লেবার সরকারের নতুন ‘ওয়ান-ইন, ওয়ান-আউট’ চুক্তির আওতায় ফ্রান্সে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শেষ মুহূর্তে থেমে গেছে। ২৫ বছর বয়সী এক ইরিত্রীয় নাগরিক মানবপাচারের শিকার হওয়ার দাবি জানিয়ে হাই কোর্টে চ্যালেঞ্জ করলে বিচারক তার নির্বাসন স্থগিত করেন। বুধবার সকাল ৯টায় তার ফ্লাইট নির্ধারিত থাকলেও আদালতের নির্দেশে তা বাতিল হয়।
বিচারপতি শেলডন রায়ে বলেন, মানবপাচারের দাবি নিয়ে তদন্তের যথেষ্ট প্রয়োজন রয়েছে এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আইনসম্মতভাবে তদন্তের দায়িত্ব পালন করেছেন কি না, তা নিয়েও গুরুতর প্রশ্ন রয়েছে। তিনি জানান, পাচারের শিকার হওয়ার যুক্তিসঙ্গত সন্দেহ থাকলে নির্বাসন আইনগতভাবে স্থগিত রাখা বাধ্যতামূলক।
সরকারি পক্ষ যুক্তি দিয়েছিল, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ফ্রান্স থেকেও প্রমাণ সংগ্রহ করতে পারবেন। তবে আদালত জানান, বিষয়টি যথাযথভাবে খতিয়ে দেখা জরুরি। জাতীয় রেফারেল মেকানিজম থেকে প্রাপ্ত তথ্যেও ওই ব্যক্তির মানবপাচারের অভিযোগ যাচাইয়ের জন্য আরও উপস্থাপনার আহ্বান জানানো হয়েছে।
এদিকে ডাউনিং স্ট্রিট অস্বীকার করেছে যে ফ্রান্সের সঙ্গে প্রত্যাবাসন চুক্তি ভেঙে পড়েছে। সোমবার ও মঙ্গলবার ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনা বাতিল হওয়ায় প্রশ্ন উঠলেও প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মুখপাত্র দাবি করেন, চুক্তি এখনও কার্যকর আছে এবং এ সপ্তাহেই প্রথম ফ্লাইট ছাড়বে।
মানবাধিকার সংস্থা মেডিক্যাল জাস্টিস আদালতের রায়কে স্বাগত জানিয়ে বলেছে, ‘ওয়ান-ইন, ওয়ান-আউট’ প্রকল্পের আওতায় আটক অধিকাংশ মানুষ নির্যাতন ও পাচারের শিকার। সংস্থার পরিচালক এমা গিন বলেন, “ইরিত্রিয়া থেকে আসা শরণার্থীদের মধ্যে দাসত্ব ও যৌন নির্যাতনের অভিজ্ঞতা সাধারণ ঘটনা।”
চুক্তি অনুযায়ী, যুক্তরাজ্য ছোট নৌকায় আসা আশ্রয়প্রার্থীদের ফ্রান্সে ফেরত পাঠাবে, আর ফ্রান্স অনুমোদিত আবেদনকারীদের ব্রিটেনে পাঠাবে। গত মাসে প্রথম দফায় আটক শুরু হলেও নতুন এই রায়ে পুরো নীতিই প্রশ্নের মুখে পড়েছে।
আদালতে মানবাধিকার আইনজীবী সোনালি নাইক কেসি জানান, নির্বাসিত হলে ওই যুবক ফ্রান্সে দারিদ্র্যের শিকার হবেন। বর্তমানে ফ্রান্সে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ আশ্রয়প্রার্থীকে আবাসন দেওয়া হয় না এবং দৈনিক মাত্র ৭.৫০ ইউরো ভাতা দেওয়া হয়। তবে বিচারক মনে করেন, তা “বাস্তব দারিদ্র্যের ঝুঁকি” তৈরি করবে না।
হোম অফিসের পক্ষ থেকে কেট গ্রেঞ্জ কেসি বলেন, চুক্তি কার্যকর রাখা জরুরি, কারণ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে ছোট নৌকায় আসার সময় অনেকের প্রাণহানি ঘটছে, যার মধ্যে শিশুদের মৃত্যুও রয়েছে।
অন্যদিকে টোরি দল মন্তব্য করেছে, লেবার সরকারের ফ্রান্সে প্রত্যাবাসন নীতি “আরেকটি ব্যর্থ চালবাজি”, কারণ আইনি চ্যালেঞ্জে প্রথম নির্বাসনই স্থগিত হয়ে গেছে।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫