হোম অফিস ঘোষণা করেছে, যুক্তরাজ্যে আশ্রয় প্রত্যাখ্যাত হওয়া কয়েক হাজার মানুষকে রুয়ান্ডায় জোর করে প্রেরণ করার চেষ্টা করে ঝুঁকির মধ্যে ফেলা হচ্ছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা যায়।
যুক্তরাজ্য ও রুয়ান্ডা সরকার যুক্তরাজ্যে প্রত্যাখ্যাত আশ্রয়প্রার্থীদের পূর্ব আফ্রিকার দেশ রুয়ান্ডায় জোর করে পাঠানোর চুক্তিতে সম্মত হয়েছে। আইনজীবীরা এই প্রক্রিয়ার নিন্দা জানিয়েছেন এবং বলেছেন এই পন্থায় আশ্রয়প্রার্থীদের তাদের জীবন হতে বিলীন করে দেয়া হবে।
হোম অফিস নিশ্চিত করেছে কিছু আশ্রয়প্রার্থীকে ইতোমধ্যে ইমিগ্রেশন প্রয়োগকারী সংস্থা কর্তৃক গ্রেফতার করা হয়েছে যাদের পরবর্তী সাত থেকে নয় সপ্তাহের মধ্যে অপারেশন ভেক্টরের নামে রুয়ান্ডায় পাঠানো হবে। যাদেরকে রুয়ান্ডায় পাঠাবো হবে তাদের শরনার্থী কেইস রুয়ান্ডায় চালু হবে। যারা পাঁচ বছর মেয়াদী সমর্থন প্যাকেজ পাবেন।
সরকারী তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালে ২৪,৩১০ জন আশ্রয় প্রার্থীদের আবেদন প্রত্যাখ্যান হয়েছিল এবং ২৪,০২৭ জন তাদের আবেদন প্রত্যাহার করেন। উভয় গ্রুপের সদস্যরাই এখন রুয়ান্ডায় স্থানান্তরিত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
ছোট নৌকায় করে ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রম করে যুক্তরাজ্যে পাড়ি দিয়েছিল অনেক অভিবাসন প্রত্যাশী। যারা এমন কিছু দেশ হতে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করে যেখানে জীবনের নিরাপত্তা নাই বললেই চলে। এমন দেশের মধ্যে সিরিয়া, আফগানিস্তান আছে যে সকল দেশের লোকদেরও বাধ্যতামূলক অপসারণ করা হতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বারবার বলেছেন রুয়ান্ডা নীতিমালার মূল লক্ষ্য হল ছোট নৌকায় অভিবাসী আগমনকে বাধা দেওয়া। সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা যায়, অনেক অভিবাসী ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্যে শিকড় গেড়ে ফেলেছেন। এছাড়া অনেক আশ্রয়প্রার্থী প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন এসাইলাম আবেদনে এবং জোর করে তাদের রুয়ান্ডা পাঠানোর পরিকল্পনাও যুক্তরাজ্যের রয়েছে যদিও তারা ছোট নৌকা করে ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রম করে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করেন নাই।
এই মাসের শুরুর দিকে, হোম অফিস ঘোষণা দিয়েছিল যারা ২০২২ ও ২০২৩ সালে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করে এসাইলাম আবেদন করেছিল, তাদের এসাইলাম আবেদন প্রক্রিয়াজাত যুক্তরাজ্যে করা হয় নাই। পরিবর্তে রুয়ান্ডায় পাঠানোর পর তাদের শরনার্থী দাবিগুলোর প্রক্রিয়াকরণ শুরু করা হবে। এই সিদ্ধান্তের ফলে রুয়ান্ডায় নির্বাসনে পাঠানো ব্যক্তিদের তালিকা প্রসারিত হবে।
ইমিগ্রেশন আইন প্র্যাকটিশনার্স অ্যাসোসিয়েশনের আইনী পরিচালক জো বান্টলম্যান বলেছেন, “ সদ্য সৃষ্টিকৃত এই চুক্তির অর্থ হ’ল যুক্তরাজ্যের প্রতিটি প্রত্যাখ্যাত এসাইলাম আবেদনকারীকেই রুয়ান্ডায় অপসারণের জন্য বিবেচনা করা হবে। রুয়ান্ডার উদ্দেশ্যে প্রত্যাখ্যাত এসাইলাম আবেদনকারীকে নিয়ে ফ্লাইট উড়াল দিলে অপ্রয়োজনীয় আতঙ্ক সৃষ্টি হবে যা কখনও কাম্য নয়। এই ঘটনায় এসাইলাম সিকাররা সকলে পালিয়ে যাবে যাদেরকে ট্রেস করাও কঠিন হবে। ”
দাতব্য সংস্থা কেয়ার ফর ক্যালাইসের অ্যাডভোকেসি ও পাবলিক অ্যাফেয়ার্সের প্রধান শার্লট খান বলেন, “এসাইলাম আবেদনকারীদের রুয়ান্ডা প্রেরণ একটি ভুল পরিকল্পনা যা অযোগ্য সরকারের মাথা হতে আসা। এই পরিকল্পনা হিতে বিপরীত হতে পারে তাছাড়া মানবিক বিষয়ের কথা চিন্তা করলে যা যুক্তরাজ্যের সমাজ ব্যবস্থার সাথে সাংঘর্ষিক।”
যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব জেমস ক্লিভারলি বলেছেন, “যাদের যুক্তরাজ্যে থাকার অধিকার নেই তাদের যুক্তরাজ্যে থাকার অনুমতি দেওয়া উচিত নয়। রুয়ান্ডার উদ্দেশ্যে আমাদের ফ্লাইট চালু হবে খুব শীঘ্রই। যাদের ডিপোর্ট করার জন্য আটক করা হবে তাদের সাময়িকভাবে ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হবে। হিথ্রো বিমানবন্দরের পাশেই রিমুভাল সেন্টারের ব্যবস্থা করবে সরকার। অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে যুক্তরাজ্য সরকার।”
উল্লেখ্য কনজারভেটিভ সরকার অভিবাসন নিয়ে চাপের মধ্যে রয়েছে বিধায় রুয়ান্ডানীতির মাধ্যমে অভিবাসনকে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টায় তৎপর রয়েছে। যদিও এই আইন নিয়ে নানা ধরনের জটিলতা ও সমালোচনার মুখে পড়েছে বর্তমান সরকার। তাই আদৌ রুয়ান্ডানীতির সফলতা দেখা যাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় এখনও রয়ে গিয়েছে।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
১৬ মে ২০২৪