2.2 C
London
November 19, 2024
TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

মুসলিমরা যুক্তরাজ্যে, ‘অন্ধকার ও বিপর্যস্ত’ ,পরিবেশের মুখোমুখি হচ্ছেনঃ থিঙ্কট্যাঙ্ক প্রধান

রানিমিড ট্রাস্টের প্রধান নির্বাহী শাবনা বেগম বলেছেন, যদি ইসলামফোবিয়া রাজনীতিতে ‘গ্রহণযোগ্য উপাদান’ হিসেবে থেকে যায়, তাহলে বর্ণবাদী দাঙ্গা আবার ফিরে আসবে।

ইসলামফোবিয়া যুক্তরাজ্যে “নৃশংসভাবে বিভাজনমূলক” হয়ে উঠেছে এবং এর মূল কারণ বিভাজনমূলক ব্যবস্থা মোকাবিলায় ব্যর্থতা। যা পরিস্থিতিকে আরও বর্ণবাদী দাঙ্গার দিকে নিয়ে যাবে, বলেছেন যুক্তরাজ্যের শীর্ষ জাতিগত সমতা থিঙ্কট্যাঙ্কের প্রধান।

রানিমিড ট্রাস্টের প্রধান নির্বাহী হিসেবে এ বছর দায়িত্ব নেওয়া শাবনা বেগম বলেন, মুসলিমদের নিয়ে আলোচনা করার ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্য একটি নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করছে।

তিনি বলেন, “সাঈদা ওয়ার্সি ‘ডিনার টেবিল টেস্ট’ শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন, কিন্তু আমার মনে হয় আমরা তারও উপরে চলে গিয়েছি। রাজনীতিবিদরা এখন যেভাবে মুসলিমদের নিয়ে কথা বলেন, তা অত্যন্ত অবমাননাকর এবং নৃশংসভাবে বিভাজনমূলক।”

তিনি সতর্ক করেন, রাজনৈতিক বক্তব্য ও নীতিতে পরিবর্তন না এলে গত গ্রীষ্মের দাঙ্গাগুলো আবারও ঘটতে পারে। আমার মনে হয় দাঙ্গাগুলো আবার ফিরে আসবে। ওই দাঙ্গা ছিল বর্ণবাদী রাজনীতি ও মিডিয়ার কথোপকথনের কারণে সৃষ্ট বছরব্যাপী বিদ্বেষের সবচেয়ে কুৎসিত বহিঃপ্রকাশ। এবং আমরা এই বিভাজনমূলক অবস্থা আটকানোতে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করি, তাহলে ঘৃণ্যতম অবস্থা আমাদের রাজনীতির নিয়মিত বৈশিষ্ট্য হয়ে উঠবে।

রানিমিড ট্রাস্টের ইসলামফোবিয়ার উপর প্রতিবেদনের উদ্বোধন উপলক্ষে দ্য গার্ডিয়ানের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে বেগম বলেন, গাজায় ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ এবং যুক্তরাজ্যে যুদ্ধবিরতি সমর্থনে হওয়া প্রতিবাদের প্রতিক্রিয়ার কারণে বিষয়টি “অবশ্যম্ভাবী” হয়ে উঠেছে এবং এর মোকাবিলা করা আবশ্যক।

তিনি কোনো নির্দিষ্ট এমপি-র নাম না নিলেও বলেন, ব্রিটিশ মুসলিমদের জন্য শত্রুতাপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করতে লেবার ও কনজারভেটিভ উভয় দলই দায়ী, যা এখন “অন্ধকার এবং বিপর্যয়ময়” পর্যায়ে পৌঁছেছে।

‘আমরা প্রতিদিন এখন আতঙ্ক নিয়ে জেগে উঠি’: ডানপন্থী দাঙ্গার শিকার যারা তারা ভয় এবং অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত।

শাবানা বেগম গত গ্রীষ্মের বর্ণবাদী দাঙ্গাগুলোর প্রতিক্রিয়াকে বিশেষভাবে উদ্বেগজনক বলে চিহ্নিত করেন। তিনি বলেন, “সেই সময় ইসলামফোবিয়া শব্দটি ব্যবহার করার ব্যাপারে প্রকৃত অনীহা দেখা গিয়েছিল, কারণ কেউই মুসলিমদের পক্ষ নেওয়ার মতো অবস্থানে থাকতে চায়নি।”

তিনি আরও যোগ করেন, “রাজনীতিবিদরা জনপ্রিয়তার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত এবং সেই প্রতিযোগিতা পরিমাপ করা হচ্ছে তারা কতটা মুসলিমদের হেয় ও অপমান করতে ইচ্ছুক তার ভিত্তিতে। এটি কেবল গ্রহণযোগ্য মুদ্রা হয়ে উঠেনি, বরং রাজনৈতিক স্বীকৃতি অর্জনের একটি উপায় হয়ে উঠেছে।”

লেডি ওয়ার্সি, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইউকে এবং মুসলিম কাউন্সিল ফর ব্রিটেনের সমর্থনে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইসলামফোবিয়ার “তীব্রতা” নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ফেব্রুয়ারি ২০২৪ পর্যন্ত চার মাসে মুসলিমবিরোধী হামলার সংখ্যা ৩৩৫% বৃদ্ধি পেয়েছে। যার বেশিরভাগই ছিল নারীদের বিরুদ্ধে।

গত বছর পুলিশের রেকর্ড করা সব ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক অপরাধের মধ্যে ৩৮% ছিল মুসলিমদের বিরুদ্ধে।

শাবানা বেগম বলেন, সমস্যাটি কেবল সহিংস, বর্ণবাদী আক্রমণেই সীমাবদ্ধ নয়। আমরা প্রায়ই সেই চাঞ্চল্যকর সহিংসতার ঘটনাগুলোর উপর বেশি মনোযোগ দিই, যা বাস্তব এবং ব্যক্তিগত ও সামাজিকভাবে গভীর ক্ষতি করে।

তিনি মুসলিমদের জন্য দ্বৈত মানদণ্ডের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, “যদি তারা জনজীবনে অংশগ্রহণ না করে, তাদের একীভূত না হওয়ার জন্য সমালোচনা করা হয়। আবার যখন তারা অংশগ্রহণ করে, তখনও তাদের সমালোচনা করা হয়।”

শাহানা বেগমের মতে, এই দ্বন্দ্ব তার জন্য বরাবরই ব্যক্তিগত ছিল। ১৯৭০-এর দশকে বাংলাদেশ থেকে অভিবাসী হয়ে আসা এক পরিবারে জন্ম নেওয়া বেগম তার শৈশব কাটান পূর্ব লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটসে, যেখানে একটি বৃহৎ বাংলাদেশি সম্প্রদায় রয়েছে। তিনি পূর্ব লন্ডনে শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন এবং কীভাবে একটি বর্ণবাদ-বিরোধী শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায় তা নিয়ে গভীরভাবে ভাবতেন।

পরে তিনি গবেষণার জন্য শিক্ষাজীবন পরিবর্তন করেন এবং রানিমিড ট্রাস্টে প্রধান নির্বাহী হিসেবে উঠে আসেন।

সরকারের £১৫ মিলিয়ন পাউন্ডের কমিউনিটি পুনরুদ্ধার তহবিল ঘোষণাকে স্বাগত জানালেও তিনি আরও টেকসই পদক্ষেপের আহ্বান জানান।

“সবাই চায় সম্প্রদায়গুলো ঐক্যবদ্ধ হোক। তবে আমাদের আপত্তি হলো, এমন অস্থির তহবিল দিয়ে কোনো পরিবর্তন হবে না। মূলধারার রাষ্ট্রের অবকাঠামোতে বিনিয়োগ এবং আমাদের সম্পর্কে বিদ্যমান বর্ণনাকে চ্যালেঞ্জ করা প্রয়োজন। মুসলিমদের চাপে রেখে একটি সামাজিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার পর, তাদের সঙ্গে শুধু এক কাপ চা খাওয়ার মাধ্যমে কোনো সমাধান হবে না।”

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে
১৯ নভেম্বর ২০২৪

আরো পড়ুন

গরমে পুড়ছে লন্ডন, সতর্কতা জারি

বেনিফিট বন্ধে কড়াকড়ি আরোপ করতে গিয়ে নতুন কেলেঙ্কারির জন্ম দিতে পারে সরকার

বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়াতে সম্মত