যুক্তরাজ্যের লেস্টার ক্রাউন কোর্টে ভীম কোহলি নামের ৮০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধের হত্যার ঘটনায় দুই কিশোরকে হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। ঘটনাটি গত সেপ্টেম্বরে যুক্তরাজ্যের লেস্টারের কাছাকাছি একটি পার্কে ঘটে।
১৫ বছর বয়সী এক কিশোর, পার্কে কুকুরকে হাঁটাতে বের হওয়া কোহলিকে লাথি মেরে, ঘুষি মেরে ও বর্ণবাদী গালাগালি করে আক্রমণ করে বলে জানা যায়।
আদালতে জানানো হয়, কোহলি হাঁটু গেড়ে বসে থাকার সময় ওই কিশোর তার এক পায়ের স্যান্ডেল খুলে নিয়ে কোহলির মুখে চড় মারে।
ঘটনাটি ভিডিও করে এক ১৩ বছর বয়সী মেয়ে। ভিডিওতে তাকে হাসতে শোনা যায় এবং এই মেয়েকে ওই হামলার উসকানিদাতা বলে চিহ্নিত করা হয়। জুরিরা মেয়েকেও নরহত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করেন।
ছয় ঘণ্টা ৪৬ মিনিট আলোচনার পর জুরি সর্বসম্মতিক্রমে উভয়কে দোষী সাব্যস্ত করে রায় দেন।
কিশোর-কিশোরী দুজনই প্রথমবারের মতো আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়ায় এবং আদালতের রায় শুনে।
আদালতকে জানানো হয়, কোহলি প্রতিদিনের মতো কুকুরকে হাঁটাতে বের হয়েছিলেন, তখনই হামলার শিকার হন। এই হামলায় তার ঘাড় ভেঙে যায় এবং তিনটি পাঁজর ভেঙে যায়। পরদিন হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
কোহলি একজন প্যারামেডিককে জানান, কিশোর তাকে বর্ণবাদী গালাগালি করেছে এবং তাকে ধাক্কা দিয়ে, ঘুষি ও লাথি মেরে আক্রমণ করেছে।
জুরিদের সেই ভিডিও দেখানো হয় যেখানে কোহলি হাঁটু গেড়ে বসে আছেন এবং কিশোর তার মুখে স্যান্ডেল দিয়ে মারছে।
সরকারি কৌঁসুলি হারপ্রীত সন্দু কেসি বলেন: “আপনারা সেই চড়ের শব্দ শুনেছেন, স্লাইডার কোহলির মুখে আঘাত করছে। হাঁটু গেড়ে বসে থাকা ৮০ বছর বয়সী একজন মানুষ হতে কিশোরের কোনো ভয় পাওয়ার কারণ ছিল না। এটি ছিল নিছক সহিংসতা – ছেলেটি যা করেছে এবং মেয়েটি তা করতে উৎসাহ প্রদান করেছে।”
তিনি আরও বলেন, “মেয়েটি হাসছিল – এটি ছিল একটি অমানবিক আচরণ। সে দেখছিল এবং মজা নিচ্ছিল এই নৃশংস আক্রমণের।”
সন্দু বলেন, মেয়েটি আগেই জানত সহিংস কিছু ঘটবে এবং সে ইচ্ছাকৃতভাবে সেটির ভিডিও করে, যা হামলার জন্য আরও উৎসাহ প্রদান করে।
আদালতকে জানানো হয়, অভিযুক্তরা পাঁচজন গ্যাং নিয়ে তৈরি একটি দলের অংশ ছিল যারা সেই সন্ধ্যায় পার্কে অবস্থান করছিল। কোহলিকে দেখিয়ে মেয়েটি বলেছিল, ওই বৃদ্ধ তার এক বন্ধুকে লাঠি দিয়ে আঘাত করতে চেয়েছিল।
তবে একমাত্র এই দুই অভিযুক্তই কোহলির দিকে এগিয়ে যায় এবং অন্যরা পালিয়ে যায়। গ্যাং সদস্যের একজন পরে পুলিশকে জানায়, তারা ভেবেছিল ছেলেটি হয়তো বৃদ্ধকে মারবে বা খারাপ কিছু করবে।
জুরি ছেলেটির একটি চিঠি পড়ে শোনান, যা সে কারা হেফাজতে থাকাকালীন লিখেছিল। সেখানে সে লেখে, “আমি এটা নিয়ে ভীষণ অনুতপ্ত। সেই দিনের কথা মনে পড়লেই কষ্ট পাই। আমি শুধু মুক্তি চাই।”
সে আরও লেখে, “আমার মনে হয় আমি আমার মাকে খুব হতাশ করেছি। আমি নার্ভাস, খুব ভয় পেয়েছি এবং চিন্তিত। আমি স্বীকার করি আমি অপরাধ করেছি এবং এখন শাস্তি পাচ্ছি। আমি শুধু জানি না কতদিন এটা সহ্য করতে হবে।”
কৌঁসুলি বলেন, এই চিঠির কোথাও ছেলেটি দাবি করেনি যে সে আত্মরক্ষায় বা অন্য কাউকে রক্ষার জন্য এই কাজ করেছে।
তথ্যমতে জানা যায়, ছেলেটি হত্যা ও নরহত্যা উভয় অভিযোগ অস্বীকার করে। একটি পূর্বপ্রস্তুত বিবৃতিতে সে জানায়, তার মনে হয়েছিল বৃদ্ধ কোহলি মেয়েটিকে মারতে যাচ্ছিল, তাই সে দৌড়ে গিয়ে কোহলির উপর পড়ে যায়।
কোহলির পরিবার বলেন, তারা এই মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন। তারা কোহলিকে “ভালোবাসাপূর্ণ, যত্নশীল একজন ব্যক্তি” হিসেবে বর্ণনা করেন। যার জীবন ছিল তার পরিবারের চারপাশেই।
লেস্টারশায়ার পুলিশের মাধ্যমে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে কোহলির কন্যা সুসান কোহলি বলেন, “ছেলেটি আমার বাবার উপর এমনভাবে সহিংস ছিল যে বাবার তিনটি পাঁজর ও ঘাড় ভেঙে যায়, এছাড়া তার মেরুদণ্ডেও আঘাত করা হয়।
এই ঘটনার ভিডিও মেয়েটির ফোনে পাওয়া যায় – যা ছিল অত্যন্ত ভয়ংকর। বাবা এই ব্যবহার পাওয়ার যোগ্য ছিলেন না। মেয়েটির হাসি শুনে কষ্টে হৃদয় ফেটে যায় – এই শব্দ বারবার আমাদের কানে বাজে।”
তিনি আরও বলেন, “এই নিষ্ঠুর, সহিংস ও চরম দুঃখজনক পরিস্থিতিতে বাবাকে হারানো যেন আমাদের হৃদয় ছিঁড়ে নিয়ে গেছে। প্রতিদিন আমরা যে যন্ত্রণা অনুভব করি তা ভাষায় প্রকাশযোগ্য নয় – এবং বিচার চলাকালীন সময়ে তা আরও বেড়ে গেছে।”
বিচারক ছেলেটিকে হেফাজতে পাঠিয়েছেন এবং মেয়েটিকে জামিন দিয়েছেন। দণ্ডাদেশ ঘোষণার তারিখ ২০ মে নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানা যায়।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
০৮ এপ্রিল ২০২৫