৈরি করতে হবে।”
ধমির একজন রাজনৈতিক সহযোগী নিশ্চিত করেছেন, রাজ্য বিধানসভা বিলটি পাস করেছে। তবে তিনি এও নিশ্চিত করেছেন বিজেপি বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা করছে। ভারতীয় সংবিধানের কাঠামোর মধ্যে থাকলে একই দেশের ভিতরে ভিন্ন আইন চলতে পারে না। তাই এই আইন দ্বারা বিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ, উত্তরাধিকারসহ বিভিন্ন বিষয়ে ধর্মীয় ব্যাখ্যার অবসান ঘটাবে।
ধামি জানান, এই আইনের মাধ্যমে মহিলাদের সুরক্ষা প্রদান করবে এবং তাদের ক্ষমতায়িত করবে। আইনটি উভয় লিঙ্গের জন্য ন্যূনতম বিবাহযোগ্য বয়স নির্ধারণ করবে বলে জানা যায়। এটি বিবাহবিচ্ছেদ সম্পর্কিত বিষয়গুলিতে পুরুষ ও মহিলাদের সমান অধিকারের গ্যারান্টি দেয়। নতুন এই আইন পৈতৃক সম্পত্তিতে অধিকার প্রদান করবে দত্তক ও বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের কারনে জন্মগ্রহণকারী শিশুদের।
উত্তরাখণ্ডের ইউসিসি বিলে কর্মরত একজন আইন বিশেষজ্ঞ বলেছেন, ইসলামের শরিয়া আইনে বহুবিবাহের অনুমতি দেয় এবং নাবালিকাদের বিবাহ নিষিদ্ধ করার জন্য কোনও কঠোর নিয়ম নেই।
ভারত প্রায় ৮০% হিন্দু, প্রায় ১৪% মুসলিম এবং বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ। মুসলমানরা মোদীর ডানপন্থী জাতীয়তাবাদী দলকে একটি হিন্দু এজেন্ডা বাস্তবায়নের অভিযোগে দোষারোপ করছে। যা মসলিম ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে দাঙ্গা ও বিক্ষিপ্ত সহিংসতার দিকে পরিচালিত করতে পারে বলেছেন বিশেষজ্ঞরা।
ভারতের আঞ্চলিক নেতা ও মুসলিম রাজনীতিবিদ আসাদউদ্দিন ওয়াইসি বলেছেন, এই আইনটি “হিন্দু আচরণবিধি” ছাড়া কিছুই নয়।
তিনি রয়টার্সকে বলেছেন, ” আমার নিজস্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি অনুশীলন করার অধিকার রয়েছে। তবে ইউসিসি আমাদের ধর্মের মৌলিক অধিকারগুলি চর্চা করা হতে বিরত রাখতে চায়।”
ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সিনিয়র সদস্য সুভাষিনী আলী এক্স’ হ্যান্ডেলে বলেছেন, ” উত্তরাখণ্ড ইউসিসি আইন মূলত পিতৃতান্ত্রিক। যা মহিলাদের অধিকারকে অস্বীকার করে। এখানে একটি আন্তঃ বর্ণের দম্পতি তাদের বিবাহ নিবন্ধন করা অর্থ মৃত্যুর আমন্ত্রণ করা।”
সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক তরুণ ভারতীয় নাগরিক ইউসিসি’র নিয়মানুযায়ী লাইভ-ইন সম্পর্কের নিবন্ধন করার পদক্ষেপকে গোপনীয়তার উপর সরাসরি আক্রমণ বলে মত দেন। যদিও বিজেপি এই সকল সমালোচনা প্রত্যাখ্যান করেছে।
উত্তরাখণ্ড শিশু ও মহিলা কল্যাণমন্ত্রী রেখা আর্য এনডিটিভি নিউজচ্যানেলকে বলেন, ” সমাজ যেমন বিকশিত হয়েছে সরকারকে সেই হিসাবে তাদের পরিচালিত করতে হবে। নতুন আইনটি আধুনিক একটি পদক্ষেপ যা কারো গোপনীয়তার উপর আক্রমণ মনে করা ঠিক নয়।”
উল্লেখ্য যে গুজরাট, উত্তর প্রদেশ, আসাম এবং রাজস্থানের মতো অনেক বিজেপি-শাসিত রাজ্য ইউসিসি আইনকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিজেপির মতে এটি একটি জাতীয় নাগরিক অধিকার বা আইন যা মোদী সরকার ও বিজেপির রাজনৈতিক ইশতেহারের তিনটি মূল প্রতিশ্রুতিগুলির মধ্যে অন্যতম।
সূত্রঃ রয়টার্স
এম.কে
০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪