TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

যুক্তরাজ্যে ভুয়া নাম্বার প্লেটের ছড়াছড়ি, নজরদারিতে ব্যর্থ DVLA

ভুয়া ও তথাকথিত ‘ঘোস্ট’ নাম্বার প্লেটের বিস্তার ঠেকাতে যুক্তরাজ্যের ড্রাইভার অ্যান্ড ভেহিকল লাইসেন্সিং এজেন্সি (DVLA) চরম জনবল সংকটে ভুগছে বলে দাবি করেছে পরিবহন নিরাপত্তা বিষয়ক সর্বদলীয় সংসদীয় গ্রুপ (APPG-TS)। সংসদ সদস্যদের মতে, দেশজুড়ে আইন প্রয়োগের জন্য DVLA–এর হাতে রয়েছে মাত্র কয়েকজন কর্মকর্তা, যা এই ক্রমবর্ধমান সংকট মোকাবিলায় সম্পূর্ণ অপ্রতুল।

 

বর্তমানে যুক্তরাজ্যে প্রায় ৩৪ হাজার নিবন্ধিত নাম্বার প্লেট সরবরাহকারী রয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, এদের বড় একটি অংশ নতুন প্লেট বিক্রির সময় আইনি নিয়ম মানছে না। ফলে এমন প্লেট বাজারে ছড়াচ্ছে, যেগুলো স্বয়ংক্রিয় নাম্বার প্লেট শনাক্তকরণ (ANPR) ক্যামেরাকে ফাঁকি দিতে সক্ষম। এসব প্লেটকে সাধারণভাবে ‘ঘোস্ট প্লেট’ বলা হচ্ছে।

DVLA–এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালে ২,৩০০–এর বেশি নাম্বার প্লেট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করা হয়। এর মধ্যে এক হাজারের বেশি প্রতিষ্ঠানকে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে নিয়ম ভেঙে ভুয়া বা সন্দেহজনক প্লেট সরবরাহের অভিযোগে। একই বছরে ১৪টি প্রতিষ্ঠানকে আদালতে তোলা হয়েছে, যারা বিক্রির রেকর্ড সংরক্ষণ করেনি বা ক্রেতার পরিচয় যাচাই করেনি।

APPG-TS–এর এক সদস্য এই পরিস্থিতিকে আখ্যা দিয়েছেন “নাম্বার প্লেটের ওয়াইল্ড ওয়েস্ট” হিসেবে। তার মতে, নিয়ম-কানুন থাকলেও বাস্তবে তার প্রয়োগ খুবই দুর্বল, ফলে অসাধু ব্যবসায়ীরা সহজেই ফাঁকফোকর কাজে লাগাচ্ছে।

ওয়েস্ট ব্রোমউইচের লেবার দলীয় এমপি সারা কুম্বস বলেন, অবৈধ সামনের ও পেছনের নাম্বার প্লেট ঠেকাতে DVLA–এর বর্তমান কার্যক্রম প্রয়োজনের তুলনায় “খুবই সামান্য”। তিনি DVLA–কে আরও শক্ত অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে সরবরাহকারীদের ব্যাকগ্রাউন্ড চেক, কঠোর তদারকি এবং নিবন্ধন ফি বাড়ানোর দাবি তোলেন।

আইন অনুযায়ী, নাম্বার প্লেট সরবরাহকারীদের প্রতিটি প্লেট কার কাছে বিক্রি করা হচ্ছে তার বিস্তারিত রেকর্ড রাখতে হয় এবং ক্রেতার ড্রাইভিং লাইসেন্স বা V5C গাড়ি নিবন্ধন সনদের মতো বৈধ পরিচয়পত্র যাচাই করা বাধ্যতামূলক। নিয়ম ভঙ্গ করলে চালকদের সর্বোচ্চ এক হাজার পাউন্ড পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।

ঘোস্ট প্লেটগুলো সাধারণ চোখে স্বাভাবিক মনে হলেও, বিশেষ প্লাস্টিক ফিল্ম বা উঁচু অক্ষরের কারণে এসব প্লেট পুলিশি ক্যামেরায় সঠিকভাবে ধরা পড়ে না। অনেক ক্ষেত্রে ক্যামেরায় শুধু সাদা বা হলুদ ফাঁকা অংশ দেখা যায়, কিংবা নম্বরের কিছু অংশ অদৃশ্য থাকে। এর ফলে অপরাধীরা সহজেই নজরদারি এড়িয়ে যেতে পারে।

APPG-TS জানায়, অনলাইনে দশ পাউন্ডেরও কম দামে কোনো প্রশ্ন ছাড়াই এসব প্লেট কেনা যাচ্ছে, যা ANPR ব্যবস্থার গুরুতর দুর্বলতা প্রকাশ করছে।
DVLA জানিয়েছে, তারা ট্রেডিং স্ট্যান্ডার্ডস ও পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে অবৈধ সরবরাহকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। সংস্থাটি দাবি করেছে, ২০২৫ সালে ১৪টি প্রতিষ্ঠানের সফল বিচারে তারা সরাসরি সহায়তা করেছে।

পরিবহন মন্ত্রণালয় বলেছে, অপরাধীদের শনাক্তকরণ এড়াতে সহায়তা করে—এমন কোনো নাম্বার প্লেট তারা সহ্য করবে না। অবৈধ প্লেট বিক্রি ও ব্যবহার আইনত দণ্ডনীয় এবং বর্তমানে নাম্বার প্লেটের মানদণ্ড পর্যালোচনা করা হচ্ছে, যাতে ভবিষ্যতে ANPR ক্যামেরা ফাঁকি দেওয়ার উদ্দেশ্যে তৈরি প্লেট সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা যায়।

সূত্রঃ দ্য টেলিগ্রাফ

এম.কে

আরো পড়ুন

লন্ডনে মুসলিম চ্যারিটি দৌড়ে নারীদের নিষিদ্ধকরণে ক্ষোভঃ সরকারের নজরদারি শুরু

পশ্চিম লন্ডনের পাঁচ তারকা হোটেলের সামনে ছুরিকাঘাতে যুবক নিহত

ফোর্বসের তালিকায় এশিয়ায় শীর্ষ ১০০ স্টার্টআপে বাংলাদেশের পাঠাও ও সম্ভব