যুক্তরাজ্যের পুলিশ কন্ট্রোল রুমের ব্যর্থতার কারনে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। ডমোস্টিক ভায়োলেন্সের কারণে এই নারীর মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম।
ডমোস্টিক ভায়োলেন্সে নারীর হত্যার ঘটনায় পুলিশের ব্যর্থ প্রতিক্রিয়ার পর, ৯৯৯ কন্ট্রোল রুমে প্রথমবারের মতো ডমোস্টিক ভায়োলেন্স বিশেষজ্ঞদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নিহত নারী তার মৃত্যুর রাতে পুলিশের কাছে সাহায্যের জন্য ফোন করেছিলেন, কিন্তু পুলিশ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করে নাই এবং মহিলার সাবেক স্বামীর হাতেই তিনি প্রাণ হারান।
‘রানিম’স ল’ নামে নতুন একটি আইন পরীক্ষামূলকভাবে যুক্তরাজ্যের পাঁচটি এলাকায় চালু করা হয়েছে—ওয়েস্ট মিডল্যান্ডস, নর্থাম্ব্রিয়া, নর্থ্যাম্পটনশায়ার, বেডফোর্ডশায়ার এবং হাম্বারসাইড।
এই আইনটি লেবার পার্টির নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিশ্রুত ছিল এবং এর নামকরণ করা হয়েছে ২২ বছর বয়সী রানিম ওউদেহ ও তার মা খাওলা সালিম (৪৯)-এর নামে। তারা দু’জনই ২০১৮ সালের আগস্টে রানিমের সাবেক স্বামী জানবাজ তারিন-এর হাতে নির্মমভাবে খুন হন।
রানিম তার মৃত্যুর আগে কয়েক মাসে ৯৯৯-এ বারেবারে ফোন করেছিলেন। এমনকি তিনি হত্যার হুমকির বিষয়েও জানান। কিন্তু পুলিশ তার অভিযোগগুলো সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ করেনি, যথাযথ তদন্ত করেনি এবং পরিস্থিতি মূল্যায়নেও ব্যর্থ হয়।
মৃত্যুর রাতে তিনি চারবার ৯৯৯-এ ফোন করেন, কিন্তু পুলিশ যথাসময়ে পৌঁছায়নি বলে জানা যায়।
সরকার জানিয়েছে, নতুনভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত ডমোস্টিক ভায়োলেন্সে বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত করবেন যে সাহায্যের জন্য করা ফোন কলগুলো যথাযথভাবে মূল্যায়ন, ব্যবস্থাপনা ও প্রতিক্রিয়া নিশ্চিত করবে।
তাদের দায়িত্বের মধ্যে থাকবে—
✔ ঝুঁকি মূল্যায়নে পরামর্শ দেওয়া
✔ বিশেষায়িত সেবার জন্য রেফারেল পাঠানো
✔ ভুক্তভোগীদের রক্ষা করার ক্ষেত্রে কোনো ব্যর্থতা থাকলে তা চিহ্নিত করা
প্রথম ধাপের ফলাফল অনুযায়ী, ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের ৪৩টি পুলিশ ফোর্সে জাতীয় পর্যায়ে এই কর্মসূচি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করা হবে। আগামী অর্থবছরে এই প্রকল্পের জন্য £২.২ মিলিয়ন পাউন্ড বরাদ্দ দিবে সরকার।
ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইভেট কুপার বলেছেন, ” প্রতি ৩০ সেকেন্ডে কেউ না কেউ ডমোস্টিক ভায়োলেন্সের শিকার হন। পুলিশের কাছে ফোন করে—প্রতি ঘণ্টায় ১০০ জনেরও বেশি মানুষ জরুরি সাহায্যের জন্য আবেদন জানায়।”
সেজন্য আমরা পুলিশি সেবা ও প্রতিক্রিয়ায় আমূল পরিবর্তন আনতে বদ্ধপরিকর, যাতে ভুক্তভোগীরা বিশেষায়িত সহায়তা ও সুরক্ষা পান। রানিম ও খাওলার স্মৃতির প্রতি এটিই আমাদের প্রকৃত শ্রদ্ধা।”
রানিমের হত্যার রাতে, তাকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল মায়ের বাড়িতে চলে যেতে, এবং পুলিশ পরদিন তাকে দেখতে আসবে।
কিন্তু সেই রাতে যখন তিনি ওয়েস্ট মিডল্যান্ডস পুলিশের সঙ্গে ফোনে কথা বলছিলেন, তখনই তার সাবেক স্বামী জানবাজ তারিন তাকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে।
হত্যার কয়েক সপ্তাহ আগে রানিম জানতে পারেন, তার স্বামী আফগানিস্তানে একজন গোপন স্ত্রী ও তিনটি সন্তান রয়েছে, এবং চতুর্থ সন্তান আসার পথে। এই সত্য প্রকাশ পাওয়ার পর তিনি সম্পর্ক ছিন্ন করেন, যার পরেই তার উপর হামলা হয়।
জানবাজ তারিন হত্যার দায় স্বীকার করে এবং ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে ন্যূনতম ৩২ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়।
এক তদন্তে উঠে আসে, পুলিশের ব্যর্থতাই রানিম ও তার মায়ের মৃত্যুর জন্য আংশিকভাবে দায়ী। এই ব্যর্থতার কারণে পাঁচজন পুলিশ কর্মকর্তাকে শাস্তির সম্মুখীন করা হয়।
রানিমের খালা ও খাওলা সালিমের বোন নুর নরিস, যিনি দীর্ঘদিন ধরে ডমোস্টিক ভায়োলেন্সের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়ে আসছেন, তিনি এই নতুন ঘোষণাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন।
তিনি বলেন, ” রানিম সাহায্যের জন্য ডাক দিয়েছিল, এবং আজ, অবশেষে, এই সিস্টেম তার ডাকে সাড়া দিলো। এই মুহূর্তটি কতটা আবেগপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ, তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়।”
সূত্রঃ স্কাই নিউজ
এম.কে
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫