TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

যুক্তরাজ্য ছাড়তে পারেন ৫০ হাজার নার্স: ইমিগ্রেশন পরিবর্তনে এনএইচএসে মহাসঙ্কটের আশঙ্কা

যুক্তরাজ্যের নতুন ইমিগ্রেশন পরিকল্পনা নিয়ে আন্তর্জাতিক নার্সদের মধ্যে তীব্র উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। রয়্যাল কলেজ অব নার্সিং (আরসিএন) পরিচালিত সর্বশেষ জরিপে দেখা গেছে, প্রস্তাবিত পরিবর্তনের কারণে প্রায় ৫০ হাজার নার্স দেশ ছাড়ার কথা ভাবছেন। এতে এনএইচএস তার ইতিহাসের সবচেয়ে বড় কর্মী সংকটে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।

 

স্টার্মার সরকারের নেট মাইগ্রেশন কমানোর পরিকল্পনা অনুযায়ী, বিদেশি কর্মীদের আগের মতো পাঁচ বছর নয়, ১০ বছর যুক্তরাজ্যে অবস্থানের পর স্থায়ী হওয়ার জন্য (ILR) আবেদন করতে হবে। পাশাপাশি ভিসার সব ক্যাটেগরিতে ইংরেজি দক্ষতার মান উন্নীত করা ও বিদেশি শ্রমিকদের যোগ্যতা ডিগ্রি পর্যায়ে উন্নীত করার প্রস্তাবও রাখা হয়েছে। সমালোচকদের মতে, রিফর্ম ইউকের রাজনৈতিক চাপ মোকাবিলার অংশ হিসেবেই এই পরিকল্পনা আনা হয়েছে।

আরসিএনের জরিপে অংশ নেওয়া পাঁচ হাজারের বেশি অভিবাসী নার্সের মধ্যে যাদের এখনো ILR নেই, তাদের ৬০% বলেছেন, নতুন পরিবর্তন হলে তারা যুক্তরাজ্যে থাকার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবেন। অর্থাৎ প্রায় ৪৬ হাজার নার্স স্থায়ীভাবে দেশ ছাড়তে পারেন, যা বর্তমান স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর ভয়াবহ চাপ সৃষ্টি করবে। বর্তমানে যুক্তরাজ্যের মোট নার্সিং কর্মীশক্তির ২৫%ই আন্তর্জাতিকভাবে প্রশিক্ষিত নার্স।

আরসিএনের জেনারেল সেক্রেটারি প্রফেসর নিকোলা রেঞ্জার প্রস্তাবিত নীতিকে “অনৈতিক” ও “রোগীদের জন্য বিপজ্জনক” বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, “স্বাস্থ্য ও সামাজিক সেবা খাতে সফলতার স্বার্থে কোনো দায়িত্বশীল মন্ত্রীই ILR–এর সময়সীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেবেন না।” তিনি আরও জানান, দেশীয় নার্সিং কর্মীশক্তি বাড়াতে ব্যর্থ সরকারের এই নীতি এনএইচএসের সংকট আরও তীব্র করবে এবং অপেক্ষমান তালিকা কমানোর প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করবে।

রেঞ্জার আরও অভিযোগ করেন, অনেক অভিবাসী নার্স কোভিড সংকটের কঠিন সময়ে যুক্তরাজ্যে আসেন এবং ব্যক্তিগত ত্যাগ স্বীকার করেন। এখন তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মুখে ফেলে সরকার একপ্রকার ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ করছে। ILR না থাকলে তারা সহজে চাকরি পরিবর্তনও করতে পারেন না, ফলে সামাজিক সেবা খাতে শোষণের শিকার হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।

জরিপে আন্তর্জাতিক নার্সদের মধ্যে আর্থিক অনিশ্চয়তা, পরিবারকে নিয়ে উদ্বেগ ও পেশাগত ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম উৎকণ্ঠার চিত্র উঠে এসেছে। সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, মাত্র ১১% নার্স বলেছেন, প্রথম থেকেই ১০ বছরের শর্ত থাকলে তারা যুক্তরাজ্যে আসতেন। এতে ভবিষ্যতে দক্ষ বিদেশি নার্স সংগ্রহেও বড় বাধা তৈরি হতে পারে।

ILR–এর আবেদন ফিও দীর্ঘদিন ধরে সমালোচিত—বর্তমানে প্রতিজনের জন্য ফি £৩,০২৯, যেখানে সরকার এটি প্রক্রিয়া করতে মাত্র £৫২৩ খরচ করে। এই ফি ২০০৩ সালে ছিল মাত্র £১৫৫।

সরকার অবশ্য বলছে, নতুন প্রস্তাবিত মডেলে অবদানের ভিত্তিতে আগেই স্থায়ী হওয়ার সুযোগ থাকবে। শিগগিরই জনপরামর্শ শুরু করা হবে এবং স্বাস্থ্য–সামাজিক সেবা কর্মীদের অংশগ্রহণ করার আহ্বান জানানো হবে।

কিন্তু নার্সিং নেতাদের মতে, প্রস্তাবিত পরিবর্তনগুলো কার্যকর হলে যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভয়াবহ সংকটে পড়বে এবং দক্ষ কর্মীরা নিজেদের আর স্বাগত মনে করবেন না—এটাই সবচেয়ে বড় ঝুঁকি।

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে

আরো পড়ুন

চার্লসের রাজ্যাভিষেকে আসবেন প্রিন্স হ্যারি

মর্গেজে সুদের হার বৃদ্ধি, বিপাকে যুক্তরাজ্যের বাড়িওয়ালারা

যুক্তরাজ্যে ই-ভিসা গৃহীত হচ্ছে নাঃ নিরাপত্তা পেশায় বিপাকে অভিবাসীরা