TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

যুক্তরাজ্যে আর্টিকেল-থ্রি লঙ্ঘন করে ‘অমানবিক আচরণ’: ব্রিটিশ দুই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে আদালতের সিদ্ধান্ত

মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগা একজন বন্দিকে দীর্ঘ সময় একঘরে রাখার সিদ্ধান্ত মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে—এমন ঐতিহাসিক রায় দিয়েছেন একজন হাইকোর্ট বিচারক। হোম সেক্রেটারি শাবানা মাহমুদ ও বিচারমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি ইউরোপীয় মানবাধিকার কনভেনশনের আর্টিকেল ৩—অমানবিক বা অবমাননাকর আচরণ নিষিদ্ধকরণ—লঙ্ঘন করেছেন বলে আদালত প্রথমবারের মতো রায়ে উল্লেখ করল।

সাহাইব আবু নামের ওই বন্দিকে মিল্টন কেইন্সের এইচএমপি উডহিলে দিনে ২২ ঘণ্টা সেলে আটকে রাখা হয় এবং চার মাসের বেশি সময় তাকে কোনো বন্দির সঙ্গে দেখা করার সুযোগ দেওয়া হয়নি। ম্যানচেস্টার অ্যারেনা হামলাকারীর ভাই হাসেম আবেদি কারারক্ষীদের ওপর হামলা চালানোর পর নিরাপত্তা অজুহাতে আবুকে আরও কঠোর পরিবেশে স্থানান্তর করা হয়। অথচ তিনি ইতিমধ্যেই ‘সেপারেশন সেন্টার’-এর বিচ্ছিন্ন পরিবেশে ছিলেন।

বিচারক জাস্টিস শেলডন বলেন, আবুর পূর্বের মানসিক ট্রমা ও পরিচিত সমস্যার তথ্য থাকা সত্ত্বেও মন্ত্রীরা তার মানসিক মূল্যায়ন করাননি এবং কোনো থেরাপি বা চিকিৎসা দেওয়ার উদ্যোগ নেননি। এর ফলে পৃথকীকরণ নীতির লক্ষ্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও এটি স্পষ্ট মানবাধিকার লঙ্ঘনের পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।

রায়ে আদালত বলেন, বিচ্ছিন্নতার কারণে সাধারণ বন্দির যে কষ্ট হওয়া স্বাভাবিক, তার চেয়েও বহু গুণ বেশি ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে আবুকে। তিনি পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডারে (PTSD) আক্রান্ত হয়েছেন, যার একটি অংশ এই দীর্ঘ একঘরে রাখার ফল। বিচারক আরও স্পষ্ট করেন যে সাধারণ মানসিক শক্তির বন্দির ক্ষেত্রে একই ব্যবস্থা হয়তো আর্টিকেল ৩ লঙ্ঘন হিসেবে গণ্য হতো না, কিন্তু আবুর পূর্বের ট্রমা তাকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ফেলেছিল।

অন্যদিকে বন্দির দেওয়া সাক্ষ্য বিবৃতিতে উঠে এসেছে চরম মানসিক অবক্ষয়ের চিত্র। সেপারেশন সেন্টারে তিনি প্যারানয়া ও ফ্ল্যাশব্যাকের শিকার হচ্ছিলেন, তার মানসিক অবস্থা এতটাই খারাপ হয় যে তিনি নিয়মিত আত্মহত্যা ও আত্মক্ষতির চিন্তায় ভুগছিলেন।

এ ধরনের সেপারেশন সেন্টারের কার্যকারিতা ও বৈধতা নিয়ে চলতি বছর জুড়ে সমালোচনা বেড়েছে। হাইকোর্টের আরেকটি রায়ে জানুয়ারিতে বলা হয়, ডেনি ডি সিলভাকে যাচাই না করা অভিযোগের ভিত্তিতে একঘরে রাখা ছিল অবৈধ। বিচারক মন্তব্য করেন—ছোট দলে বিচ্ছিন্ন রাখার ব্যবস্থা অনেক ক্ষেত্রে একাকী কারাবাসের মতোই ক্ষতিকর।

অতীতের গবেষণার অভাবের বিষয়টিও উঠে এসেছে সম্প্রতি। বিংহ্যাম সেন্টার ফর দ্য রুল অব ল’র একটি স্বাধীন কমিশন জানিয়েছে, এসব সেপারেশন সেন্টারের কার্যকারিতা নিয়ে খুব সীমিত গবেষণা ও মূল্যায়ন হয়েছে, যা তাদের বৈধতা ও মানবিকতার প্রশ্ন আরও জোরদার করেছে।

বিচারক জানিয়েছেন, ক্ষতিপূরণের বিষয়টি পরে বিবেচনা করা হবে। তবে রায়টি ইতিমধ্যেই ব্রিটিশ বিচারব্যবস্থায় একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে।

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে

আরো পড়ুন

যুক্তরাজ্য মানব পাচারকারীদের দমনে বিশ্বে প্রথম নিষেধাজ্ঞা ব্যবস্থা চালু করছে

নিউজ ডেস্ক

বৃটেনের বাজারে বিশ্বমন্দার আঁচ

প্রবাসীদের পাসপোর্টকে আইডি হিসেবে গণ্য করার দাবি