12.9 C
London
October 27, 2025
TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

যুক্তরাজ্যে ‘ব্যর্থ ও বিশৃঙ্খল আশ্রয় ব্যবস্থা’: হোম অফিসের অপচয় বিলিয়ন পাউন্ড

ব্রিটিশ হোম অফিসের আশ্রয় ব্যবস্থা দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনা, দুর্বল নেতৃত্ব ও তদারকির অভাবে ভয়াবহভাবে ব্যর্থ হয়েছে বলে এক সংসদীয় প্রতিবেদনে প্রকাশ পেয়েছে। “ব্যর্থ, বিশৃঙ্খল ও ব্যয়বহুল” এই আশ্রয় ব্যবস্থায় করদাতাদের বিলিয়ন পাউন্ড অপচয় হয়েছে—যা নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছে যুক্তরাজ্যের হাউজ অফ কমন্সের ক্রস-পার্টি হোম অ্যাফেয়ার্স কমিটি।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, হোম অফিস আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য হোটেল, সাবেক সামরিক ঘাঁটি ও যৌথ বাসস্থানের ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে করতে ব্যর্থ হয়েছে। শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃত্বের দুর্বলতা ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অভাবে পুরো ব্যবস্থাই বিশৃঙ্খলায় নিমজ্জিত হয়েছে।

কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৯ সালে বেসরকারি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ক্লিয়ারস্প্রিংস, মিয়ার্স ও সেরকো’র সঙ্গে ১০ বছরের চুক্তির মূল্য ৪.৫ বিলিয়ন পাউন্ড থেকে বেড়ে ১৫.৩ বিলিয়ন পাউন্ডে পৌঁছেছে। এত বিশাল ব্যয়ের পরও পর্যাপ্ত তদারকি হয়নি, দুর্বল পারফরম্যান্সের জন্য কোনও শাস্তি দেওয়া হয়নি এবং অতিরিক্ত মুনাফাও ফেরত নেওয়া হয়নি।

হোম অফিসের নিজস্ব অডিট অসম্পূর্ণ থাকায় ১৩.৮ মিলিয়ন পাউন্ড ফেরত দেওয়ার কথা থাকলেও মিয়ার্স এখনো তা দেয়নি, আর ক্লিয়ারস্প্রিংসের ফেরত দেওয়ার কথা ৩২ মিলিয়ন পাউন্ড। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হোটেল ব্যবস্থার উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা আশ্রয় ব্যবসায়ীদের জন্য লাভজনক হওয়ায় তারা বিকল্প আবাসনের দিকে আগ্রহী নয়।

আর্থিক অপচয়ের একাধিক দৃষ্টান্ত তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইস্ট সাসেক্সের বেক্সহিলে ১৫.৪ মিলিয়ন পাউন্ডে কেনা ‘নরথআই’ সম্পত্তি এক বছর আগেই ৬.৩ মিলিয়ন পাউন্ডে বিক্রি হয়েছিল, কিন্তু দূষিত হওয়ায় সেটি কখনো ব্যবহার করা হয়নি। তদ্রূপ, লিংকনশায়ারের আরএএফ স্ক্যাম্পটন প্রকল্পে ৪৮.৫ মিলিয়ন পাউন্ড ব্যয় করে তা শেষমেশ বাতিল করা হয়—একজন আশ্রয়প্রার্থীও সেখানে ওঠেননি।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, রুয়ান্ডা প্রকল্পেও নষ্ট হয়েছে শত শত মিলিয়ন পাউন্ড—যার মধ্যে ২৯০ মিলিয়ন সরাসরি দেওয়া হয়েছে রুয়ান্ডা সরকারকে, অথচ মাত্র চারজন আশ্রয়প্রার্থী স্বেচ্ছায় সেখানে গেছেন।

শিশু সুরক্ষায় ভয়াবহ অবহেলার কথাও উঠে এসেছে প্রতিবেদনে। হোম অফিস অনেক ক্ষেত্রে শিশুদের ভুলভাবে প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে চিহ্নিত করে প্রাপ্তবয়স্ক আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠিয়েছে, যা ঝুঁকিপূর্ণ ও মানবাধিকারবিরোধী।

এই ব্যর্থতার দায় স্বীকার না করে হোম অফিস জানিয়েছে, তারা “অবৈধ অভিবাসী ও হোটেল আশ্রয়” কমানোর লক্ষ্যে পদক্ষেপ নিয়েছে। তাদের দাবি, ইতোমধ্যে কিছু হোটেল বন্ধ করা হয়েছে, ব্যয় কমানো হয়েছে প্রায় ১ বিলিয়ন পাউন্ড, এবং পরিত্যক্ত সামরিক ঘাঁটি ব্যবহারের পরিকল্পনা চলছে।

তবে হোম অ্যাফেয়ার্স কমিটির চেয়ার ডেম ক্যারেন ব্র্যাডলি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “হোম অফিসের বিশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা করদাতাদের বিলিয়ন পাউন্ড খরচ করিয়েছে। সরকারকে এখনই জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে, ব্যয় কমাতে হবে এবং ব্যর্থ সরবরাহকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।”

ব্রিটিশ রেড ক্রস জানায়, এই প্রতিবেদন তাদের দীর্ঘদিনের পর্যবেক্ষণকে নিশ্চিত করেছে—আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা মানুষ প্রায়ই অনিরাপদ বোধ করেন এবং তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণ হয় না। সংস্থাটি দাবি করে, নতুন আশ্রয় কৌশল এমন হতে হবে যাতে আশ্রয়প্রার্থীরা নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে থাকতে পারেন।

রিফিউজি কাউন্সিলের প্রধান নির্বাহী এনভার সলোমন বলেন, “হোটেল কখনোই দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হতে পারে না। দ্রুত সিদ্ধান্ত প্রক্রিয়া চালু করলে সরকার ২০২৬ সালের মধ্যেই ব্যয়বহুল হোটেল ব্যবস্থার ইতি টানতে পারবে এবং একটি ন্যায্য, কার্যকর আশ্রয়ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সক্ষম হবে।”

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে

আরো পড়ুন

সন্দেহভাজনের জাতিগত পরিচয় ও অভিবাসন অবস্থা প্রকাশে যুক্তরাজ্যে পুলিশের নতুন নির্দেশনা

যুক্তরাজ্যের অভিবাসন দেশের জনসংখ্যা ৭২.৫ মিলিয়নে নিয়ে যেতে পারেঃ ওএনএস

আকাশ ছুঁয়েছে যুক্তরাজ্যের জনপ্রিয় ফাস্টফুডের দাম